কাঁঠাল খেলে কত উপকার জানেন? কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
কাঁঠাল আমাদের দেশের জাতীয় ফল। এর ইংরেজী নাম হলো (Jackfruit)। এটি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। কাঁঠাল বিরাট আকৃতি, রসালো কোষ এবং চমৎকার স্বাদ-গন্ধের জন্য ফলটি বেশ খুবই জনপ্রিয়। পাঁকা ও কাঁচা দুইভাবেই কাঁঠাল খাওয়া যায়। এমনকি অনেকে কাঁঠালের ফুল থেকে বের হওয়ার পর মুছি খেতেও ভালবাসেন। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়।
কাঁঠালের বীজ খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাঁঠালে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। কাঁঠাল এমন একটি ফল যা ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, থায়ামিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং জিঙ্কে সমৃদ্ধ। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। সবচেয়ে বড় কথা হলো কাঁঠালে কোনো ক্যালরি নেই। তাই হার্ট সংক্রান্ত অনেক সমস্যায় ও এটি বেশ উপকারী।
কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম
কাঁঠাল বড় হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়। কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়। এছাড়া কাঁঠাল পেঁকে গেলে তখন অবশ্যই খাওয়া হয়। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে উপাদেয়। এতে প্রচুর শর্করা ও ক্যালসিয়াম থাকে। কাঁঠালের বীচিও একটি চমৎকার খাবার। কাঁঠাল একটি পুষ্টিকর ফল। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন যা শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
গ্রীষ্মের অন্যতম আকর্ষণীয় ফল হলো কাঁঠাল। বাংলাদেশের সব জায়গাতেই কম-বেশি কাঁঠাল পাওয়া যায়। কাঁঠালের স্বাদ এবং গন্ধের জন্য অনেকেরই কাছেই প্রিয়। কাঁঠাল আকারে অনেক বড় হয় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। শুধু কাঁঠালের কোয়াতে গুনাগুন রয়েছে তা নয়। কাঁঠালের বিচিতে অনেক গুনাগুন রয়েছে। আমরা অনেকেই কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। তাই চলুন আজকে আমরা কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বর্তমানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো আমাদের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কাঁঠাল আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। কাঁঠালে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, বি-১, বি-২, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান। ভিটামিন ‘সি’ আমাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে দ্বিগুণ শক্তিশালী করে। তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ত্বক, নখ, চুল, দাঁতের পুষ্টি জোগায়। এটি ক্যান্সার ও টিউমারের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই কাঁঠাল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে দ্রুত।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য কাঁঠালের ভূমিকা রয়েছে। যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে তারা নিয়মিত কাঁঠাল খেলে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন। কাঁঠালে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান আয়রন যা দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করে থাকে। কাঁঠালে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি হাড় শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে। কাঁঠালে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এই খনিজ উপাদান রক্তস্বল্পতা দূর করে। তাই রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য নিয়মিত কাঁঠাল খেতে পারেন।
হজমশক্তি বাড়ায়
আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য হমজশক্তি ভালো থাকা খুব জরুরি। কারণ হজম কোনো কারণে বিঘ্নিত হলে তার প্রভাব আমাদের শরীরে পড়ে থাকে। কাঁঠাল ফাইবার সমৃদ্ধ ফল হওয়ায় হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে। কাঁঠালে বিপুল পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে যা রক্তের চিনির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কাঁঠালে থাকা ফুক্টোজ ও সুক্রোজ রক্তে সুগারের মাত্রা না বাড়িয়েই দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। হজমশক্তি বাড়াতে কাঁঠাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কাঁঠাল ফল আঁশালো যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে। কাঁচা কাঁঠালে রয়েছে পর্যাপ্ত আঁশ যার অন্য নাম ডায়াটারি ফাইবার। আঁশ জাতীয় খাবার দীর্ঘ সময় পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁঠালের আঁশ কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কাঁঠাল খাওয়া অনেক উপকারী।
হাড় মজবুত করে
