লিচু খেলে শারীরিক কি কি উপকার পাবেন? লিচু খাওয়ার উপকারিতা
লিচু (Litchi) একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। লিচু একটি সবার অতি পরিচিত ফল। আমাদের প্রায় সকলেরই এ ফল বেশ প্রিয়। স্বাদ ও গন্ধের জন্য লিচু অনেকের কাছেই বেশ জনপ্রিয়। এটি বাংলাদেশের রাজশাহী এবং দিনাজপুরে বেশী পরিমাণে উৎপাদিত হয়ে থাকে। হাজার রকম পুষ্টিগুণে ভরপুর এই লিচু আপনাকে অনেক রকম অসুখের হাত থেকে রক্ষা করবে।
লিচুর পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণের দিক থেকে এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি। ক্যালসিয়াম দরকার হয় হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভালো রাখতে। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালরি ৬১, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন ‘সি’ ৩১ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম লিচু বলতে মাঝারি আকারের প্রায় ১০টি লিচুকে বোঝায়। লিচুতে অধিক মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, এবং কপার। এসব মিনারেল হাড়কে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম শুষে নিতে। যার ফলে হাড় শক্ত এবং সুস্থ থাকে।
উপকারিতা
লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু এবং খুবই উপকারি একটি ফল। লিচুর অনেক উপকারিতা রয়েছে। লিচু আমাদের শরীরের হাজারো উপকার করে থাকে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে লিচু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লিচুর মূল উপাদান হলো জলীয় অংশ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট খুব অল্প পরিমাণের লিচুর মধ্যে থাকে। লিচু কম ক্যালরি যুক্ত ফল। তাই লিচু সবাই খেতে পারেন। লিচুর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
কিডনির সমস্যা দূর করে
লিচু খুবই উপকারী একটি ফল যা আমাদের শরীরের কিডনির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। লিচুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি। আর কিডনি ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। তাই আপনি লিচু খেতে পারেন। কারণ লিচুতে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। লিচু ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্বও কমায়। যে কারণে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি কমে।
হার্টের জন্য উপকারী
লিচু হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে অলিগোনল যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। এই নাইট্রিক অক্সাইড আবার রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। এতে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা ভাসকুলার ফাংশন উন্নত করে। হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লিচু খেলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে যায় প্রায় ৫০ শতাংশ। তাই হার্ট ভালো রাখার জন্য নিয়মিত লিচু খেতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে লিচু। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম সেরা উৎস হচ্ছে খাদ্য। অনেক খাবার রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। লিচু তেমন একটি ফল। লিচুতে থাকা ভিটামিন সি, ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তাই গরমের এই সময়ে নিয়মিত লিচু খেলে বাঁচতে পারবেন সর্দি ও সাধারণ ফ্লু থেকে।
লিচু অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম সেরা উৎস হচ্ছে খাদ্য। অনেক খাবার রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। লিচু তেমন একটি ফল। লিচুতে থাকা ভিটামিন-সি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
লিচু চুল ও ত্বকের জন্য ভালো
চুল ও ত্বকের যত্নে যাদের সব সময়ই বাড়তি চিন্তা থাকে তাদের জন্য লিচু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এটি যেহেতু সারা বছর পাওয়া যায় না, তাই এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে লিচু খাওয়া উচিত। ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এটি বেশ উপকারী। লিচু ভিটামিন-ই-এর একটি চমৎকার উৎস, যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে ভূমিকা রাখে। এই ফলে থাকা ভিটামিন-ই রোদে পোড়া ভাব এবং ত্বকের প্রদাহ নিরাময়েও সাহায্য করে। লিচু ত্বকের সানবার্ন দূর করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
হজমশক্তি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
লিচুতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হজমে সহায়তা করে। লিচু ফাইবারের ভালো উৎস হওয়ায় এই ফল হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। লিচুতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তাই হজমশক্তি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নিয়মিত লিচু খান।
