নামাজ না পড়ার শাস্তি। নামাজের গুরুত্ব এবং ফযীলত
ইসলামের মূল ভিত্তি হলো পাঁচটি। একজন মানুষ মুসলিম পরিচয় লাভের জন্য সর্ব প্রথম তাকে ঈমান আনতে হবে। আর সেই ঈমানটা হলো আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় তার কোনো শরীক নেই, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার নবী এবং রাসূল। আর এর পরেই নামাজের স্থান। নামাজ শব্দটি আরবিতে বলা হয় সালাত। সালাত শব্দের অর্থ দোয়া, তাসবিহ, রহমত, ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইসলামিক পরিভাষায় নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট নিয়মে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ইবাদত করার নামই হচ্ছে সালাত। নামাজ একটি ফরজ তথা আবশ্যক ইবাদত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ৮২ বার নামাজের কথা বলেছেন।
নামাজের গুরুত্ব
নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। নামাজ পড়ার জন্য আল্লাহ ও রাসূল (সা.) অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। বহু মুসলিম আছেন যারা অবহেলায় নামাজ ছেড়ে দেন। নামাজ পড়েন না। নামাজকে তারা পান্তা-ভাত মনে করেন। যুবকরা ভাবেন বুড়ো হলে নামাজ ধরবেন। তাদের জন্য বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কঠোর হুশিয়ারি আছে। নামাজ না পড়াকে নবীজী কুফুরী কাজ এবং কাফেরের স্বভাব বলে উল্লেখ করেছেন।
বেনামাজীদের হাশর হবে করুন। তাদের হাশর হবে ফেরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালাফের সাথে। এজন্য প্রত্যেকের নামাজ আদায় করতে হবে। পরিবারের সবাইকে স্ত্রী-সন্তানদের সালাত কায়েমের নির্দেশ দিতে হবে। সালাত আদায়ে অমনোযোগীদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সতর্কবার্তা দিয়েছেন। নিজেদের খেয়াল খুশি মতো নামাজ আদায়কারীরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত। বিনা কারণে মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ আদায়কারীর প্রতি রাসূল (সা.) কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। মোয়াজ্জিনের আযান শোনা মাত্রই সমস্ত কাজ-কর্ম রেখে নামাজ আদায় করতে হবে।
তবে জামায়াতের সাথে ফরয নামাজ আদায় করা ভালো। মসজিদে জামায়াত না পেলে ঘরেই ফরয নামাজ পড়তে হবে। নফল ও সুন্নাত নামাজ নিজ ঘরে আদায় করাই উত্তম। ফজর-আসর নামাজ আদায়কারী কিয়ামতের দিন আল্লাহর দিদার বা সাক্ষাৎ লাভ করবেন। নামাজ আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয় এবং নামাজে গুনাহ ঝরে যায়। তাই আমাদের সবক্ষেত্রে নামাজের গুরুত্ব দিতে হবে। নামাজ ছাড়া আমাদের পরকালে মুক্তির কোনো পথ নেই। এজন্য নামাজের গুরুত্ব বোঝার জন্য একটি গজল বেশ জনপ্রিয়।
নামাজকে বলো না কাজ আছে, কাজকে বলো আমার নামাজ আছে।
নামাজ বিহীন পরোপারে কি জবাব দিবে তুমি প্রভুর কাছে।
ফজর কাটে ঘুমের ঘরে, যহোর কাটে কাজে কাজে।
আসর কাটে খেলায় ধুলায়, মাগরিব মাঝে মাঝে।
ইশার সময় হয়ে এলে থাকো তুমি মিছে দুনিয়ার মাঝে।
জামায়াতে নামায পড়ার গুরুত্ব
আমরা মুসলিম জাতি। মুসলিম হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে আমরা একত্রে জামায়াতবদ্ধ হয়ে থাকি। জামায়াতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে সমাজ জীবনে ঐক্যবদ্ধতার শিক্ষা দেয়। এজন্য জামায়াতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্ব অত্যাধিক। নবী করিম (সা.) জামায়াতে নামাজ পড়ার উপর কঠিনভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। একাকী নামাজ আদায়ের তুলনায় জামায়াতে নামাজ আদায় করলে অনেক ফায়দা রয়েছে। আখিরাতে কল্যাণ তো আছেই দুনিয়াতেও এর প্রভাব রয়েছে।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সময়ানুবর্তিতার সৃষ্টি হয়। যথা সময়ে যে কোনো কাজ করার প্রেরণা জাগে। এর মাধ্যমে এলাকার দ্বীনি ভাইদের সঙ্গে একত্র হওয়ার মাধ্যমে বড় বড় কাজের সুযোগ লাভ হয়। জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়ের বড় ফায়দা হলো যারা জামায়াতে শরিক হয় তাদের প্রত্যেকের নামাজ পুরো মসজিদের জামায়াতের একটি অংশ হয়ে যায়। নামাজের প্রকৃত ফজীলত এবং বরকত জামাতে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে হাসিল হয়। সুতরাং একান্ত অপারগতা ব্যতীত জামায়াতে নামাজ ছেড়ে দিলে আপনি কী পরিমাণ সওয়াত এবং বরকত থেকে বঞ্চিত হবেন তা আপনার একবার ভেবে দেখা উচিত।
