আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। কিভাবে স্বপ্নের বাংলাদেশের অভ্যুত্থান হয়?
সুজল-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আর অপরূপ সৌন্দর্যের নীলাভূমি আমার এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি স্বপ্নপতাকার নাম, একটি রক্তপতাকার নাম। এদেশের প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করে থাকে। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা একটি পতাকার জন্য ত্রিশ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা তাদের মহামূল্যবান প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন তাদের মহামূল্যবান সম্পদ (ইজ্জত) হারিয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য।
স্বপ্নের বাংলাদেশের অভ্যুত্থান
প্রায় দুইশ বছরের ব্রিটিশ সরকারের শাসন থেকে রক্ষা পেতে তৎকালীন বাংলা সরকার ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু বাঙালিদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়। তারা বাঙালিদের স্বাধীনতা, শিক্ষা, সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির উপর আঘাত হাতে। পাকিস্তানি শাসকরা সর্বপ্রথম আঘাত হাতে ভাষার উপর। বাঙালি জাতি কিছুতেই তা মেনে নিতে পারে নি। বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদের প্রথম উন্মেষ ঘটে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতি জয়লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচবনে যুক্তফ্রন্ড গঠন করলে সেখানেও জয় লাভ করে। কিন্তু জয় লাভ করলে কি হবে তারা ক্ষমতায় থাকতে দেয় নি। ১৯৫৮ সালে তৎকালিন পাকিস্তানে সামরিক শাসন আইন জারি করা হয়। এতে বাঙালিদের উপর অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়নের মাত্রা বেড়ে যায়। বাঙালি জাতি তখন আন্দোলনের ডাক দেয়। শুরু হয় ১৯৬৯ সালে গণ-অভুত্থান। ১৯৬৯ সালের অভুত্থানের ফলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সেনাবাহিনীর জেনারেল প্রধান ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তার করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা গ্রহণের পর জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেয়। সে প্রতিশ্রুতিও তারা রক্ষা করেন নি। এরপর তারা নির্বাচনের ডাক দেয়। কিন্তু ১৯৭০ সালের সেই নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জয় লাভ করেন। কিন্তু তাদের রাষ্ট্র ক্ষমতা দেওয়া হয় নি। এর ফলশ্রুতিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭১ সালে ৭ ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এবং মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা পরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা ২৫ শে মার্চ রাত্রে পূর্ব পাকিস্তানে ”অপারেশন সার্চ লাইট” নামে গণহত্যা চালায়। এই কারণে আমরা ২৫ শে মার্চকে কালো রাত্রী বলে থাকি। ২৬ শে মার্চে যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার পূর্বে বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। ২৭ শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পর দেশের আপামর জনসাধারণ যুদ্ধের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুদ্ধে অনেক মানুষ শহীদ হয়েছে। এই যুদ্ধ চলে দীর্ঘ নয় মাস ধরে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে ১৬ ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করি। আর সেই জন্যে আজ আমরা পৃথিবীর বুুকে নিজেদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্ম-প্রকাশ করতে পারি।
আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ
পৃথিবীর বুকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দেশগুলোর মধ্যে যে দেশগুলো আপনার মন কেড়ে নিতে সক্ষম তার মধ্যে আমার বাংলাদেশ প্রথম সারিতেই থাকবে বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি। আমি এই দেশের নাগরিক বলে নয়, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আমার দেশের সৌন্দর্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে তুলবে। এই দেশে প্রচুর পরিমাণে নদ-নদী, খাল-বিল রয়েছে যা মানুষের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশও বলা হয়ে থাকে। পর্যটন খাতে বাংলাদেশে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাইবো বাংলাদেশ যেনো তার রূপবৈচিত্রকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেগুলো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত করে দেশি-বিদেশী পর্যটকের কাছে নিজেকে ভ্রমণের জন্য আদর্শ দেশ হিসেবে পরিচিত করে তুলবে। কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কুয়াকাটা,সেন্টমার্টিন এই রকম আরও অনেক স্থান রয়েছে যা আনায়াসে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে নেতৃত্ব দিতে পারে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ
শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড। কেনো বলা হয়ে থাকে তা বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা তা বুঝতে পারছি খুব ভালোভাবেই। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে জোর দিতে হবে আরো বেশি করে। কারণ একজন শিক্ষিত ব্যক্তি যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে সেই শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে প্রতি বছর শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু শিক্ষিত ব্যক্তিদের কোনো পরিবর্তন হয় না। আমি বিশ্বাস করি পরিবর্তন দরকার। কেননা আমরা এখনো শিক্ষার একটা আদর্শ স্থান তৈরি করতে পারি নাই। তবে পরিবর্তনটা এভাবে না করে ধীরস্থির ভাবে চিন্তা-ভাবনা করে পরিবর্তনের একটা রোল মডেল দাড় করিয়ে সেটাকে বাস্তবায়ন করুক। তাতে যদি দীর্ঘ সময় লাগে তবুও সেটা করা উচিত। আমরা শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য সেই সময় উপযুক্ত সেই সময় তাদের এক গাদাগাদা বই চাপিয়ে দিয়ে থাকি। এতে করে তাদের মানসিক বিকাশ তো ঘটেই না বরং তাদের উপর প্রচন্ড চাপ পড়ে। অন্যদিকে ভার্সিটি লেভেল হলো ক্রিটিক্যাল মাইন্ড তৈরির কারখানা। কিন্তু এখানে যে ছেলেটা ম্যানেজমেন্ট এর প্রতি প্রবল ভাবে আগ্রহী তাকে ভর্তি পরীক্ষার মারপ্যাচে পড়ে ফিন্যান্সের মতো জটিল সাবজেক্ট পড়তে হয়। আবার যে ছেলেটা ফিন্যান্সের প্রতি আগ্রহী তাকে ম্যানেজমেন্ট পড়তে হচ্ছে। তাই শিক্ষাকে সমন্বয় করতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষাকে আলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে অবশ্যই ভালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ
বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল হওয়ার কারণে আমরা বিশ্বের যেকোনো তথ্য, সংবাদ মুহূর্তের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনার উদ্যোগে আজ আমরা ডিজিটাল দেশ পেয়েছি। বর্তমানে দেশে বেশ কিছু ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন রকম সেবা গ্রহণ করে থাকি। যেমন, শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, যোগাযোগের মতো আরো অনেক কিছু ডিজিটাল সেবা পেয়ে থাকি। আজ দেশ ডিজিটাল হওয়ার কারণে অনেক যুবক মার্কেটপ্লেসে কাজ করে থাকে। সেখান থেকে তারা যেমন বেকারত্ব দূর করছে ঠিক তেমনি নিজেদেরকেও স্বাবলম্বী করে তুলছে। ঘরে বসে কাজ করে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছে।
FAQS-
আপনার কাছে দেশ মানে কি?
# আমার কাছে দেশ মানে বাংলাদেশ। স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
আপনার কাছে স্বপ্নের দেশ কোনটি?
# আমার কাছে স্বপ্নের দেশ এই পৃথিবীতে নেই। আর সেটি হলো স্বর্গীয় দেশ। যেহেতু আমি পৃথিবীর কাছে ঋণী সেই হিসেবে আমার স্বপ্নের দেশ হলো বাংলাদেশ।
আপনি কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?
# বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। তবে স্বাধীনতা পাওয়া এমন নয়। মানুষের বাকস্বাধীনতা, যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের অধিকার এসবই থাকতে হবে। ক্রয় ক্ষমতা থাকতে হবে সবার। দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে সবক্ষেত্রে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা পাইনি। আজ নারী এবং শিশুর নিরাপত্তা নেই। শিশু নির্যাতন যে হারে বাড়ছে দুঃখজনক।
শেষ কথা
আমাদের দেশে এখনও প্রচুর সমস্যা রয়েছে। তারপরেও আমি আশাবাদী। আমি স্বপ্ন দেখি এই কারণে যে, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশে যেসব সমস্যা বর্তমানে রয়েছে সেগুলো একদিন থাকবে না। সেদিন আমাদের হাতে থাকবে কিবোর্ড স্বপ্নের বাংলাদেশ। সবার মধ্যে আধুনিকতার ছোয়া লাগবে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ। তবেই একদিন এই দেশ হবে বিশ্বের অন্যতম সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ।