কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

 

রাগ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রাগ মানবিক আবেগের অংশ বিশেষ। তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ মারাত্মক ক্ষতিকারক। জ্ঞানীরা বলেন, রাগ হলো বারুদের গোলার মতো। আগুনের স্ফুলিঙ্গের ছোয়ায় যেমন সব কিছু ধ্বংস করে দেয় ঠিক তেমনি রাগ মানুষকে অনুরূপভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে। এই কারণেই রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বিকল্প নেই। অনেকে আছেন কথায় কথায় রেগে যান। ছোটখাটো বিষয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন না। এই রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক মনে হলেও এটি অনেক ক্ষেত্রে অস্বাবিক হয়ে উঠে। তাই কথায় কথায় রেগে যাওয়াটা ভালো লক্ষণ নয়। এটি এক সময় আপনার জীবনে বড় ধরণের সমস্যা ডেকে আনতে পারে। সুতরাং অতিরিক্ত মাত্রায় রাগের আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করুন। রাগ কেবল স্বাস্থ্যের জন্য নয় বরং নিজের ইমেজকে পরিচ্ছন্ন রাখতেও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

রাগ অন্যান্য বাকি ইমোশনগুলোর মতো স্বাভাবিক একটি ইমোশন। এটি একটি লিমিট পর্যন্তই আমাদের জন্য উপকারী হয়। রাগের লিমিট পেরোলেই এর থেকে খারাপ ইমোশন আর একটিও নেই। কারণ অতিরিক্ত মাত্রায় রাগ আমাদের ব্লাড প্রেশার বাড়াতে পারে, সুন্দর সম্পর্কগুলো নষ্ট করতে পারে এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। 

যাইহোক, যখন রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন এটি আমাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা কীভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিজেকে শান্ত রাখতে পারি তার কিছু টিপস দেখবো-

১। নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মনকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। মন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি নির্জন ঘরে চলে যান, চোখ বন্ধ রাখুন এবং নিজেকে কল্পনা করুন। আপনি মনে মনে ভাবতে পারেন বিশাল সমুদ্রের পাড়ে আপনি বসে আছেন কিংবা খোলা আকাশের নিচে ঘাসের উপরে শুয়ে বই পড়ছেন। এই কল্পনার প্রতিটি বিষয়ের খুঁটিনাটি ভালোভাবে উপলব্ধি করুন। এতে করে আপনি কল্পনার জগতে চলে যাবেন। এটি আপনার রাগকে ভুলতে সাহায্য করবে। 

২। সমাধান খোঁজার চেষ্টা করুন

আপনি কি কারণে রেগে যাচ্ছেন সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে তা নিয়ে মনোযোগী হোন। অনেকেই বলেন রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। কিন্তু ব্যাপারটা তো শুধু কেবল হার বা জিতের নয়। রাগের মাথায় আমরা অনেক কিছু বলি এবং অনেক কিছুই করে ফেলি বলে মুশকিলটা এখানেই। পৃথিবীতে কারণ ছাড়া কোনো কিছু ঘটে না। সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকবে। ঠিক তেমনি আপনার রাগ হওয়ার কারণ থাকলে তার অবশ্যই সমাধানও আছে। তাই সমাধান খুঁজে বের করুন এবং অতিরিক্ত রাগ পরিহার করার চেষ্টা করুন। 

৩। মেডিটেশন

একাগ্রচিত্রে মনের কোন কিছু চিন্তার নামই হচ্ছে মেডিটেশন। মেডিটেশন কেবল শুধু মনকেই কেন্দ্রীভূত করে জাগিযে তোলে না, এটি শরীরে বিভিন্ন ধরণের উপকার করে থাকে। সত্যি কথা বলতে মানুষের সকল শক্তির উৎস হচ্ছে মন। আমাদের মন যখন শান্ত থাকে আমরা তখন আমাদের মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি। আর মনকে স্থির করে সফলতম কাজের পদ্ধতি হলো মেডিটেশন। তাই মেডিটেশন নিয়মিত করার চেষ্টা করুন। মেডিটেশন করার অভ্যস্ত হলে আপনি কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়েই যেকোনো সময় নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আর একজন রাগী মানুষের জন্য মেডিটেশন খুবই কার্যকরী পদক্ষেপ। একজন রাগী মানুষকে সবাই ছোঁয়াচে রোগীর মতো ভয় পায়। রাগী মানুষ আর একজন বোকা মানুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তাই নিয়মিত মেডিটেশন করুন। কিছুদিন পর খেয়াল করে দেখবেন আপনার রাগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। 

৪। পর্যাপ্ত ঘুমান

যদি রাতে ঘুম ভালো না হয় তবে সকাল থেকেই আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। তাই অযথাই সাধারণ কোনো বিষয় বা ঘটনায় রাগ উঠে যায়। সুতরাং রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে রাতে ভালো করে ঘুমাতে হবে। এতে করে আমাদের মন ফ্রেস এবং পরিষ্কার থাকবে। সকালটা ভালো হলে আমাদের দিনটি অবশ্যই ভালো যাবে। যাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না তাদেরকে ডাক্তাররাও পর্যাপ্ত ঘুমের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের জন্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে সর্বনিম্ন ৬ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। ৭-৮ ঘন্টা ঘুমালে আরও বেশি ভালো হয়। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ঘুমের বিকল্প নেই। 

