অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়? দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা
দুধ আমাদের সকলের পরিচিত। দুধ শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী খাবারগুলোর মধ্যে একটি। আপনারা হয়তো সবাই জানেন, দুধ একটি পুষ্টিকর খাবার। দুধের মধ্যে একটি অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ থাকে যা দেহের দৈহিক গঠন, মেধা বিকাশ এবং শক্তি বৃদ্ধিতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে। দুধের মধ্যে প্রচুর পুষ্টি-উপাদান থাকে। ক্যালসিয়াম ছাড়া দুধের মধ্যে ফসফরাস, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণও অনেক বেশি থাকে। দুধের উপকারিতা যেমন আছে তেমনি অপকারিতাও আছে। আমরা দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। কিন্তু সঠিক তথ্য আমরা পাই না। তাই আজকে আমরা দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
দুধের উপকারিতা
দুধ এমন একটি পুষ্টিকর খাবার যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। দুধে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ওমেগা-থ্রি, ওমেগা-সিক্স সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এজন্য দুধকে ’সুপার ফুড’ বলা হয়ে থাকে। এতে আছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১২ রয়েছে যা মস্তিষ্কের জন্য খুবই প্রয়োজন। কিন্তু অনেক মানুষ আছে যারা দুধ পছন্দ করে না। বিশেষ করে বাচ্চারা দুধ একদমই খেতে চায় না। দুধের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে তাদের জানানো এবং আমাদের উচিত তাদেরকে দুধ খাওয়ানো। নিচে দুধের উপকারিতা বর্ণনা করা হলো-
রোগ প্রতিরোধ
দুধে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন থাকে যা দেহ সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত দুধ পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, হাড় ও দাঁত মজবুত হয়, চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে, মানসিক চাপ ও ওজন কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দুধে কোলেস্টরল বৃদ্ধি করে যা রক্ত পরিষ্কার করে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন বেশি পরিমাণে দুধ খাওয়া।
ক্যালসিয়াম
ক্যালসিয়ামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে দুধ। যাতে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন-এ, ডি এবং ল্যাকটোজ যা ক্যালসিয়াম শুষে নিতে সাহায্য করে। এক কাপ গরুর দুধে আছে ২৭৬-৩৫২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
দাঁত মজবুত
দাঁত মজবুত করতে দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুধে থাকা ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে এদের গঠন দৃঢ় করে থাকে। প্রতিদিন দুধ পান করলে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, দাঁতে পোকা ও হলুদ ছোপ পড়া, হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যা থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। দুধে যে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন থাকে তা দাঁত মজবুত করতে ভূমিকা রাখে। তাই সকল বয়সের মানুষের নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়া উচিত।
মাংশপেশি গঠনে
দুধ হলো সর্বশক্তির খাদ্য। দুধে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন রয়েছে যা মাংশপেশি গঠনে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক লিটার করে দুধ খেলে মাংশপেশি গঠনে খুব অবদান রাখে। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংশপেশির গঠনে অনেক বেশি সহায়তা করে। দুধ মাংশপেশির আড়ষ্টতা দূর করতে সক্ষম। প্রতিদিন এক থেকে দুই গ্লাস দুধ খাওয়া অনেক উপকারী। শিশুদের মাংশপেশির গঠন উন্নত করতেও প্রতিদিন দুধ খাওয়া বা পান করা উচিত।
মানসিক চাপ
দুধে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল যা ফিটনেস বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। দুধ পানে ঘুমের উদ্রেক হয়। যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে ও মানসিক চাপমুক্ত হয়। সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করুন। দুধ খেলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা ও শিতল থাকে এবং মানসিক চাপ দূর হয়। যেহেতু দুধ খেলে মস্তিষ্ক শিতল থাকে তাই ঘুম হয় বেশি এবং মানসিক চিন্তা দূর হয়।
ত্বক সুন্দর করে
দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টি থাকে। যার ফলে ত্বক নরম, কোমল, মসৃন হতে সাহায্য করে। দুধ খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং তারুণ্যে ভরপুর থাকে। দুধে ভিটামিন বি-১২ থাকে যা ত্বকের ইল্যাস্টিসিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে ফলে অকালে চামড়া ঝুলে যায় না। ফলে ত্বক সুন্দর ও তরতাজা থাকে। তাই প্রতিদিন আধা লিটার দুধ খাওয়া উচিত।
চুলের পুষ্টি
চুলের পুষ্টি যোগাতে দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই চুলের পুষ্টি বাড়াতে হলে বেশি বেশি দুধ খেতে হবে। দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন যা চুলের পুষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন বেশি বেশি দুধ খেলে চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় এবং চুল বৃদ্ধি হয়।
দুধের অপকারিতা
প্রতিটি বিষয়ই যেমন একটি ভালো দিক আছে একটি খারাপ দিক আছে ঠিক তেমনি দুধ খাওয়ার যেমন উপকার আছে তেমনি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। দুধ সবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন কঠিন রোগের কারণ হতে হতে এই দুধ। নিচে দুধের অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১। আপনি যদি একসাথে আনারস এবং দুধ পান করেন সেই ক্ষেত্রে এসিডিটি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে দুধের সাথে এক ধরনের বিষ উৎপাদন হয় ফলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
২। যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনির পাথরের একটি উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। আর দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তাই এই ধরনের রোগীর উচিত দুধ কম খাওয়া এবং রাতে একেবারেই দুধ না খাওয়া।
৩। এলার্জি থাকলে দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। কারণ, এলার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে দুধ খেতে নিষেধ করে চিকিৎসকেরা। আবার অনেকের দুধ খেলে এলার্জি হয় বলে জানা যায়।
৪। খালি পেটে অতিরিক্ত পরিমাণ দুধ পান করলে এসিডিটি বেড়ে যায় এবং পাতলা পায়খানা বা বদহজমের সমস্যা হতে পারে।
FAQS-
# দুধ খাওয়ার কি উপকারিতা?
=>প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস করে দুধ খেলে শরীরের কোলেস্টেরল লেভেল অনেকটাই কমে এবং শরীর সুস্থ্য থাকে। গরুর দুধে ভিটামিন-এ, ডি এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ যা আমাদের হৃদযন্ত্রকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।
# দুধের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে কি হয়?
=>দুধের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে হজমে অসুবিধা হতে পারে। নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে দুধের সাথে চিনি মিশাবেন না।
# দুধ কেনো পান করবেন?
=>দুধে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্সসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এজন্য দুধকে ’সুপার ফুড’ বলা হয়ে থাকে। মায়ের বুকের দুধের পর নিয়মিত গরু-ছাগলের দুধ পান করা উচিত।
# দুধ কখন খাওয়া উচিত?
=>দুধ পানের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বিকেল। দুধ যেহেতু ভারী খাবার তাই এটি রাতে না খাওয়াই ভালো। রাতে দুধ খেলে হজমের জন্য সময় পায় না।
# খালি পেটে কি দুধ খাওয়া উচিত?
=>খালি পেটে দুধ খাওয়া উচিত নয়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা খালি পেটে দুধ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই আমাদেরকে কিছু খেয়ে তারপরে দুধ খাওয়া উচিত।
শেষ কথা
দুধের উপকারিতা যেমন আছে অপকারিতাও রয়েছে। তাই নিয়মিত দুধ সেবনের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। তবে সকল দিক বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে উপকারিতাই বেশি। তাই আমাদেরকে নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে, কখন কিভাবে খেতে হবে এবং দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়।
# লেবুর উপকারিতা কি? লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা # স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায়
[…] #অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়? দুধের উপকারিত… # স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায় […]