আম খেলে কি হয়? আমের পুষ্টিগুণ! আম খাওয়ার উপকারিতা

আম খেলে কি হয়? আমের পুষ্টিগুণ! আম খাওয়ার উপকারিতা

 

আম আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। আম এমন একটা লোভনীয় খাদ্য যেটা কেউ পছন্দ করেন না এরকম পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। পাকা আম নাকি কাঁচা আম কোনটি কার কাছে বেশি প্রিয়? আমাদের দেশে আম বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমন, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি, রানি ইত্যাদি অনেক রকম। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই আমার মনে হয় হিমসাগর আমটা বেশি পছন্দ করেন। অনেকেই কাঁচা বা পাকা আমের চাটনি, গোটা আম, আমের জুস নানা ভাবে খেতে পছন্দ করেন।

আম খাওয়ার উপকারিতা

মূলত আম হল গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। সুস্বাদু বা মুখরোচক ফলের মধ্যে আম অন্যতম। কাঁচা হোক বা পাকা সব রকমের আমই রসনাতৃপ্তিতে ব্যবহার করে বাঙালি। তবে কাঁচা আম বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ কাঁচা আমের উপকারিতা অনেক বেশি। তবে আমে শুধুই কি স্বাদ! গুণের দিক থেকেও কিন্তু অন্যান্য ফলকে রীতিমতো টেক্কা দিতে পারে আম। পেট থেকে ত্বক ও চুল বিভিন্ন সমস্যা মেটানোর জন্য আমের ভূমিকা অতুলনীয়। যা অস্বীকার করা যায় না। পুষ্টিবিদদের মতে আমের শাঁস থেকে আঁটি পুরোটা থেকেই কিছু না কিছু উপকার মেলে। পরিমিত পরিমাণে আম খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। আমের উপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

রোগ প্রতিরোধ করে

আমে আছে আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যারোটেনয়েড। এটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন আম খেলে শরীরের ক্ষয় রোদ হয় এবং স্থূলতা কমিয়ে শারীরিক গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। আমে থাকা ভিটামিন ই, কপার, ভিটামিন বি এবং ফলেট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিশেষভাবে ইনফেকশন–জাতীয় সমস্যা দূরে রাখতে সাহায্য করে। আমে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। এগুলো আপনার শরীরের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

আমে রয়েছে নানা রকম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আমে রয়েছে প্রায় ২০ এর অধিক ভিটামিন ও মিনারেল এবং এন্টিওক্সিডেন্ট যা আমকে ’সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত করিয়েছে। আম শরীরের রক্তে কোলেস্টেলের মাত্রা কমায় এবং আমাদের হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উপস্থিতির কারণে শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে স্তন, লিউকেমিয়া, কোলন প্রোস্টেট ক্যান্সারের মত মারাত্মক ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

হৃদরোগ দূর করে

বর্তমান সময়ে অন্যতম ভয়ের কারণ হচ্ছে হৃদরোগ। এই রোগ থেকে বাঁচতে আম খান। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। এছাড়াও আমে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফাইবার যা শরীরের গ্লুকোজ, কোলেস্টেরল, ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আদর্শ ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদপিণ্ডের সার্বিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। আম খেলে হৃদরোগ, ভুলে যাওয়ার সমস্যা, আথ্রাইটিসের মতো রোগ দূরে থাকে।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

আম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যথেষ্ট কাজ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের বেরি জাতীয় ফল অবশ্যই খাওয়ান শিশুদের। এগুলি ভিটামিন C-এ ঠাসা। এছাড়াও এতে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্কের মতো উপাদান রয়েছে। এর সবগুলিই মস্কিষ্কের বিকাশ এবং স্মৃতিশক্তির জন্য ভালো। শিশুকে অবশ্যই আম খেতে দেওয়া উচিত। কারণ এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে। আমে আছে গ্লুটামিক এসিড যা মস্তিষ্কের কোষ উজ্জীবিত করে থাকে। ফলে বাড়ে মনোযোগ। তাই বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অবশ্যই বেশি বেশি করে আম খাওয়াবেন।