৫। ক্ষমা করতে শিখুন

ক্ষমা করতে শিখুন। মনের মধ্যে রাগ পুষে রেখে সবসময় খারাপ কথাই ভাবলে শেষে ক্ষতি আপনারই। মানুষ ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। কোনো মানুষই শতভাগ সঠিক নয়। তাই কারো ভুলের জন্য রেগে যাওয়াটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। রেগে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা ভুল কি সঠিক বুঝতে পারবেন না। নিজের ব্যবহার নিয়ে নিজে খুঁটিয়ে ভাবুন। সবাই সব সময় আপনার মতই ভাববে এটা আশা করাও বোধহয় ঠিক নয়। তাই রাগ না করে ক্ষমা করতে শিখুন। এতে করে পরবর্তীতে আপনার নিজেরই ভালো লাগবে। 

৬। কথা বলার আগে চিন্তা করুন

রাগের মাথায় কোনো কিছু কথা বলা অথবা করার আগে ভাবুন। কারণ একবার কোনো কিছু বলে ফেললে সেটি আর পরিবর্তন করা যায় না। রাগের সময় কথা বললে সেটা অবশ্যই সামনের মানুষটিকে দু:খ জড়িয়ে কথা বলা হবে। মানুষটির দোষ না থাকলেও কথা বললে অনেক সময় অপ্রীতিকর কথা বলা হয়ে যায়। আর এটা আমাদের মানসিক ব্যাপার। তাই রাগ উঠলে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। যদি কথা বলতেই হয় তাহলে ভেবে চিন্তে কথা বলুন। কারণ অনেক সময় রাগের মাথায় যে সমস্ত কথা বলা হয় সেটার জন্য ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তীতে আপনার রাগ কমে গেলে নিজের কথার জন্য আপনাকে পস্তাতে হয়। এজন্য রাগকে এমন পর্যায়ে নিবেন না যাতে আপনার ক্ষতি হয়। আপনার ক্ষতি হওয়ার আগেই নিজের রাগকে শান্ত করে ফেলুন। তাই রেগে গিয়ে কিছু বলার আগে কয়েকবার ভাবুন। কথা বলে ফেলার পর আবার যেনো অনুতপ্ত করতে না হয়। 

FAQS-

# কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

=>রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘোরাঘুরি বেশ ভালো একটি মাধ্যম। রাগ হোক কিংবা মন খারাপ হোক না কেনো ঘুরতে যান আপনার পছন্দের প্রিয় কোনো জায়গা। হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে।

# রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় কি?

=>রাগের মাথায় হয় কথা বলা বন্ধ করুন অথবা কথা বলার আগে ভাবুন। সমস্যা দূর করার চেষ্টা করুন। রাগের মাথায় যেকোনো সমস্যার সমাধান করলে না। একটু শান্ত হয়ে বা ধীর স্থির হয়ে সমাধান করার চেষ্টা করুন। অথবা কেনো সেই সমস্যা তৈরি হলো তা ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবুন।

# রাগ করলে কি কি ক্ষতি হয়?

=>রাগের কারণে সম্পর্কের বিচ্ছেদ, বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি, এমনকি কারো মৃত্যুর খবর পর্যন্ত উঠে আসে। তবে রাগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু সেই ব্যক্তি নিজেই। দূরত্ব তৈরি হয় পারিবারিক সম্পর্কে এবং তার প্রতি সমাজের অন্যদের সম্মানবোধ কমে যায়।

শেষ কথা

রাগ মানুষের খুব স্বাভাবিক একটি আবেগ। হাসি-কান্না, সুখ-দু:খ এবং ঈর্ষার মতোই রাগ মানুষের একটি আবেগ। রাগ মানুষের হতেই পারে। কিন্তু সেটি নিয়ন্ত্রণ করাটা আপনার হাতে। কিছু কৌশল অবলম্বন করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আপনি বা আমি কেউই এই পৃথিবীতে বেশি দিন নেই। তাই ক্ষণিকের এই পৃথিবীতে রেগে গিয়ে সময় এবং সম্পর্ক নষ্ট করে কী লাভ? তাই দেরি না করে আজ থেকেই উপায়গুলোকে কাজে লাগন। কিছুদিন পর নিজেই বুঝতে পারবেন পরিবর্তনটা। 

আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় সুন্নাতের আমলের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দান করুন। রাগমুক্ত জীবন গঠনে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। (আমিন)

# আপনি কি নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন? নিজের উপর বিশ্বাস রাখো! # কিভাবে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠা যায়? ব্যর্থতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায়

Related posts

One Thought to “কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়”

  1. […] # আপনি কি নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন? নিজের উপর বিশ্বাস রাখো! # কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়? রাগ নিয়ন… […]

Leave a Comment