লিচু খাওয়ার অপকারিতা
লিচু যেমন মুখরোচক সঙ্গে রয়েছে নানা গুণে সমৃদ্ধ। লিচু আমাদের শরীরের হাজারো উপকার করে থাকে। তবে এই ফলের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই তা নয়। এই ফলে অপকারিতাও রয়েছে। নিচে কয়েকটি অপকারিতা তুলে ধরা হলো-
ভারসাম্যহীনতা
শরীরে লিচুর অপকারিতার প্রথমেই রয়েছে শরীরের ভারসাম্যহীনতা। গবেষকরা শরীরে লিচুর প্রভাব বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। এছাড়া গলাব্যথা, মুখের আলসারের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই ফল রক্তচাপ কমাতে পারে। তবে বিপজ্জনকভাবে রক্তচাপ কমলে ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, ঠান্ডা, বমি বমি ভাব, অগভীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং চরম ক্লান্তি দেখা দেওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
সার্জারি রোগীদের ঝুঁকি
সার্জারির রোগীদের অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার ঝুঁকি। রক্তচাপ এবং রক্তের গ্লুকোজের ওপর সরাসরি প্রভাব থাকাতে যাদের সার্জারির প্রয়োজন তারা সার্জারির পূর্বের দুই সপ্তাহ এবং পরের দুই সপ্তাহ লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীরা এড়িয়ে চলুন
যেসব ব্যক্তি ডায়াবেটিস্ট নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খান, তারা লিচু খাওয়ার সময় কিছুটা সাবধান হওয়াই ভালো। কারণ ওষুধ গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু ওষুধের পাশাপাশি আবার যদি বেশি মাত্রায় লিচু খাওয়া হয় তাহলে বিপদ ঘটতে পারে।
শরীরের ব্যালেন্স নষ্ট করে
অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। লক্ষণ হিসাবে শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘুরানো, বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। লিচুতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড নেই। ফলে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে তা শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট করে।
লিচু খাওয়ার নিয়ম
সকল খাবারের মতই লিচু খাওয়ার সঠিক সময় আছে। লিচু এমন একটি ফল যা খুব বেশী খেলে উপকারের চেয়ে অপকারই হতে পারে বেশী। লিচু দিনে ৭-৮ টি খাওয়া উচিত। খালি পেটে লিচু খাওয়া একদম ঠিক না। কারণ এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। লিচু খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা পর খাওয়া যেতে পারে।
কাঁচা বা আধ পাকা লিচু গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া উচিত নয়। ঠিক কতটি লিচু খেলে এই বিষক্রিয়া হবে, তা এখনো জানা নেই। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, ভরা পেটে বা খাবার গ্রহণের পর একসঙ্গে ৫–৭টি লিচু খাওয়া নিরাপদ। লিচুর খোসা শিশুরা যেন মুখে পুরে না চোষে, সেদিকে খেয়াল করবেন। রাতের বেলা লিচু বা অন্য কোনো ফল খাওয়া ঠিক না। কারণ এতে গ্যাবের সমস্যা হতে পারে।
FAQS-
# খালি পেটে লিচু খাওয়া কি উচিত?
=> খালি পেটে লিচু খাওয়া উচিত নয়। খালি পেটে লিচু খেলে একটি ভয়াবহ পরিনামে ভুগতে হতে পারে। তাই খালি পেটে কখনোই উচিত নয়।
# লিচুর বৈজ্ঞানিক নাম কি?
=> লিচুর বৈজ্ঞানিক নাম হল Litchi chinensis.
# ডায়াবেটিস রোগীদের কি লিচু খাওয়া উচিত?
=> ডাইবেটিসের রোগীদের লিচু খাওয়া উচিত নয়। কারণ লিচু রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম করতে সাহায্য করে। আর ডায়াবেটিসের রোগীরা নিশ্চয়ই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ খান। তাই তাদের লিচু থেকে এড়িয়ে চলাই ভালো।
# লিচু কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
=> অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা লিচু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হাইপোগ্লাইসিন এ এবং MCPG নামক টক্সিন কাঁচা লিচুতে পাওয়া যায়। যে কারণে অতিরিক্ত খেলে জ্বর, বমি ও অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নষ্ট লিচু খেলে শরীরে লাল ব়্যাশ হতে পারে। এই লাল দাগে চুলকানি হওয়াও সাধারণ।
# লিচু খেতে কেমন?
=> লিচু একটি গ্রী্ষ্মকালীন ফল। লিচু খেতে খুবই সুস্বাদু, রসালো এবং মিষ্টি হয়।
শেষ কথা
লিচু একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার। লিচু খেতে সুস্বাদু হলেও ইচ্ছেমত লিচু খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বয়স, শরীর, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিমিতভাবে লিচু বা যেকোনো ফল খেতে হবে। তাই আমাদের সবার উচিত পরিমিতভাবেই লিচু খাওয়া।
# পেঁয়ারা খাওয়ার উপকারিতা! পেঁয়ারার উপকারিতা কি কি জানলে অবাক হবেন # কাঁঠাল খেলে কত উপকার জানেন? কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা