কিভাবে ভুঁড়ি কমানো যায়? ভুঁড়ি কমানোর উপায়!

কিভাবে ভুঁড়ি কমানো যায়? ভুঁড়ি কমানোর উপায়!

 

পেটের অতিরিক্ত মেদ বা ভুঁড়ি অনেকের জন্যই একটি অস্বস্তিকর বিষয়। ছোট ছোট অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে আমাদের পেটে মেদ জমে থাকে। অনেকের শরীর ফিটফাট থাকলেও ভুঁড়ি বেশ বেকায়দায় ফেলে। অনেকে আবার অনেক চেষ্টা করেও মেদ কমাতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক খাদ্য গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখলে পেটের মেদ কমানো যায়। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কোন ধরনের খাবার খেলে খিদে ৬০ শতাংশ কমে যায় এবং পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

ভুঁড়ি কমানোর উপায়

সুন্দর-স্বাভাবিক শারীরিক গঠন সবারই চাওয়া। কিন্তু শরীরের মধ্যে অতিরিক্ত মেদ, বিশেষ করে পেটের মধ্যে হলে তা আমাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে ব্যাহত করে। পেটের বাড়তি ভুঁড়ি শুধু আপনার চেহারারই ক্ষতি করে না এটি স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। একবার ভুঁড়ি বাড়তে শুরু করলে তা কমানো মুশকিল হয়ে যায়। ভুঁড়ি কমানোর জন্য প্রয়োজন পড়ে অনেক বেশি প্রচেষ্টার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনি পেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য। নিচে মেদ ভুড়ি কমানোর সহজ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

পরিমিত ঘুম

রাত জেগে পড়াশোনা বা কাজ করলে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। অধিক রাত জেগে যারা কাজ করে তাদের শরীরে বায়োরিদম নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে এরা নিজের অজান্তেই বেশি খাবার খেয়ে থাকে। বায়োরিদম নষ্ট হবার ফলে হরমোন ও ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি পরিবর্তিত হয়। এতে আপনার পেটের মধ্যে মেদ জমে থাকে। যার ফলে আপনার পেটের ভুড়ি বাড়তে থাকে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৬ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।

প্রচুর পানি পান করুন

পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরের প্রচুর পানির প্রয়োজন। আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে পানি। শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্যও প্রয়োজন হয় পানি। কিন্তু আপনি জেনে হয়তো অবাক হবেন পানি আমাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।

ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি হল পর্যাপ্ত পানি পান। নিজেকে আর্দ্র রাখার পাশাপাশি এটা অস্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা কমায়। খাবারের আগে পানি পান অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে ফলে পেটে চর্বি জমা হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা

মন শান্ত না থাকলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকলে শরীরের মেটবলিজম হার কমে যায়। ঘুম ঠিক করে হয় না। দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের যেসব ক্ষতি করে তার মধ্যে একটি হলো আমাদের ওজন বাড়িয়েয় তোলে। গ্রুলারের মতে, দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তাগ্রস্ততার ফলে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায় যা ইনসুলিনের মাত্রাও বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তে সুগারের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।

নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে প্রতিটা বিষয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করুন। কেননা আপনার জন্য কোনটি কল্যাণকর তা তিনিই ভালো জানেন। তাই বই পড়া, হাটাহাটি, জার্নালিং কিংবা শরীরচর্চার অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম

ব্যায়ামের উপকারিতা কম বেশি সবারই জানা আছে। তবে নিয়ম করে ব্যায়াম করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলায় একটি প্রবাদই আছে, “কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না”। মেদ বা ভুঁড়ি কিংবা ওজন কমানোর যাত্রাও ঠিক তেমনই। পেটের মেদ কমাতে চাইলে পেটের ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন একাধিক স্বাস্থ্যবিদ। নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করলে ত্বকনিম্নস্থ চর্বি কমে যায়, অন্যদিকে ডায়েটের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চর্বি কমতে থাকে।

ওজন পরিমাপ করা

ভুঁড়ি কমানোর জন্য ওজন পরিমাপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওজন পরিমাপ করলে আপনি আপনার শরীরের ওজন বাড়ছে না কমছে তা বুঝতে পারবেন। তাই একটি নির্দিষ্ট সময় বিরতির পর নিজের ওজন পরিমাপ করুন। জ্যাকসনের ভাষ্য মতে, প্রতি সম্পাতে আপনার শরীরের মোট ওজনের ৫.১ শতাংশ ওজন কমানো উচিত। এর চেয়ে বেশি ওজন কমে গেলে বুঝতে হবে আপনার পেশী ক্ষয় হচ্ছে। ডায়েট প্রক্রিয়া নষ্ট হচ্ছে। পেটের মেদ কমানো একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার মাত্র। তাই আপনার শরীরের ওজন পরিমাপের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