চোখ ভালো রাখে

আম বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন-এ এর ভালো উৎস। মানুষের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ‘এ’র চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশের জোগান দিতে পারে আম। ভিটামিন এ চোখের জন্যেও খুব উপকারী। ড্রাই আইয়ের সমস্যা কমাতেও পাকা আম উপকারী। তাই দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে আম।

আমের পুষ্টিগুণ

পুষ্টি উপাদানে ভরপুর উপকারী ফল আম। এতে রয়েছে প্রচুর খনিজ লবণ এবং বিভিন্ন ভিটামিন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে। এছাড়া ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন বি-৬ রয়েছে আমে। এছাড়াও আমে আরো রয়েছে ১.৩ গ্রাম আয়রন, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ০.৯ মিলিগ্রাম রিভোফ্লেভিন এবং ০.০৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন থাকে। আমে থাকা বিটা ক্যারোটিন, লুশিয়েন জিলাইক এসিড, আলফা ক্যারোটিন, পলি পিথানল কিউরেচিন কাম্ফারল, ক্যফিক এসিড ইত্যাদিও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

আমের অপকারিতা

আম উপকারী ফল হলেও এটি একসঙ্গে খুব বেশি খাওয়া ঠিক না। কারণ পাকা আমে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। এজন্য ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বেশি আম খাওয়া ক্ষতিকর। বেশি করে আম খেলে ওজন বৃদ্ধি হয়ে যেতে পারে। এছাড়া আমে থাকা ইউরিশিয়াল নামের রাসায়নিক অনেকের শরীরেই অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করে। এই রাসায়নিকের ফলে ত্বকের সমস্যা ও চুলকানি হতে পারে। অতিরিক্ত আম খেলে হজমে সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই একসঙ্গে বেশি আম খেলে বদ হজম বা ডায়রিয়া হওয়ার ভয় থাকে। মনে রাখবেন যত উপকারীই হোক না কেনো কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।

FAQS-

# আম খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?

=> আম সকালে এবং বিকালে খাওয়া বেশি ভালো। এটি আপনার পুরো এক সময়ের খাবারের চাহিদা মেটাবে। তাই আম খাওয়ার উপযুক্ত সময় সকালে এবং বিকালে।

# রাতে আম খাওয়া উচিত?

=> রাতের খাবারের পর আম খাবেন না। পুষ্টিবিদদের মতে রাতের খাবারের পর আম কখনোই ডেজার্ট হিসেবে খাওয়া উচিত নয়। রাতে আম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। এটি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় যার কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

# খালি পেটে আম খেলে কি হয়?

=> খালি পেটে আম খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। তাই সকালে খালি পেটে আম না খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

# আম খাওয়ার পর কি কি খাওয়া নিষেধ?

=> আম খাওয়ার পরপরই ঝাল কিংবা মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই দুই খাবার কাছাকাছি সময়ে খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যাতে ভুগতে হতে পারে। তাই আম খাওয়ার পর ঝাল এবং মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে কিছুটা সময় বিরত থাকুন।

# আমের মধ্যে কি কি ভিটামিন?

=> আমে ১.৩ গ্রাম আয়রন, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ০.৯ মিলিগ্রাম রিভোফ্লেভিন এবং ০.০৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন থাকে। এতে আছে প্রচুর খনিজ লবণ এবং বিভিন্ন ভিটামিন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে। এ ছাড়াও ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’ ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে আমে।

# আমের বিজ্ঞান সম্মত না কি?

=> আমের ইংরেজি নাম হল Mango। আর আমের বিজ্ঞান সম্মত নাম হলো Mangifera Indica।

শেষ কথা

আম খুবই উপকারী একটি ফল। আমের এই অসংখ্য উপকারিতার জন্যই আমকে “সুপার ফুড” হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আবার আমকে ফলের রাজাও বলা হয়ে থাকে। এছাড়া নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও পাকা আমের জুড়ি নেই। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় আম যুক্ত করুন।

# আঙ্গুর খেলে কি হয়? আঙুর ফলের উপকারিতা # কলা খেলে কি হয়? কলা খাওয়ার উপকারিতা

Related posts

Leave a Comment