আত্মীয়তার সম্পর্ক। ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব

আত্মীয়তার সম্পর্ক। ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব

 

মানুষ একে অপরের সাথে বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িত। মানুষের মাঝের এই সম্পর্কের নাম হচ্ছে ‘আত্মীয়তা’। পরস্পরের সাথে জড়িত মানুষ হচ্ছে একে অপরের ‘আত্মীয়’। আত্মীয়তা এবং আত্মীয়দের সম্পর্ক মানব জীবনে একটি অমূল্য এবং মৌল্যবান বিষয়। এটি পারিবারিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, ও অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে সৃষ্টি হতে পারে। এটি একটি সুস্থ এবং সুখী জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।

আত্মীয়ের পরিচয়

‘আত্মীয়’ শব্দের অর্থ হচ্ছে স্বজন, জ্ঞাতি, কুটুম্ব। এর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে (আর-রাহিমু) বা (যুর রাহিমে)। আত্মীয়তা-এর ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে Relationship. এর সংজ্ঞায় Oxford অভিধানে বলা হয়েছে The way in which two people, groups or countries behave towards each othe or deal with each other. অর্থাৎ এমন পথ-পন্থা যাতে দু’ব্যক্তি, দল বা দেশ পরস্পরের সাথে সদাচরণ করে বা পরস্পরে আলোচনা করে’।কেউ কেউ বলেন- ‘আত্মীয় হচ্ছে তারা যাদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, তারা সম্পদের উত্তরাধিকারী হোক বা না হোক, মাহরাম হোক বা না হোক’।

আত্মীয়তার প্রকার

আত্মীয় প্রধানত দু’প্রকার। যথা- (১) রক্ত সম্পর্কীয় বা বংশীয়। যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, ভাইবোন, চাচা-চাচী, মামা-খালা ইত্যাদি। (২) বিবাহ সম্পর্কীয়। যেমন শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা ইত্যাদি। যেমন, রাসূল (ছাঃ) বলেন – ‘নিশ্চয়ই তোমরা অচিরেই মিসর জয় করবে। সেটা এমন একটি ভূমি যাকে ‘কবীরাত্ব’ বলা হয়। অর্থাৎ যেখানে দীনার-দিরহামের প্রাচুর্য রয়েছে। যখন তোমরা সেটা জয় করবে, তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। কেননা তাদের জ্ঞাতি সম্পর্ক রয়েছে। অথবা তিনি বলেছেন, বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে’। অর্থাৎ ইসমাঈল (আঃ)-এর মাতা হাজেরার দিক দিয়ে বংশীয় বা রক্ত সম্পর্ক এবং রাসূলপত্নী মারিয়া কিবতিয়ার দিক দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক।

পরিত্যক্ত সম্পদের অধিকারী হওয়ার দিক দিয়ে আত্মীয় দু’প্রকার। (১) উত্তরাধিকারী; যেমন- পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা প্রভৃতি (২) উত্তরাধিকারী নয়; যেমন- চাচা-চাচী, মামা-খালা ইত্যাদি।

আত্মীয়দের সম্পর্ক বিভিন্ন রকমের হতে পারে-

পরিবারিক সম্পর্ক

পরিবার হলো একটি অমূল্য সম্পত্তি এবং তার সদস্যদের মধ্যে পরিবর্তনশীল একটি সম্পর্ক। পরিবারের সদস্যরা সাধারিত ভাবে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সমর্থন, এবং আপাতকালীন প্রয়াসের মাধ্যমে এক অপরকে সাহায্য করতে সাহায্য করে। এই সম্পর্কটি একজনের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌল্যবান অংশ হতে পারে।

পরিবারিক সম্পর্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক-

ভালোবাসা এবং সমর্থন: পরিবার সদস্যরা একে অপরকে ভালোবাসে এবং সমর্থন করে। এটি একজনের সাথে একজনের মধ্যে একটি নিপুণ সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে।

সাঝাসজ্জা এবং একত্রিতি: পরিবারের সদস্যরা সাঝাসজ্জা এবং একত্রিতির মাধ্যমে ভাল সম্পর্ক তৈরি করে। সময় কাটানো, বিশেষ দিন উদযাপন করা এবং আলাপের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

পরিবারিক দায়িত্ব: পরিবারের সদস্যরা একে অপরের জন্য দায়িত্ব বোধ করে এবং পূর্বকালের প্রথা, শোক এবং আনন্দে একত্রিতি হতে সাহায্য করতে চেষ্টা করে।

সময় অনুদান: সদস্যরা একে অপরের জন্য সময় অনুদান করে এবং এই সময়টি ভাল কাটাতে পারে, আলোচনা করতে পারে, এবং আপাত সময়ে এক অপরকে সাহায্য করতে পারে।

অসম্ভূত সমর্থন: কোনও সময় পরিবার সদস্য অসম্ভূত কাজ করতে অথবা অসম্ভূত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। এতে অন্যদের সমর্থন ও আত্ম-উন্নতি হতে পারে।

পরিবারিক সম্পর্ক একজনের জীবনে স্থিতি এবং সুখের সৃষ্টি করতে সাহায্য করতে পারে এবং যেসব চুক্তি বন্ধন গড়ে তোলে তা একজনের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌল্যবান অংশ হতে পারে।

বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের সম্পর্ক

বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিত সম্পর্ক মানব জীবনে মৌল্যবান একটি অংশ এবং সুখের সৃষ্টি করতে সাহায্য করতে পারে। এই সম্পর্কগুলি ব্যক্তির জীবনে আত্মীয় এবং উদার অভিজ্ঞতা তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে এবং একে অপরকে সাপোর্ট করতে পারে।

এই সম্পর্কগুলি মানব জীবনে আনন্দ এবং সমৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। পরিচিত এবং বন্ধুবান্ধবের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা একজনের মানসিক এবং মানবিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, এবং এই সম্পর্কগুলি জীবনে আনন্দ এবং পরিস্থিতির মৌল্য বৃদ্ধি করতে পারে।

ভালোবাসার সম্পর্ক

ভালোবাসার সম্পর্ক মানব জীবনে একটি অমূল্য এবং মৌল্যবান অংশ। এটি একে অপরকে ভালোবাসা, সমর্থন এবং উদার মনোভাবে সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি জীবনে সুখ এবং সান্ত্বনা যোগাযোগ করতে এবং জীবনের বিভিন্ন পর্বে অসীম গুরুত্ব রাখতে সাহায্য করতে পারে।ভালোবাসার সম্পর্ক জীবনের একটি মৌল্যবান দিক, একজন মানবের জীবনকে প্রফুল্লিত করতে সাহায্য করে। এটি আপনার সুখ এবং মানসিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনাকে আপনার জীবনে একটি আনন্দমূলক অভিজ্ঞতা দেতে সাহায্য করতে পারে।

আত্মীয়দের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে-

সম্মান এবং বিশ্বাস: এটি সম্পর্কের মৌল্য ও সকল সদস্যের মধ্যে একটি ভাল বিশ্বাস প্রতিরোধশীল করতে সাহায্য করে।

সাপোর্ট এবং সহানুভূতি: আপনি যদি আপনার আত্মীয়দের প্রতি সহানুভূতি এবং সাপোর্ট করেন, তারা আপনার দিকেও একই ভাবে করতে সাজিত হবে।

সময় দান: আত্মীয়দের সাথে সময় কাটাতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের প্রতি আপনার মনোভাব ও ভালোবাসা প্রদর্শনের একটি উপায়।

সুতরাং, আত্মীয়তা এবং আত্মীয়দের সম্পর্ক হলো একটি ভাল ও সুস্থ জীবনের পারিকল্পনা।

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ফজীলত

আত্মীয়তা এবং আত্মীয়দের সম্পর্ক রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ এবং এটির ফজীলত অধিকাংশে ইসলামিক আদর্শের অংশ। ইসলামে আত্মীয়তা ও পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক করা একটি মৌল্যবান ও সুস্থ প্রক্রিয়া হিসেবে মন্নাহ করা হয়েছে। কিছু ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা একটি বড় ইবাদত হিসেবে মন্নাহ করা হয়েছে।