হাড়ের ক্ষয় রোগ একটি ভয়ানক অসুখ। এক্ষেত্রে কাঁঠাল হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়কে আরো মজবুত করে তুলে। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, কপার, জিঙ্ক রয়েছে। এটি আপনার হাড় মজবুত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া কাঁঠালে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি কর্নিয়ার কার্যকারিতায় অনেক সাহায্য করে।
কাঁঠালের পুষ্টিগুণ
কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। কাঁচা ও পাকা উভয় ধরনের কাঁঠালেই নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে। কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি এবং আঁশেরও একটি ভাল উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালের কোয়ায় রয়েছে ৯৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। কাঁঠালে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিংক ও নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। ভিটামিন ও ফাইবারে পরিপূর্ণ কাঁঠাল খাদ্য তালিকায় রাখলে শরীরে মিলবে নানা পুষ্টি। এসব পুষ্টিগুণ শরীরের টিস্যুগুলোতে শক্তি যোগায়।
কাঁঠালের বিচি খাওয়ার উপকারিতা
কাঁঠাল এমন একটি ফল যে ফলের কোয়ার সাথে কাঁঠালের বিচিও খাওয়া যায়। কাঁঠালের কোয়া যেমন পুষ্টিগুনে ভরপুর তেমনি কাঠালের বিচিতেও পুষ্টিগুণ রয়েছে। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন ও রিবোফ্লাভিন। উভয়ই ভিটামিন বি। কাঁঠালের বিচির রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এর প্রতি ১০০ গ্রামে শক্তি পাওয়া যায় ৯৮ ক্যালরি। এর ফলে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং শরীরে বিভিন্ন রোগ ঘেষতে দেয় না। কাঁঠালের বিচি নিয়মিত খেলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। তাই বলা যায় কাঁঠালের কোয়া খাওয়ার পাশাপাশি কাঁঠালের বিচি খাওয়া যেতে পারে।
কাঁঠাল খাওয়ার অপকারিতা
কাঁঠাল খুবই পুষ্টিকর খাবার। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাঁঠাল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কাঁঠাল পুষ্টিকর খাবার হলেও সবার জন্য তা প্রযোজ্য নয়। যাদের ডায়াবেটিস আছে, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিস বেড়ে আছে তারা কাঁঠাল এড়িয়ে চলবেন।
কিন্তু প্রেগন্যান্ট মহিলারা কখনও কাঁঠাল বেশি পরিমাণে খাবেন না। রক্তচাপ এবং রক্তের গ্লুকোজ এর উপর সরাসরি প্রভাব থাকায় সার্জারি করতে হলে সার্জারির কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে কাঁঠাল খাওয়া বন্ধ করা উচিত। যাদের পূর্বে থেকে এলার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের কাঁঠাল খাবার ক্ষেত্রে এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি হতে পারে। অথবা কাঁঠাল খাওয়ার মাধ্যমেও এলার্জি হতে পারে।
FAQS-
# কাঁঠাল খেলে কি হয়
=> কাঁঠাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কাঁঠাল খেলে হজমশক্তি ভালো হয়। কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। হৃদরোগ, কোলন ক্যান্সার এবং পাইলসের সমস্যায় কাঁঠাল অত্যন্ত উপকারী।
# কাঁঠালে কি ওজন বাড়ে?
=> কাঁঠাল খেলে ওজন বেড়ে যাবে এটা ভুল ধারণা। তাই শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে কাঁঠাল খেতে পারেন। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে খাদ্য-আঁশ থাকে দুই গ্রাম, শর্করা ২৪ গ্রাম, চর্বি দশমিক ৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৯৭ আইইউ ও ভিটামিন-সি ৬ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম।
# কাঁঠাল ভিটামিন কি?
=> কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ রয়েছে। কাঁঠাল রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁঠালে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন,ভিটামিন-সি, বি-১, বি-২, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান।
# কাঁঠালে চিনির পরিমাণ কত?
=> কার্বোহাইড্রেট ৩৮.৩৬গ্রাম। খাদ্যতালিকাগত ফাইবার ২.৫ গ্রাম। চিনি ৩১.৪৮ গ্রাম।
# কাঁঠালের বিচি খাওয়ার উপকারিতা কি?
=> প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে শক্তি পাওয়া যায় ৯৮ ক্যালরি। কাঁঠালের বিচিতে যে পরিমাণে প্রোটিন থাকে তা দেহের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
শেষ কথা
কাঁঠাল খুবই পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু একটি ফল। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। গ্রীষ্মকালীন এই ফল দেখতে আকৃতিতে বড়, রসালো কোষ ও চমৎকার। স্বাদ-গন্ধের জন্য ফলটি খুবই জনপ্রিয়। তবে যেকোনো খাবার নিয়মিত খাওয়ার আগে আমাদের শরীরের অবস্থা বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভাল। বেশি পুষ্টির আশায় অতিরিক্ত খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেকে খেতে চান না বা পছন্দ করেন না। পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনা করে হলেও তাদের কাঁঠাল খাওয়া উচিত।
# আম খেলে কি হয়? আমের পুষ্টিগুণ! আম খাওয়ার উপকারিতা #আঙ্গুর খেলে কি হয়? আঙুর ফলের উপকারিতা