পেঁয়ারা খাওয়ার উপকারিতা! পেঁয়ারার উপকারিতা কি কি জানলে অবাক হবেন

পেঁয়ারা খাওয়ার উপকারিতা! পেঁয়ারার উপকারিতা কি কি জানলে অবাক হবেন

 

পেঁয়ারা খুবই সুস্বাদু একটি ফল। এই ফলটি পুষ্টির ভান্ডার। পেঁয়ারা একটি মৌসুমি ফল। তবে এখন প্রায় সারা বছরই পেঁয়ারা পাওয়া যায়। পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর এই ফলকে বলা হয় ’সুপার ফুড’। বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ের জন্য এই পেঁয়ারা ভীষণভাবে উপকারী।

পেঁয়ারা কি?

পেঁয়ারার ইংরেজী নাম হলো “Guava”। এটি আকারে ছোট হলে এর ব্যাপকতা বিস্তার লাভ করেছে অনেক। পেঁয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম হলো ”Psidium Guajaval”। পেঁয়ারা মূলত Myrtaceae পরিবারের একটি ফল। স্থানীয়ভাবে কেউ এটিকে ’পিয়ার ‘ আবার কেউ আঞ্চলিক ভাষায় ‘গোয়াম’ বলে থাকে।

পেঁয়ারার পুষ্টিগুণ

পেঁয়ারাতে পাওয়া যায় ভিটামিন-সি। আর ভিটামিন-সি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া যে কোন ইনফেকশন থেকে পেঁয়ারা শরীরকে সুস্থ রাখে। ভিটামিন-এ ৭৯২ আই ইউ থাকে। তদুপরি পেঁয়ারাতে ম্যাঙ্গানিজ, সেলিনিয়াম, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩ ইত্যাদি মূল্যবান খনিজ ও ভিটামিন থাকে। রোগ প্রতিরোধে পেয়ারার অনেক গুণ রয়েছে। পেঁয়ারার বীজে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ পলিআন-সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও আঁশ বিদ্যমান।

পেঁয়ারার উপকারিতা

পেঁয়ারাকে অনেকে বলে থাকেন ‘গরিবের আপেল’। পেঁয়ারার গুণাগুণ আপেলের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। অনেকে পেঁয়ারাকে একটি সাধারণ ফল মনে করে অবহেলা করে খেতে চান না। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান ও ঔষধি গুণাগুণ জানার পর আপনিও ফলটি খেতে উৎসাহিত হবেন।

পেঁয়ারা ডায়াবেটিস কমায়

পেঁয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা শরীরে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আরেকটি গবেষণা অনুসারে, ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত পেঁয়ারা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে। একইসঙ্গে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বশে থাকে, যা হৃদ্‌রোগের জটিলতা কমায়। পেঁয়ারা শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ পেয়ারায় থাকে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন (একধরনের ডায়েটারি ফাইবার)

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

অন্যান্য ফল ও শাকসবজির মতো পেঁয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি  উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। এতে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম থাকে। পেঁয়ারাতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি রয়েছে। এমনকি কমলালেবুর থেকেও ৪ গুণ বেশি ভিটামিন-সি রয়েছে পেঁয়ারাতে। ভিটামিন-সি সর্দি-কাশির সঙ্গে প্রাকৃতিক ভাবে লড়াই করার ক্ষমতা দেয়।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

ওজন কমাতে জুড়ি নেই পেঁয়ারার। প্রোটিন-ভিটামিন এবং ফাইরারের সঙ্গে আপোষ না করে একটি করে পেঁয়ারা খান। যারা ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় আছেন তাদের ডায়েট চার্টে লো কার্বোহাইড্রেট ও লো ক্যালরি হিসেবে ও ফাইবার এর জন্য এটি রাখতে পারেন। ওজন কমাতে লো কার্ব ডায়েট ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ফল শরীরে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও একটি পেয়ারা খেলে অনেক্ষন পেট ভর্তি থাকে। ফলে অন্য খাবার খাওয়ার ইচ্ছে জাগে না।