ইসলামে কোনো কারও আত্মীয়তা বিচ্ছিন্ন হিসেবে মন্নাহ করা হয়নি। বরং সম্পর্কে ভালোবাসা, সহানুভূতি, আদায়বাদ, সান্ত্বনা এবং সমর্থন দেখা গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। একে অপরের কষ্ট ও সুখের সময়ে সাথে থাকার জন্য উৎসাহী হওয়া এবং সময় দানের ফজীলত বহুপরক বহু হয়েছে।

ইসলামে পরিবারের কর্তব্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মন্নাহ করা হয়েছে, এবং পরিবারের সদস্যদের যাত্রার সময়ে সাথে থাকার ফজীলত বার্তা করা হয়েছে। ইসলামে প্রতিটি সদস্যকে অপরকে শ্রদ্ধা, মোহব্বত, এবং সহানুভূতি দেখানো হয়েছে, এবং এই সম্পর্ক রক্ষা করা হয়েছে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক দায়িত্বের প্রতি।

একে অপরকে কে কে শাস্তি এবং যাত্রা করার ফজীলত হয়েছে, এবং এটি সম্পর্ক রক্ষা করার প্রতি ইতিবাচক হতে সাহায্য করে। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, এই ধর্মানুসারী আদর্শগুলির মধ্যে আত্মীয়তা এবং সম্পর্কের মাধ্যমে সামাজিক ও মানবিক সমৃদ্ধির জন্য একটি প্রধান ভাবনা রয়েছে।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর শাস্তি

আত্মীয়তা এবং আত্মীয়দের সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং অপরকে ক্ষতি করতে একটি দু: খিত ক্রিয়া। ব্যক্তি এই ধর্মানুসারী ভূমিকা অবহিত করতে পারে এবং অপরের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী হওয়া উচিত নয়।

ইসলামে আত্মীয়তা এবং আত্মীয়দের সম্পর্ক প্রতি ব্যক্তির করতে হয় এবং এটি সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী হতে উচিত নয়। ইসলামে আত্মীয়তা এবং পরিবারের মধ্যে সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করতে হয়নি, বরং একটি প্রকার অধিকতম এবং শক্তিশালী বনানো হয়েছে।

ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, ছিন্নকারী বা আত্মীয়তা ভঙ্গ করা অত্যন্ত অপশক্তি এবং ক্ষতিকর মানা হয়ে থাকে। একজন মুসলিম ব্যক্তি যদি তার আত্মীয়তা বা পরিবারের সদস্যদের সাথে বিচ্ছিন্নকারী হয়, তবে এটি একটি গভীর দু: খ হয়ে থাকে এবং সমাজে সে বিরুদ্ধ প্রতিকূল দৃষ্টিতে পর্যাপ্ত নয়।

আত্মীয়তা বা আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী একটি ব্যক্তির জীবনে অনেকগুলি অসুখ, সান্ত্বনা এবং পরাধীনতা উত্পন্ন করতে পারে। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ভঙ্গ করার ফজীলত নেই বরং এটি অত্যন্ত অপশক্তি, মৌল্যবান ও বাড়তি প্রাপ্তির মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিজৃত হতে সাহায্য করতে পারে।

শেষ কথা

আজ বড়ই পরিতাপের বিষয়, আমাদের সমাজের অনেক মুসলমানই পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ও আত্মীতা-স্বজনের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম এক কারণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীতার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহতায়ালা অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করেন।’ -সূরা মুহাম্মদ : ২২-২৩

# জাহান্নামের শাস্তি কেমন হবে? জাহান্নামের কাহিনী # মানুষ সৃষ্টির রহস্য কি? মানব জাতি সৃষ্টির ইতিহাস

Related posts

Leave a Comment