ভ্রমণ কেনো প্রয়োজন? একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা! ভ্রমণ নিয়ে স্ট্যাটাস!
ভ্রমণ আনন্দের উৎস। প্রত্যেকেরই ভ্রমণের মোহ আছে। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সাথে তাল মিলাতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আর পরিশ্রম করতে করতে মানুষ যেন হাঁপিয়ে ওঠে। তাই প্রয়োজন হয় একটু বিনোদনের, একটু অবসরের। আর এই বিনোদন খুঁজতেই মানুষ বেরিয়ে পড়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে। অনেক অনেক দূর ভ্রমণ করতে যেতে আমাদের অনেকের প্রবল ইচ্ছা থাকে। কিন্তু নানা অসুবিধার কারণে আমরা অনেক সময় দূরের ভ্রমণে যেতে পারি না। কারণ এমন অনেক মানুষ আছে যাদের সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই।
মানবজীবনে ভ্রমণের গুরুত্ব
ভ্রমণ শিক্ষার একটি বড় অংশ। অতীতকালে কোনো কোনো দেশের মহান মনীষীরা ভ্রমণ করার মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জন করতেন। বর্তমানেও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে ভ্রমণকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কেবলমাত্র ভ্রমণপিপাসুরাই ভ্রমণের মূল্য বোঝেন। কিন্তু যারা ভ্রমণ করেন না তারা এর মর্ম জানেন না। অনেকের হয়তো ভ্রমণের ইচ্ছে থাকে কিন্তু সময় বা সুযোগ কোনোটাই হয়ে উঠে না।
তবে মানবজীবনে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম। ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা অচেনাকে চেনা ও অজানাকে জানার জন্য তারা পৃথিবীর উদ্দেশ্যে ভ্রমণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা লাভের জন্য বেরিয়ে পড়েন। ভ্রমণ করার মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে তাদের আপন করে নেওয়ার মনোবৃত্তি জন্মায়। দীর্ঘদিন সীমিত গন্ডির মধ্যে মানুষেরা আবদ্ধ থাকার ফলে মানুষের মনে সংকীর্ণতার আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
মানবজীবনে ভ্রমণের গুরুত্ব নিয়ে দার্শনিকরা অনেক কথা বলেছেন। তাদের মতে, ভ্রমণে অর্থ ব্যয় হয়, এটা ভুল কথা। বরং ভ্রমণ করলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে। যা থেকে মানুষের অর্থ আরও সঞ্চিত হয়। মনের দিক থেকে ধনী হওয়া যায়। জীবনকে উপভোগ করা যায়। তাই যেকোনো ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আর গুরুত্ব আমাদের সকলের কাছে অপরিসীম।
ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি
কোথাও ভ্রমণের পূর্বে আমাদের ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। সারা বছরই বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত থাকলেও আমরা সাধারণত শীতকাললেই ভ্রমণ করতে বেশি পছন্দ করি। আর ভ্রমণের জন্যও শীতের আবহাওয়াও বেশ উপযোগী। বিনোদন এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য কর্মস্থল থেকে সবাই মিলে শীতে পিকনিক করা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার।
শীতকাল আসলেই পরিবার পরিজন নিয়ে দেশে নাকি বিদেশে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় শুরু হয় নানা পরিকল্পনা। ভ্রমণের আগে ভাল প্রস্তুতির উপর নির্ভর করবে আপনার ভ্রমণ কতটা আনন্দময় হবে। ভ্রমণে যাওয়ার আগে সেই জায়গা সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নিবেন। আপনার প্রয়োজনী সমস্ত কিছু যেমন, টুথপেষ্ট, ব্রাশ, গামছা, ক্যাপ, জুতা ইত্যাদি আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীও জিনিসপত্র ব্যাগে ঢুকে রাখুন।
