জাহান্নামের শাস্তি কেমন হবে? জাহান্নামের কাহিনী

জাহান্নামের শাস্তি কেমন হবে? জাহান্নামের কাহিনী

 

চির দু:খ-কষ্ট, অপমান, দুর্ভাগ্য, লজ্জা-শরম, বিড়ম্বনা, ক্ষুধা-পিপাসা, আগুন, হতাশা-নিরাশা, চিৎকার-কান্নাকাটি, শাস্তি, অভিশাপ, আযাব-গযব প্রভূতি আরও যত কষ্ট আছে তার স্থানের নামই হলো জাহান্নাম। বিন্দুমাত্র শান্তি নেই সেখানে। জাহান্নামের ভিতরে মানুষকে হাত-পা এবং ঘাড়-গলা শিকলে বেঁধে বেড়ি পরিয়ে দলে দলে নিক্ষেপ করা হবে। যার ভিতরে শুধু অতিবেশি তেজ ও দাহ্য শক্তি সম্পূর্ণ আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই। যেই আগুনের তাপমাত্রা পৃথিবীর আগুনের থেকে ৬৯ গুণ বেশি।

জাহান্নাম

আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। উদ্দেশ্য হল মানুষ এক আল্লাহর দাসত্ব করবে। আল্লাহ সাথে কাউকে শরীক করবে না। আল্লাহ দেওয়া জীবন-বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে। আল্লাহ তায়ালা মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে পার্থিব জীবন পরিচালনার জন্য ভাল-মন্দ দুটি পথ দেখিয়েছেন। বান্দার প্রতিটি কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভালো কাজের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাত এবং খারাপ কাজের প্রতিদান স্বরূপ জাহান্নাম সৃষ্টি  করেছেন। আর এটি হলো অহংকারী এবং পাপীদের আবাসস্থল।

জাহান্নামীদের শাস্তি

আমার প্রিয় ভাই এবং বোন জাহান্নামের শাস্তি খুবই ভয়ংকর। দুনিয়াতে আমাদেরকে যে শরীর আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন সেই শরীর নিয়ে আমরা জাহান্নামে প্রবেশ করতে পারবো না। সে বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে। তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদের শরীরকে নতুন ডিজাইনে তৈরী করবেন। কিন্তু তারপরেও আপনার শরীর এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ টিকবে না।

রাসূল (সা:) আমাদের বুঝার জন্য বলেছেন, ”জাহান্নামের সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেওয়া হবে তাকে জ্বলন্ত কয়লার দুটি জুতা পরিয়ে দেওয়া হবে, এর ফলে তার মস্তিস্ক ফুটতে থাকবে।” জ্বলন্ত কয়লার উত্তাপ তার পা থেকে মাথায় গিয়ে পৌঁছবে এবং মস্তিস্ক ফুটতে থাকবে। এখনো আপনাদের খারাপ খবর দেওয়া হয় নি। খারাপ খবর হলো সেই লোক মনে করবে এবং বলে উঠবে এর চেয়ে কোনো শাস্তি কষ্টকর হতে পারে না। কিন্তু সে আসলে সবচেয়ে কম শাস্তি ভোগ করছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে জাহান্নামে যে শাস্তি রয়েছে সে তুলনায় ঐ লোক আনন্দে আছে।

জাহান্নামের পরিবেশ

জাহান্নামের পরিবেশ হবে খুবই ভয়াবহ। বিশ্বাস করা হয় জাহান্নামীরা যখন খাবার চাইবে তখন তাদের দেওয়া হবে যাক্কুম নামক এক কাঁটা যুক্ত ফল। যাক্কুম বৃক্ষের ফল খাওয়াও জাহান্নামীদের জন্য বড় কঠিন হবে। কারণ তা বড় দুর্গন্ধময়, তেঁতো এবং অতি ঘৃণ্য হবে। আবার জাহান্নামীদের দেওয়া হবে উত্তপ্ত রক্ত এবং ‍পুঁজ। চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে বিভিন্ন ধরনের কঠোর দৈহিক নির্যাতনের ফলে যেসব রস বের হয় যা প্রচন্ড দুর্গন্ধযুক্ত তা খেতে দেওয়া হবে। চারিদিকে শোনা যাবে শুধু চিৎকার আর চিৎকার।

জাহান্নামীদের অবস্থা

জাহান্নাম হলো সবচেয়ে কঠিন শাস্তির জায়গা। এখানে শুধু মানুষকে শাস্তি দেওয়া। জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি হবে আবু তালিবের। তার পায়ে দুই খানা আগুনের জুতা পরিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে তার মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে। বুখারী ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত- দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুনে ঢুকিয়ে বের করা হবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি দুনিয়াতে কখনো সুখ ভোগ করেছিলে? সে বলবে না, আমি কখনো সুখ ভোগ করি নাই।

হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা:) বলেছেন, হে লোক সকল! তোমরা বেশি করে কাঁদো। আর যদি তোমরা এরূপ করতে না পারো তাহলে তাহলে অন্তত কান্নার ভান কর। কেননা জাহান্নামীরা জাহান্নামে গিয়ে এমনভাবে কাঁদবে যে তাদের অশ্রু তাদের মুখের উপর এভাবে গড়িয়ে পড়বে যে মনে হবে এটা তাদের পানির নালা। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে তাদের তাদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে এবং অশ্রু শেষ হয়ে গেলে তাদের চোখ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করবে। তারপর তাদের চোখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে যাবে।

জাহান্নামের স্তরসমূহ

আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের পাপ অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করার জন্য জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর সৃষ্টি করেছেন। যেমন, তিনি মুনাফিকদের স্তর উল্লেখ করে বলেছেন, মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে। জাহান্নামের স্তর সাতটি। জাহান্নাম, লাযা, হুত্বামাহ, সাঈর, সাক্বার, জাহীম এবং হাবিয়াহ। এর প্রথম স্তরে থাকবে গোনাহগার মুসলিম, ‍দ্বিতীয় স্তরে থাকবে ইয়াহুদীরা, তৃতীয় স্তরে খ্রিষ্টানরা, চতুর্থ স্তরে সাবায়ীরা, পঞ্চম স্তরে অগ্নিপূজরা, ষষ্ঠ স্তরে থাকবে পৌত্তলিকরা এবং সর্বনিম্ন সপ্তম স্তরে থাকবে মুনাফিকরা।

জাহান্নামের দরজা সমূহ

জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে।’ প্রত্যেক জাহান্নামী তাদের আমল অনুযায়ী জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তার দরজাসমূহ এমনভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে যাতে তারা সেখান বের হওয়ার কোনো অবকাশ না থাকে। আল্লাহ তায়ালা কাফিরদেরকে লক্ষ করে বলবেন, জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য।

জাহান্নামের প্রহরী

জাহান্নামের প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের সংখ্যা ১৯ জন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। যারা আল্লাহর আদেশ পালনে সদা-সর্বদা প্রস্তুত থাকে কখনোই তা অমান্য করে না। তারা শুধু আল্লাহর আদেশের অপেক্ষা করে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

”হে মুমিনগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন (আগুন জ্বালানোর উপকরণ) হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যা আদেশ করেন তা পালন করতে।

জাহান্নামীদের আকৃতি

আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামীদের কঠিন শাস্তির কথা কোরআনে বলেছেন। এই জন্যে আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেহের আকৃতি পরিবর্তন করে দিবেন। জাহান্নামীদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দেয়ার লক্ষে তাদেরকে বিশাল আকৃতির দেহ দান করবেন। যেমন: তাদের এক কাঁধ থেকে অপর কাঁদের দূরত্ব হবে দ্রুতগামী ঘোড়ার তিন দিনের পথ, এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান এবং চামড়া হবে দিনের পথ সমতুল্য মোটা। এ সম্পর্কে হাদীছে আবু হুরায়বাহ (রা:) সূত্রে নবী করীম (সা) হতে বর্ণিত-

”তিনি বলেন কফিরের দু’কাঁধের মাঝের দূরত্ব একজন দ্রুতগামী আশ্বারোহীর তিন দিনের ভ্রমণপথের সমান।”

জাহান্নামীদের খাদ্য

জাহান্নামীদের খাদ্য হবে যাক্কুম এবং কাঁটাযুক্ত এক প্রকার গাছ। আর পানীয় হবে রক্ত-পুঁজ মিশ্রিত গরম দূর্গন্ধময় পানি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন-

”তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না কাঁটাযুক্ত ফল ব্যতীত, যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃতি করবে না।”

উল্লেখিত খাদ্য যা জাহান্নামীগণ ভক্ষণ করবে। কিন্তু এতে তারা কোন স্বাদ অনুভব করবে না এবং শারীরিক কোন উপকারে আসবে না। এই খাদ্য তাদেরকে শাস্তি স্বরূপ প্রদান করা হবে।

শেষ কথা

অতএব, জাহান্নামীদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহর তায়ালা কিয়ামতের দিন শয়তানগণ অর্থাৎ তারা যাদের ইবাদত করত তাদের সাথে এক সঙ্গে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। জাহান্নামের শাস্তি হতে পারে হাজার হাজার বছর, মিলিয়ন বছর এবং বিলিয়ন বছর বা তার চেয়ে বেশি। আর জাহান্নামের এক সেকেন্ডের শাস্তিও অকল্পনীয় পীড়াদায়ক।

সুতরাং যারা একদিন জাহান্নাম থেকে বের হওয়ার আশায় আছেন, আপনার কোনো ধারণাই নেই আপনি কি নিয়ে খেলছেন। আপনি এমন আগুন নিয়ে খেলছেন যেখানে সময়ের কোনো অর্থ থাকবে না। যদি এই শাস্তি হাজার বছর, মিলিয়ন বছরের শাস্তি হয় তাহলে আপনাকে ধ্বংস করে দেয়ার এটা যথেষ্ট।

# মানুষ সৃষ্টির রহস্য কি? মানব জাতি সৃষ্টির ইতিহাস # নামাজ না পড়ার শাস্তি। নামাজের গুরুত্ব এবং ফযীলত

Related posts

One Thought to “জাহান্নামের শাস্তি কেমন হবে? জাহান্নামের কাহিনী”

Leave a Comment