আমলকি খেলে কি কি উপকার হয়? আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
টক আর তেতো স্বাদে ভরা আমলকি গুণে এবং মানে অতুলনীয়। আমলকি হল আমাদের দেহের জন্য সবচেয়ে উপকারী ভেষজের মধ্যে একটি। এই ফলটি আপনি প্রতিদিনই খেতে পারেন। তবে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বরং রয়েছে দারুণ সব উপকারিতা।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম
আমলকি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় এবং এই ফলটির স্বাদ প্রাথমিকভাবে খুবই টক কিন্তু খাওয়ার পর মিষ্টি। কাঁচা আমলকি ছোট ছোট টুকরো করে অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। আমলকি মিশ্রিত পানি সকালে খালি পেটে পান করুন। পরে আমলকির টুকরোগুলোও খেয়ে ফেলুন। আমলকির ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে।
আমলকির পুষ্টিগুণ
আমলকির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। এই গাছের ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা যায়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি থাকে যা পেয়ারার চেয়ে ৩ গুণ ও কাগজি লেবুর চেয়ে ১০ গুণ, কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি। একজন পুর্ণ বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি প্রয়োজন হয়। কেউ যদি দিনে দুটো আমলকি খায় তাহলে সে ঐ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি পেতে পারেন। আবার আমলকি খেলে মুখে রুচিও অনেক বেড়ে যায়।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির কল্যাণে দুনিয়ায় অগণিত জিনিস সৃষ্টি করেছেন। এরকম কোটি কোটি সৃষ্টির মধ্যে মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি ও ঔষুধি গুণে ভরপুর একটি ফলের নাম আমলকি। আমলকির প্রচুর পুষ্টিগত গুনাগুন রয়েছে। তাই আমলকিকে সুপার ফুড বলা হয়। আমলকি খুব সহজেই আমরা বাজারে পেয়ে থাকি এবং এর দাম বা মূল্য খুবই কম । এই ফলটি আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে আমলকির ভূমিকা অপরীসিম। নিচে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আয়ুর্বেদে আমলকিকে প্রকৃতির আর্শীবাদ বলে মনে করা হয়। শুকনো আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। যার মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা হয়। আমলকি ভিটামিন-সি এর সেরা উৎস হিসাবেও মনে করেন অনেকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার, যা শরীরকে অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি খেয়ে দেখতে পারেন।
সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আমলকির রস কাশি ও ফ্লু-র পাশাপাশি মুখের ঘা নিরাময়েও উপযোগী। আমলকি একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দুই চামচ আমলকির রসে দুই চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে সর্দি-কাশিতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। মুখের ঘা থেকে মুক্তি পেতে এক চামচ আমলকির রস পানিতে মিশিয়ে গার্গল করুন। নিয়মিত আমলকি জুস পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং শরীর সুস্থ থাকে।
চুলের যত্নে ও খুশকি সমস্যায় আমলকির ব্যবহার
আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য এটি একটি অপরিহার্য উপাদান। আমলকি খেলে শুধু চুলের গোড়াই শক্ত হয় না, চুল দ্রুত বেড়ে ওঠে। চুলকে খুশকিমুক্ত ও কম বয়সে চুল পাকা রোধে আমলকি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ আমলকি চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং খুশকি জমতে বাধা দেয়। আমলকির ভিটামিন-সি এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য খুশকি এবং চুলকানি বন্ধ করতে সাহায্য করে। মাথার স্ক্যাল্প পরিষ্কার করতে আমলকির রস দারুণ কার্যকর।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ রয়েছে। তাই দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে এই ফলটি। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে কমলা লেবু, মৌসুম্বি লেবু এবং পাতিলেবু খান। ডিম- ডিমে রয়েছে লুটিন এবং ভিটামিন এ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। যা রাতকানা, শুষ্ক চোখ এবং চোখের সামগ্রিক স্বাস্থ্য থেকে রক্ষা করে।
মুখের ঘা সারাতে আমলকি
মুখের ঘা সারাতে আমলকি বেশ উপকার করে থাকে। মুখের আলসার সারাতে একটি ঘরোয়া ওষুধ দারুণ কাজে আসে। এটি বানাতে প্রয়োজন আমলকী এবং মধুর। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন পরিমাণ মতো আমলকি নিয়ে প্রথমে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। তারপর তা ১ চামচ মধুর সঙ্গে মেশাতে হবে। তাহলেই ওষুধ তৈরি হবে। টানা এক সপ্তাহ ওষুধটি ব্যবহার করলে এমন ধরনের সমস্যা থেকে সহজেই নিস্তার মিলবে। আসলে মধু এবং আমলকীতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান এই ধরনের রোগ সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আর তা হল এই ঘরোয়া ওষুধটি খাওযার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর খাবারও খেতে হবে। তবেই দ্রুত কষ্ট থেকে মুক্তি মিলবে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ
আমলকি সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভালো কাজ করে। ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে। আমলকি ক্রোমিয়াম উপাদান পাওয়া যায় যা একটি খনিজ এবং কার্বোহাইড্রেট বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ইনসুলিন হরমোনকে শক্তিশালী করে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
যৌন সমস্যায়
অনেকেই যৌনতা সংক্রান্ত নানান সমস্যায় ভুগে থাকেন। সেই সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে পারে আমলকি। যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। তাই আপনি যৌন সমস্যায় ভুগে থাকলে আমলকি খেতে পারেন।
আমলকির অপকারিতা
আমলকি খাওয়া খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। তবে আমরা অনেকেই জানি না যে, আমলকিরও অনেক অপকারিতা রয়েছে। আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট একাধিক রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তবে অতিরিক্ত আমলকি খেলে হীতে বিপরীত হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সুস্থ থাকতে আমলকি কতটুকু খাবেন ও অতিরিক্ত আমলকি খেলে কী হতে পারে-
**হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বেশি মাত্রায় আমলকি খাওয়ার অভ্যাস। বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদরোগের সমস্যা থাকলে ফলটি খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
**আমলকিতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং ফাইবার। তাই অতিরিক্ত আমলকি খেলে পেটের নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
**খুব কম লোকেরই আমলকির প্রভাবে অ্যালার্জি হতে পারে। অত্যাধিক খাওয়ার ফলে কিছু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। তাই আমাদের যাদের অ্যালার্জি আছে তারা একটু ভেবে চিন্তে আমলকি খাবেন।
**সার্জারি হলে আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রক্ত পাতলা হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।এছাড়াও ব্লাড থিনিংয়ের ওষুধ খেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আমলকি খাওয়া উচিত। তাই এই সময়ে আমলকি না খাওয়াই ভালো।
**আমলকি বেশি পরিমাণে খেলে সর্দি-কাশি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাই আমলকি পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।
FAQS-
# আমলকী কি?
=>আমলকি এক ধরনের ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম আমালিকা। একজন মানুষ যদি প্রতিদিন ৬.৫ গ্রাম আমলকী খেতে পারেন তবে অনেক রোগ থেকেই মুক্ত থাকতে পারবেন।
# আমলকি কেন খাবেন?
=>আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ক্যারোটিন, থায়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন ও নিয়াসিন থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আমলকি খেয়ে আসছে। বিশেষ করে শীতকালে আমলকি নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায়। সর্দি-কাশি সারাতে আমলকির জুরি মেলা ভার।
# আমলকির উপকারিতা কি?
=>আমলকিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন-সি যা আমাদের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। তাই আমলকি নিয়মিত খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে বা ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত হয়।
# আমলকির রস খাওয়ার উপকারিতা কি?
=>আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এ ছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে। আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ, চোখ চুলকানি বা জল পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়।
# খালি পেটে আমলকি কেন খাবেন?
=>আমরা অনেকেই তারুণ্য রাখতে সকালে খালি পেটে লেবুর পানি খাই। লেবুতে আছে ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আবার মেদও কমায়। তবে এর থেকেও বেশি উপকার মিলবে আমলকিতে। আমলকিতে আছে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ক্যারোটিন। নিয়মিত আমলকির জুস পানে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, হজম ভালো হয়, কোলেস্টেরল ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমে।
# আমলকির রস মাথায় দিলে কি সত্যিই কোনো উপকার পাওয়া যায়?
=>আমলকির রস মাথায় দিলে উপকার পাওয়া যায়। এটি মাথা ঠান্ডা করে এবং মাথার চুল শক্ত করে।
শেষ কথা
আমলকি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ ফল। এর ফলটির উপকারিতার শেষ নেই। তবে আমলকি খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। সহজে ভিটামিন-সি এর চাহিদা পুরণ করার জন্য আমলকির জুড়ি নেই। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমলকি রাখলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত কার্যকরি হবে।
# কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়? কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা # আঙ্গুর খেলে কি হয়? আঙুর ফলের উপকারিতা