উল্লেখ্য, জামায়াতে নামাজ পড়ার ফযীলত শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য। হাদীসে শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ্য রয়েছে যে, মহিলাদের জন্য মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরের ভিতরে নামায পড়া অধিক উত্তম এবং ফযীলতপূর্ণ।
নামাজ পড়ার উপকারিতা
নামাজ মুসলমানদের একটি ফরজ ইবাদাত। নামাজ অবশ্যই কর্তব্য বিধান। তবুও এর উপকারিতা বিদ্যমান। আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন সব মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ করেছেন। এই নামাজ পরকালের মুক্তি লাভের অন্যতম মাধ্যম। কারণ পরকালে সর্বপ্রথম নামাজের হিসবা গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব সঠিক এবং সুন্দরভাবে দিতে পারবে তার জন্য পরবর্তী হিসাব সহজ হয়ে যাবে। নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শারীরিক উপকার করে থাকে।
নিয়মিত নামাজ আদায় করলে শরীরের উপর রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন কমাতে পারে, পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে থাকে। তাই নিয়মিত নামাজ আদায় করলে ইহকালীন শান্তি এবং পরকালীন মুক্তি পাওয়া যায়। আবার নামাজ দুনিয়ার সব ধরণের অশ্লীল এবং অন্যায় কাজ থেকে আমাদেরকে বিরত রাখে।
নামাজ না পড়ার শাস্তি
ঈমান আনার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে প্রায় শতবার সালাত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। নামাজ না পড়া পরকালে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। নামাজ না পড়লে আমাদের কেমন শাস্তি হবে তার কিছুটা আমরা অনুমান করতে পারি। হাদিসে এসেছে এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেলে বা না পড়লে এক হুকবা বা দুই কোটি আটাশি লক্ষ বছর জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। আমরা জীবনে কত ওয়াক্ত নামাজ ত্যাগ করেছি তা আমরা নিজেরাই জানি না। তাহলে আমরা একবার চিন্তা করি আমাদের শাস্তি কতটা ভয়ঙ্কর হবে। বেনামাজিদের কিয়ামতের দিন জাহান্নামের গভীর গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করা হবে তোমাদের কোন জিনিস জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। (সুরা-মুদ্দাসসির, আয়াত-৪২-৪৩)
নামাজ না পড়লে মৃত্যুর সাথে সাথেই কবরে আযাব শুরু হবে। নামাজ না পড়লে শুধু পরকালীন শাস্তি নয় ইহকালীন জীবনেও শাস্তির কথা বলা হয়েছে। দুনিয়ার জীবনে নামাজ না পড়ার কারণে ৬ টি আযাব বা শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যথা-
১। জীবনের বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে।
২। চেহারা থেকে নূর ও জ্যোতি উঠিয়ে নেওয়া হবে।
৩। ভালো কাজ করলে তার সুফল ভোগ করতে পারবে না।
৪। দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করবেন না।
৫। মানসিক অস্থির বিরাজ করবে এবং
৬। ইসলামে শান্তি এবং প্রতিশ্রুতি থেকে বঞ্চিত হবে।
শেষ কথা
নামাজ হলো বেহেশতের চাবি। নামাজ ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করতে কেউ পারবে না। নামাজ ছাড়া আমাদের বাঁচার পথ নেই। নামাজ পরিত্যাগকারী কাফেরের সমতুল্য। অতএব, আমাদের প্রত্যেকের উচিত আল্লাহ তায়ালার নিকট তাওবা করা। আল্লাহ পাকের কাছে আমরা যদি ক্ষমা পেতে চাই এবং আখেরাতে শাস্তি থেকে বাঁচতে চাই তাহলে উত্তমরূপে নামায আদায় করা আমাদের প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত গুরুত্বসহকারে জামায়াতে আদায় করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
# মানুষ সৃষ্টির রহস্য কি? মানব জাতি সৃষ্টির ইতিহাস # লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত