নিজেকে কিভাবে পরিবর্তন করবেন? নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়

নিজেকে কিভাবে পরিবর্তন করবেন? নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়

 

মানুষ সারা জীবন একভাবে বাঁচতে পারে না। চাইলে তো হুট করে নিজেকে পরিবর্তন করা যায় না। তার জন্য অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে এবং ধাপে ধাপে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। আবার চাইলে হুট করেই নিজেকে পরিবর্তন করা যায়। নিজেকে ইতিবাচক উপায়ে পরিবর্তন করতে হলে নিজেকে সময় দিতে হবে এবং নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। 

নিজেকে পরিবর্তন করার উপায়

আমাদের জীবন আসলে খুবই ছোট আর এজন্যই জীবন এতোটা গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো কোনো কিছুরই পরিবর্তন হবে না যদি তোমার পরিবর্তন না হয়। কোনো কিছুই সর্বসেরা হবে না যদি তুমি সেরা না হয়। আর এটা কোনো পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে না। এটা কোনো ভাগ্যের উপর নির্ভর করে না। তোমার জীবনে কোনো কিছুর পরিবর্তন হবে না। যদি তুমি পরিবর্তন চাও তাহলে আগে তুমি নিজের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।

নিজের ভূল থেকে শেখার চেষ্টা করুন। নিজেকে আপনি কখনোই ছোট মনে করবেন। কখনোই ভাববেন না যে আমি এই কাজটি পারবো না। একজন মানুষ যদি পারে তাহলে আমি অবশ্যই সেই কাজটি করতে পারবো না। নিজের ভূল থেকে শেখার চেষ্টা করুন। আপনি যেই জিনিসটি পারেন না সেটি অন্যের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করুন। হোক সে আপনার থেকে ছোট কিংবা বড় সবার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করুন। নিজেকে অন্য কারও সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন। আপনি গত কাল বা এক সপ্তাহ বা এক মাস আগে কি ছিলেন তার সাথে নিজেকে তুলনা করতে শুরু করুন। অতীতকে নতুন করে শেখার মাধ্যমে নিজেকে ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত রাখুন। 

বাস্তবমুখী একটা রুটিন তৈরি করুন

একটা গোছালো জীবন পরিচালনা করার জন্য রুটিন মতো চলাফেরা উচিত। তবে সেটা বাস্তবমুখী এবং আদর্শ হওয়া দরকার। আপনার উচিত হবে এমন একটা রুটিন তৈরি করা যেটা আপনাকে বিরক্ত করবে না এবং সেই রুটিনে আপনি পর্যাপ্ত অবসর পান। যদি রুটিন নিজেরই ভালো না লাগে তাহলে সেটি আপনি মেনে চলতে পারবেন না। সব কিছুর একটা রুটিন থাকলে জীবন সুন্দর ও সাবলীল ভাবে গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হবো। তাই বাস্তবমীখী একটা রুটিন থাকা খুবই জরুরী। 

ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন

সকালে ঘুম থেকে ওঠা কতোটা কষ্টকর তা আমরা সবাই জানি। ঘুমের আবেশে জড়িয়ে থাকার আরাম থেকে উঠতে কারোই মন চায় না। ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করার জন্য আপনি অ্যালার্ম ঘড়ি রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই অ্যালার্ম ঘড়িটা শোয়ার বেড থেকে একটু দূরে রাখবেন যাতে সেটা বাজলে উঠে গিয়ে বন্ধ করতে হয়। প্রথম দিকে ভোরে ঘুম থেকে উঠার জন্য নিয়মিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে উঠার চেষ্টা করুন। এর কয়েক দিন পর আবার ১৫ মিনিট এগিয়ে দিন। এভাবে চেষ্টা করলে সেটা সহজেই অভ্যাসে রূপ নেবে। বেশি রাত করে ঘুমালে চেহারায় তার ছাপ পড়ে। আর দ্রুত ঘুমিয়ে সকালে উঠলে চেহারা ও মন দুটোই ভালো থাকে। তাই আমরা সকলেই ভোরে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করবো। 

সময়ের সঠিক ব্যবহার

সময়ের সঠিক ব্যবহার একটি সুন্দর জীবনের জন্য খুবই অপরিহার্য। সময় একটি অমূল্য সম্পদ। তবে সময়ের সঠিক ব্যবহারে দ্রুত সাফল্য লাভ করা যায়। সময় যে কতটা দামী জিনিস তা আপনি বিপদে না পড়লে বুঝতে পারবেন না। চলে যাওয়া সময় কখনো আপনি ফিরে পাবেন না। এক কথায় সময় থেমে থাকেনা। সময় তার নিজস্ব গতিতে চলতেই থাকে। শুধু কাজগুলো থেমে থাকে। যার ফলে আমাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সময়ের সঠিক ব্যবহার না করলে আমাদের কাজ বাড়তেই থাকবে। সময়ের সঠিক ব্যবহার আমরা তখনই শিখব যখন আমরা সময়ের অপব্যবহারের স্বীকার হয়ে থাকি। আপনার জীবনে কত সময় বাকি আছে তার উপর ভিত্তি করে সফলতা নির্ধারণ হয় না বরং সফলতা নির্ধারণ হয় সময়কে কতটা দক্ষতার সাথে ব্যবহার করছেন তার উপর। তাই সময়কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে শিখুন এবং জীবনকে সুন্দর ভাবে সফলতার সাথে উপভোগ করুন। 

অনেক বেশি বেশি বই পড়ুন

বই পড়তে সবাই ভালোবাসে। বই এমন একটি উপকরণ যা একজন মানুষকে সহজেই জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে তুলতে পারে। একমাত্র বইয়ের মধ্যেই রয়েছে সব ধরনের জ্ঞান। প্রত্যেকের জীবনেই নানা রকম সমস্যা থাকে। বই পড়লে সেসব চিন্তা বা সমস্যাগুলো মাথায় থাকে না। আপনি যত বেশি করে বই পড়বেন তত আপনার জ্ঞানের পরিধী বাড়তে থাকবে। আমাদের জানতে হবে বই শুধু আমাদের মেধা বা জ্ঞান বৃদ্ধি করে না বরং বই পড়লে মানুষ হয়ে উঠে কর্মঠ, সহনশীল ও সহমর্মী।

মানুষ বই পড়েই নিজেকে চিনতে এবং জানতে । বই পড়েই আমরা আমাদের জীবনকে আলোকিত করে তুলতে পারি। দেশকে ভালোবাসলে, নিজেকে ভালোবাসলে, জ্ঞানী হতে চাইলে, নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইলে অবশ্যই বই পড়তে হবে।  তাই কিছু ভালো বই সিলেক্ট করে একটা লিস্ট তৈরি করুন যেটা আপনি একটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার পরিকল্পনা করবেন। তবেই আমাদের জীবন হবে সুন্দর। তাই আমরা বইকে অনেক বেশি ভালোবাসি এবং বেশি বেশি বই পড়ি। 

সফল ব্যক্তিদের অনুসরণ

সাধারণ মানুষের মতো সফল ব্যক্তিরা শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে সফলতাকে পরিমাপ করেন না। তাদের কাছে সফলতার সংজ্ঞা ভিন্নরকম। মার্কিন ব্যবসায়ী বাফেটের সফলতার সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছেন-

’আমার সফলতা-ব্যর্থতা নির্ভর করে পরিবারের উপর। ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর।’

আপনার যদি কাউকে অনুসরণ করার কিংবা নকল করার প্রতিভা থাকে তাহলে সেটিকে কাজে লাগাতে পারেন। সফল ব্যক্তিদের সাহায্য নিয়ে বা তাদের কাছ থেকে শিখে আপনার ক্যারিয়ারে তা বাস্তবায়িত করতে পারেন। অন্য কাউকে অনুসরণ করাই কিন্তু সাফল্যের চাবিকাঠি নয়। আপনি এটিকে শুধুমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

কিন্তু আপনি অবশ্যই মনে রাখবেন এ মাধ্যম যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রত্যেক সফল  ব্যক্তিরা তাদের জীবনকে একটি সহজ সরল পথে নিয়ে আসেন। তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। তাই আমাদের উচিত সেই সমস্ত গুণাবলি অর্জন করা এবং আমাদের জীবনে তা বাস্তবায়িত করা। 

FAQS-

# নিজেকে কিভাবে পরিবর্তন করবেন?

=> নিজেকে পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে নিজের ভুল থেকে শেখার চেষ্টা করতে করুন। নিজেকে কখনোই ছোট মনে করবেন না। ছোট-বড় সবার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করুন। আপনাকে নতুন করে শেখার জন্য ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। তাহলে আপনি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন। 

# নিজেকে চেনার উপায় কি?

=> ভাল ও মন্দ এই দুই বিচার করে নিজেকে খুব সহজেই চেনা যায়। নিজেকে চিনতে চাইলে আপনার মন যা যা চায় তাই করুন। আপনি কোথাও না কোথাও নিজেকে বুঝতে শুরু করবেন আপনি কে? আপনি যদি নিজেকে জানতে চান তবে আপনি নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করতে পারবেন না। মাঝরাতে রুমে ভেতরে একা বসে নিজের সাথে কথা বলুন। নিজের ভাবনা দিয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরি করুন তবে চিনে যাবেন আপনি কে?

# জীবনে ভালো কিছু করার উপায় কি?

=> ফেলা আসা সময় কখনোই ফিরে আসে না। অভ্যাসই মানুষের মূল চরিত্র। দৈনন্দিন কাজে ভালো কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন। ভবিষ্যতকে অতীতের সাথে তুলনা না করে তাকে নিজের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে উজ্জ্বল করে সাজিয়ে তোলা আপনার হাতে। তাই অতীতের দিকে না তাকিয়ে ভবিষ্যতকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তার মধ্যে জীবন খুঁজে পাওয়াই শ্রেয়। 

# আপনি নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

=> আমি প্রথমে আপনাকে বলছি নিজেকে নিজের জন্য সময় দিন। কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে আপনার জীবনের লক্ষ্য কি? আপনি উপলব্ধি করবেন আপনার নিজের ক্ষমতাকে। ভালো খারাপ দিকগুলো বিবেচনা করুন। মনে রাখবেন ভালো সব সময়ই ভালো আর খারাপ সব সময়ই খারাপ। তাই নিজেকে মূল্যায়ন করতে শিখুন। নিজের জন্য এবং নিজের স্বপ্নের জন্য প্রতিদিন বিশ-পঁচিশ মিনিট সময় ম্যানেজ করুন। 

শেষ কথা

স্বল্প পরিসরে হলেও শুরু করে দিন কিন্তু কালকে নয় আজ থেকেই নিজেকে পরিবর্তন করা শুরু করে দিন। কেননা যত দেরি করবেন ততই পিছিয়ে পড়বেন। একজন আদর্শ নাগরিক হতে এবং আদর্শ জীবন পেতে হলে অ্যাডজাস্ট করে চলা শিখতে হবে। আমি অ্যাডজাস্ট করে চলা শিখেছি যার ফলে সম্ভব হয়েছে একটি সুন্দর কোয়ালিটি লাইফ পাওয়া। আমি যখন পেরেছে সেক্ষেত্রে আমি বিশ্বাস করি চেষ্টা করলে যে কেউ তা পারবে। এভাবেই আপনি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবেন।

# আপনি কি নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন? নিজের উপর বিশ্বাস রাখো # কিভাবে ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠা যায়? ব্যর্থতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায়

Related posts

Leave a Comment