তবে যেখানেই যান না কেন ব্যাগ ভর্তি জিনিস না নিয়ে দেখেশুনে দরকারি জিনিস নেয়াই উত্তম। একটা ভারি ব্যাগপ্যাক আপনার ভ্রমণ আনন্দ মাটি করে দিতে পারে। তাই ভ্রমণে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
এবারে ভ্রমণের স্থান নির্বাচন
সুন্দর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লাভের জন্য যথাযথ স্থান নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ স্থান সুন্দর এবং শিক্ষনীয় না হলে আপনি টাকা খরচ করেও তেমন লাভ নাই। তবে ভ্রমণের স্থান নির্ভর করে ভ্রমণকারীর মানসিক অবস্থা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, শারীরিক সক্ষমতা এবং পারিবারিক অবস্থার উপর। আমি জীবন থেকে ছুটি নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে ভ্রমণের উদ্দেশে ছুটে যেতে ভালোবাসি।
প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন, সমুদ্র, নদী, পাহাড়-পর্বত, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান আমার অত্যন্ত পছন্দের জায়গা। তবে পরিবারের সাথে ঘুরতে হলে বিশেষ চিন্তা ভাবনা করে তারপর স্থান নির্বাচন করতে হয়। তাই যথা সম্ভব ভালো স্থান নির্বাচন করুন। বাংলাদেশে অনেক অনেক সুন্দর ভালো এবং শিক্ষনীয় পর্যটন স্থান আছে। সেখান থেকে আপনার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে নিন।
লঞ্চ ভ্রমণের গন্তব্য ও যাত্রাপথ
লঞ্চ ভ্রমণের কথা আসলেই মন আনন্দে ভরে উঠে। এবারে লঞ্চ ভ্রমণ হচ্ছে ঢাকা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত। আপনি যদি চাঁদপুর যেতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে সদরঘাট এসে সেখান থেকে লঞ্চের টিকিট ক্রয় করতে হবে। তারপর যথাসময়ে লঞ্চে উঠে যাত্রা দিতে হবে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। আপনি যখন লঞ্চের মধ্যে থাকবেন তখন চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মনমুগ্ধকর করে তুলবে।
তবে আপনি লঞ্চঘাটে ছোট বড় অনেক রকম লঞ্চ দেখতে পাবেন। আপনার সাধ্য অনুযায়ী লঞ্চ নির্বাচন করতে হবে। লঞ্চ থেকে আপনি দেখতে পারবেন নদীর পানির ঢেউ চারিদিকে থৈ থৈ করছে। এই পানির আপনাকে আরো মনমুগ্ধকর করে তুলবে। পানির কল কল ধ্বনি আর ঢেউ পেরিয়ে এক সময় আপনি গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।
ভ্রমণের বর্ণনা
যে শহর বা দেশে যাচ্ছেন সেখানে যাওয়ার আগে সেই জায়গা নিয়ে গুগল করুন। পরিচিত কারো অভিজ্ঞতাও শুনতে পারেন। সেই জায়গার ঐতিহাসিক ভিত্তি, আবহাওয়া, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর্থসামাজিক অবস্থা কিংবা খরচাপাতি সম্পর্কে জানুন। এ জানাশোনা আপনার ভ্রমণকে সহজ করবে। আজ আমরা লঞ্চ ভ্রমণে চাঁদপুর সম্পর্কে জানবো। তাই চলুন বিস্তারিত জেনে নিন-
প্রথমেই ভাবতে পারেন চাঁদপুর যখন যাবো তাহলে সেটি লঞ্চেই কেনো যেতে হবে। আসলে এই ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি হচ্ছে এর যাত্রাপথ। দক্ষিণাঞ্চলের কিছু জেলার মানুষ ছাড়া শহরের খুব বেশি মানুষের আসলে নদীপথে চলাচলের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। আপনার লঞ্চ জার্নি শুরু হবে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে। আস্তে আস্তে ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যা পাশ কাটিয়ে লঞ্চ গিয়ে উঠবে মেঘনায়।