সর্দি-কাশিতে সাহায্য করে

অন্যান্য ফলের তুলনায় পেঁয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং আয়রণ রয়েছে। পেঁয়ারা আপনাকে সর্দি বা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে প্রমাণিত। সর্দি-কাশি সারাতে কাঁচা পেঁয়ারার রস খুবই উপকারী। এটি শ্বাসতন্ত্র, গলা এবং ফুসফুসকে জীবাণুমুক্ত করে থাকে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও পেঁয়ারা বেশ কার্যকর। এতে থাকা লাইকোপিন, ভিটামিন-সি, কোয়ারসেটিনের মতো অনেক এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা শরীরে থাকা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধ করে। পাশাপাশি প্রোস্ট্রেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মুখরোচক এ ফলটি খেতেই কেবল সুস্বাদু নয়। কাজের দিক থেকেও পেঁয়ারা ডায়াবেটিসসহ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর।

এনার্জি বা শক্তি বাড়ায়

সকালে যদি আপনি পেঁয়ারা খান তাহলে আপনার এনার্জি বা শক্তি খুব দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়। তার ফলে সারাদিন কাজের জন্য ক্লান্তি লাগে না। এছাড়াও আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করেন তাহলে আপনার পেশীতে ব্যথা বা টান লাগতে পারে। নিয়মিত পেঁয়ারা খেলে সেই ব্যথা কমে যায় তার কারণ পেঁয়ারাতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা আপনার পেশীকে শিথিল করে দেয়।

পেঁয়ারা আমাশয়ে উপকারী

শিশুর পুরাতন আমাশয় দূর করতে ১৫ গ্রাম পেঁয়ারার মূল ১৫০ মিলি পানিতে সিদ্ধ করে অর্ধেক পানি অবশিষ্ট থাকলে ৬-৬ মিলি পান করুন। এটি দিনে দুই থেকে তিনবার দিতে হবে। কাঁচা পেঁয়ারা ভুনা করে খাওয়ালে ডায়রিয়াতেও উপকার পাওয়া যায়। পেঁয়ারা পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালি ও সুগঠিত করে তোলে। এটি বিভিন্ন প্রকার সংক্রামক রোগ ও জীবাণুর আক্রমণকে প্রতিহত করে। আমাশয় নিরাময়ে পেঁয়ারা খুবই কার্যকর। পাঁকা পেয়ারা আতিরিক্ত আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

পেঁয়ারা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে

পেঁয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন বি-৩ এবং বি-৬ যেটা ইয়াসিন এবং স্পাইডারক্সিন নামে পরিচিত। যেটি আমাদের ব্রেনের ব্লাড সার্কুলেশন কে ইম্পুভ করে কগনেটিউব সেন্সকের স্টিমুলেটিং করে এবং সেন্ট্রাল নার্ভাসের কে রিলাক্স করে রাখতে সাহায্য করে। তার ফলে আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়।

পেঁয়ারা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

পেঁয়ারায় যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ থাকে তা শরীরে গেলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। পেঁয়ারায় থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। রাতকানা রোগ থেকে বাঁচায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেঁয়ারা রাখা দরকার।

পেঁয়ারা খাওয়ার অপকারিতা

অন্যান্য ফলের মতো পেঁয়ারা খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। অতিরিক্ত মাত্রায় পেঁয়ারা খাওয়ার ফলে অনেক রোগের শিকার হতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেঁয়ারা খাওয়া ভালো, তবে যখন অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয়ে যায় তখন তা ক্ষতিকারক হয়ে যায়। পেঁয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই আজ আমরা পেঁয়ারার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করবো-

পেট খারাপ হতে পারে

পেয়ারার অতিরিক্ত খেলে পেটের রোগও হতে পারে। এটি আপনার পাঁচটি সিস্টেমে খারাপ প্রভাব ফেলে এবং হজম শক্তি দুর্বল হতে শুরু করে।

দাঁতে ব্যথা হতে পারে

অনেক মহিলাকে পাকা পেঁয়ারা বেশি সুস্বাদু মনে হয়। তবে পাঁকা বা আন্ডার রান্না করা পেঁয়ারা খাওয়ার ফলে দাঁত ব্যথা বা অন্য কোনও দাঁতজনিত রোগ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়

গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মহিলাদের এটি বেশি খাওয়া উচিত নয়। এর অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে ফাইবার বাড়ে, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।

পেঁয়ারা পাতা ক্ষতি করে

শুধু পেঁয়ারা নয়, এর পাতাগুলি খাওয়াও ক্ষতিকর। পেঁয়ারা পাতা রক্তাল্পতা, মাথাব্যথা এবং কিডনির সমস্যা তৈরি করতে পারে।

FAQS-

# পেঁয়ারা কি এলার্জি

=>পেয়ারা কি একটি সাধারণ অ্যালার্জেন? না। পেঁয়ারা এবং পেঁয়ারার উপজাত (যেমন পেয়ারা পাতা) থেকে অ্যালার্জি বিরল, কিন্তু রিপোর্ট করা হয়েছে । ল্যাটেক্সে অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিরা পেঁয়ারার প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে।

# পেঁয়ারা খেলে কি ওজন কমে?

=>পেঁয়ারায় রয়েছে অনেকটা ফাইবার। এই ফাইবার কিন্তু বাড়তে দেয় না ওজন। এমনকী এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম। তাই সুগার রোগীদের খেতেও অসুবিধা নেই।

# পেঁয়ারা খাওয়া কি ভালো?

=>পেঁয়ারার বিশেষ পাঁচটি গুণের মধ্যে রয়েছে, এটি ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চোখের জন্য ভালো, পেটের জন্য উপকারী আর ক্যানসার প্রতিরোধী। নিয়মিত পেঁয়ারা খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কারণ পেঁয়ারায় যে আঁশ আছে, তা শরীরে চিনি শোষণ কমাতে পারে।

# পেঁয়ারা কোন কোন উপায়ে খাওয়া যায়?

=>পেঁয়ারার জেলি, জ্যাম এখন বাজারে পাওয়া যায়। তবে তাজা আস্ত পেয়ারা শরীরের জন্য বেশি উপকারি। পেঁয়ারার ভর্তা, আচার করেও খাওয়া হয়।

# কখন পেঁয়ারা খাওয়া উচিত নয়?

=>গর্ভবতী মায়েদের সাবধানে পেঁযারা খাওয়া উচিত। কারণ এটি তাদের পেট খারাপ করতে পারে। প্রচুর পরিমাণে পেঁয়ারা খাওয়া আপনার পেট খারাপ করতে পারে। কারণ এর ভিতরে ফাইবারের পরিমাণ খুব বেশি থাকে।

# পেঁয়ারা খেলে কি গ্যাস হয়?

=>বেশি পেঁয়ারা খেলে পেট ফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। আপনার হজম শক্তি দুর্বল হলে পেঁয়ারা বেশি খাবেন না। এতে ফাইরারের পরিমাণ বেশি থাকে ফলে বেশি পেঁয়ারা খেলে পেট খারাপ করতে পারে।

# কিভাবে পেঁয়ারা সেবন করবেন?

=>ফল হিসেবে পেয়ারা খেতে পারেন। আপনি যদি এটি ঔষধিভাবে ব্যবহার করতে চান তবে এটি আয়ুর্বেদিক ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করুন।

শেষ কথা

আমাদের দেশসহ প্রত্যেক এশিয়ান দেশগুলোতে পেঁয়ারা একটি খুব সাধারণ ও সহজলভ্য ফল। শুধু ফলেই না পেঁয়ারা গাছের পাতায়ও রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। যদিও পেঁয়ারর অপকারিতা থেকে উপকারিতাই বেশি তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন ১টি করে আর না হলে সপ্তাহে অন্তত একটি করে হলেও প্রতিটি মানুষের পেঁয়ারা খাওয়া উচিত।

# কাঁঠাল খেলে কত উপকার জানেন? কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা # আম খেলে কি হয়? আমের পুষ্টিগুণ! আম খাওয়ার উপকারিতা

Related posts

Leave a Comment