পেট কমানোর জন্য জীবন যাপনের নিয়ম

নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা শরীরের বাড়তি মেদ জমা বা ভুঁড়ি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পেটের মেদ বা ভুঁড়ি থেকে বাঁচতে কি করা যায়-

পেট কমানোর জন্য জীবন যাপনের বেশ কিছু নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করতে হবে। পেটে মেদ জমতে দেয় না এমন সব খাবার খেতে হবে। যাতে করে আপনার পেটে মেদ জমতে না পারে। সকাল শুরু করুন এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে। এতে শরীরের হজমপ্রক্রিয়া ভালো থাকবে এবং শরীরে মেদ জমার প্রক্রিয়া ধীর হবে।

অতিরিক্ত চিন্তা ও কম উদ্যোগের ফলেও কোমরের চারপাশে বা পেটে মেদ জমতে পারে। একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করে অল্প অল্প করে বারবার খাবার গ্রহণ করুন। সারাদিনের অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার খাবারকে ৫-৬ বারে গ্রহণ করুন। সেখানে তিনবার প্রধান খাবার ও দুই-তিনবার নাশতাজাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। এভাবে জীবন যাপন করলে আপনার পেট কমানো সম্ভব হবে।

FAQS-

# ভুঁড়ি কিভাবে কমানো যায়?

=>আমরা সবাই চাই ভুঁড়ি কমাতে। কিন্তু চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যেই অন্তরটা লুকিয়ে আছে। ভুঁড়ি কমাতে চাইলে আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হালকা গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে এক গ্লাস জল খাওয়ার অভ্যাস করুন। ঘরের মধ্যেই ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। যদি পারেন প্রতিদিন সকালে হাঁটার অভ্যাস করুন। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার যত সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বিভিন্ন তেল জাতীয় খাবার কম খাবেন। বেশি করে ফল, শাক সবজি খেতে হবে।

# মেয়েদের পেট বড় হওয়ার কারণ কি?

=>নারীর ঋতু বন্ধ হয়ে গেলে পেটে মেদ জমে। ইস্ট্রোজেন আর প্রজেস্টেরন হরমোন কমতে থাকে। এদের প্রভাবে তলপেটে মেদ জমতে থাকে। বয়সের জন্য এই মেদ জমলে আর কি করা? তবে অন্য কিছু করে ওজন কমিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন।

# ওজন কমাতে কি খাবো?

=>আপনি ওজন কমানোর জন্য আপনার ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও কিছু জিনিস করতে পারেন।

(ক) প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানিতে লেবু চিপে সেই লেবু পানি পান করুন।

(খ) নিয়মিত শসা খান।

(গ) আপনি নিয়মিত কমপক্ষে দুইটি ব্যায়াম করুন। (সিট আপ ও লেগ রাইজ)।

(ঘ) ভাতের পরিমাণ কমিয়ে সবজি বেশি করে খান।

উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে ভালো ফলাফল পাবেন। (ইনশাআল্লাহ)

# ওজন কমানোর জন্য কি করতে হবে?

=>ওজন কমানোর আপনাকে প্রথমে আপনার খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারপরে ব্যায়াম করতে হবে। যেমন, জোরে হাঁটা, দৌঁড়, সাঁতার। কিন্তু হ্যাঁ বিলাসীতার লোভে এগুলো করতে অনেকেই ব্যর্থ হয়।

# ওজন কমানোর উপায় কি?

=>ওজন কমানোর জন্য আপনি শসা এবং টক দই খেতে পারেন। অথবা ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড খান।

# ওজন কমানোর সবচেয়ে দ্রুত উপায় কি?

=>ব্যায়াম আমাদের শরীরকে যেমন ফিট রাখে, ঠিক তেমনি আমাদের ওজন কমাতেও সাহায্য করে। তাই এক মাসে সাত কেজি বা তার বেশি ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে প্রতিদিন কম করে হলেও দেড় থেকে দুই ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে। এ সময়টুকুর মধ্যে আপনি হাঁটতে পারেন, দৌঁড়াতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানো আদর্শ ব্যায়াম।

শেষ কথা

ওজন কমানোর সর্বোত্তম উপায় হল একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম জীবনধারা তৈরি করা। মনে রাখবেন মেদ ঝরিয়ে ওজন কমানো আপনার পক্ষে কোনো শক্ত কাজ নয়। আপনি চাইলে অনায়াসেই তা করতে পারেন। এর জন্য চাই শুধু ধৈর্য এবং সচেতনতা। আমরা আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি পেটের ভুঁড়ি কমানোর উপায়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন এই পরামর্শগুলো পেটের মেদ কমানোর পাশাপাশি কোমরের মেদ, উরুর মেদ, নিতম্বের মেদ ও মুখের চর্বি কমাতেও সাহায্য করবে।

#কিভাবে মহিলাদের ভুঁড়ি কমানো যায়? মহিলাদের পেটের মেদ কমানোর উপায়! # কিভাবে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারি? পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়!

Related posts

Leave a Comment