সবচেয়ে মুগ্ধ করবে যে ব্যাপারটা তা হলো প্রতিটি নদীরই নিজ নিজ আলাদা রূপ আছে যেটি হয়তো আগে আপনি কখনো খেয়াল করেন নি। চাঁদপুর গেলে সেটা আরো ভালোভাবে বোঝা যায়। চাঁদপুরে নেমে কিছু ঘন্টা হাতে রেখে একটু ঘুরে নিতে পারেন আশপাশ। দেখার মতো জায়গার অভাব নেই। আর চাঁদপুরে এসে ইলিশ না খেয়ে বাড়ি ফেরার মতো বোকামি করবেন না।
যদিও এখন আসল চাঁদপুরের ইলিশ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। তবে ভাগ্যে থাকলে হয়তো রূপালী ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন। আর চাঁদপুরের সৌন্দর্য্য ইলিশের মোকাম বা বাজারটি বড় স্টেশনের কাছেই। তাই বিকেলের সময়টা নদী মোহনায় কাটিয়ে সন্ধায় চলে যেতে পারেন ইলিশ বাজারে। পছন্দমত রূপালি ইলিশ কিনে সাথে নিয়ে আসার জন্যও আছে সুব্যবস্থা রয়েছে।
চাঁদপুর আসবেন আর নদীর মোহনায় আসবেন না এমন হতেই পারেন। তিন নদীর মোহনায় কাটানো সময়গুলো আপনার স্মৃতিতে অমলিন থাকবে নিশ্চিত ভাবেই। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল চাঁদপুর। প্রতি বছর তিন নদীর মোহনায় ধরা দেয় অসংখ্য ইলিশ। এখানে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম ইলিশের বাজার।
ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজননক্ষেত্র চাঁদপুরকে ডাকা হয় ইলিশের বাড়ি। নদীর পাড়ে একটি ছোট পার্ক রয়েছে। পার্কের মধ্যেই রয়েছে “রক্ত ধারা” নামের মনোমুগ্ধকর একটি ভাস্কর্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই ভাস্কর্যটি নির্মিত। শীতকালে মেঘনার মাঝখানে অনেক চর জাগে। নদীর পাড় থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে সেইসব চরে ঘুরে আসতে পারবেন কিছুক্ষণের জন্য।
কোথায় থাকবেন
ইলিশ খাওয়া কিংবা এক দিনের ভ্রমণে ঢাকা হতে চাঁদপুর দিনে গিয়ে রাতের মধ্যে ফিরে আসা যায়। আর এই দিন রাত্রি ভ্রমণের জন্যই চাঁদপুর বেশ জনপ্রিয়। আমিও চাঁদপুর এক দিনের ভ্রমণে গিয়েছিলাম। তবুও পর্যটকদের রাত্রি যাপনের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে। তন্মেধ্যে হোটেল তাজমহল, হোটেল শ্যামলী, হোটেল জোনাকি বেশ জনপ্রিয়।
শেষ কথা
বাড়ি ফেরার সময় তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। সন্ধ্যাকালীন নৌকাভ্রমণ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এসময় নদীতে ডুবন্ত সূর্যের রং খেলা করে যা দেখতে চমৎকার লাগে। লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বলে শেষ করার মতো নয়। আমরা চাঁদপুর গিয়েছিলাম। সেখানে প্রতিটা সময় যেনো একটা নতুন অভিজ্ঞতা। ছোট বড় লঞ্চ, দূরে বা কাছে কোন ঘাটে গিয়ে নামা এ যেনো অফুরন্ত আনন্দ উপভোগ। চাঁদপুরে আপনি লঞ্চ ভ্রমণে গেলে ইলিশ মাছের রেসিপি পাবেন যা আপনার ভ্রমণের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিবে।
সতর্কতা
চাঁদপুর ভ্রমণ যেহেতু লঞ্চ এর উপর নির্ভর করে তাই লঞ্চের টাইম টেবিল ঠিকভাবে খেয়াল রাখুন। লঞ্চ ছাড়ার সময় সঠিকভাবে জানুন। লঞ্চে উঠার সময় লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। চাঁদপুর ইলিশের শহর তাই এখানে গিয়ে ইলিশ খেয়ে দেখতে ভুলবেন না।
# কিভাবে দিনাজপুর ভ্রমণ করবেন? দিনাজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ। # আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। কিভাবে স্বপ্নের বাংলাদেশের অভ্যুত্থান হয়?