খুশকি কি? শীতকালে খুশকি দূর করার উপায়!

খুশকি কি? শীতকালে খুশকি দূর করার উপায়!

 

সাধারণত নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-যুবক সবাই মাথার চুলের যে সমস্যাটিতে ভোগে থাকেন তাহলে খুশকি সমস্যা। শীতকালে চুলে খুশকি দেখা দিলেও সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের কারণে বছরের এই সময়ে অনেকের চুলে খুশকি দেখা দেয়। খুশকি একটা বিরাট সমস্যা। তবে আগে শুধু শীতকালের শুষ্ক আবাহাওয়ার কারণে খুশকি সমস্যা দেখা দিত। কিন্তু বর্তমানে অতিরিক্ত দুষণের কারণে মোটামুটি সারা বছরেই খুশকি সমস্যা লেগেই থাকে। আর যাদের খুশকি সমস্যা অন্যান্য সময়ে থাকে না শীতকালে তাদেরও খুশকি সমস্যা হতে দেখা যায়। বর্তমানে বাজারে খুশকি দূর করার নানান শ্যাম্পু রয়েছে। এই শ্যাম্পু ব্যবহার করা ছাড়াও ঘরোয়া কিছু উপায়ে খুশকি দূর করা সম্ভব।

খুশকি কি?

খুশকিকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয়ে থাকে সেবোরিয়া। এটি আমাদের মাথার ত্বককে দুর্বল করে দেয়। এটি আসলে মৃত ত্বক যা অনুপযুক্ত চিরুনি, স্ট্রেস এবং শুষ্ক ত্বক এর কারণে ঘটে থাকে। শীতকালে এই সমস্যা অনেক বেশি হয়ে থাকে। এতে চর্মরেণু মাথার ত্বক থেকে আঁশের মত উঠে আসে এবং ঝরে পড়ে। এই খুশকি আমাদের জীবনে আত্ম-সম্মান এমনকি সামাজিক সমস্যাও তৈরী করতে পারে।

খুশকির কারণ

মাথার খুলির ত্বকে এক ধরণের ফাঙ্গাস বা জীবাণুর সংক্রমণ হয়। ম্যালাসেজিয়া নামক একটি ছত্রাক যখন আপনার মাথার ত্বকে বাড়তে শুরু করে তখন খুশকি চুলের গোড়ায় বাসা বাঁধে। খুশকির সময় ম্যালাসেজিয়া তার স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায়। ফলে এটি মাথার ত্বকের ক্ষতি করে থাকে এবং গুরুতর শুষ্কতার সৃষ্টি করে। অনেকে আবার জেনেটিক সূত্রে খুশকির ঝুঁকিতে ভুগে থাকেন। খুশকির কারণে মাথায় চুলকানি ছাড়াও আপনার নিয়মিত চুল পড়তে পারে।

শীতকালে খুশকি দূর করার উপায়

খুশকি সমস্যায় কখনোই ভুগেননি এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। কারণ এটি খুবই একটি সাধারণ সমস্যা। খুশকিকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় স্যাবোরিক ডার্মাটাইটিস। এটি সাধারণত মাথার ত্বকে হয়ে থাকে। এছাড়াও খুশকি শরীরের কিছু জায়গায় হয়ে থাকে। যেমন, নাকের দুইপাশে, মুখে, বুকে, আইব্রোতে হতে পারে। খুশকি সমস্যা থেকে বাঁচতে আমরা নানা রকম উপাদান ব্যবহার করে থাকি। এসবের কোনোটা আমাদের উপকার করে থাকে আবার কোনোটা আমাদের চুলের বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দেয়। ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করেও খুশকি সমস্যার সমাধান করা যায়। তাই আসুন জেনে নেই চিকিৎসা ছাড়াই খুশকির সমস্যা সমাধান করার উপায়।

১। খুশকি দূর করতে নিমের ব্যবহার

চুলের যত্নে নিমের কার্যকারিতা অনেক। নিম একটি ঔষধি গাছ। এর ডাল, পাতা, রস সবকিছুই কাজে লাগে। নিম একটি বহুবর্ষজীবী এবং চিরহরিৎ বৃক্ষ। নিমের মধ্যে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা খুশকি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া খুশকি গোড়া থেকে নির্মূল করে। তাই নিম ব্যবহার করে সহজেই খুশকি দূর করা সম্ভব।

২। মেথির ব্যবহার

খুশকি দূর করতে মেথি খুবই উপকারী। মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সকাল বেলা ভাল করে ছেঁকে নিয়ে বেটে নিন। ছেঁকে নেয়া পানি ফেলে দেবেন না। এবার বেটে নেওয়া মেথি ভাল করে চুলের গোঁড়ায় এবং মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। ঘন্টা খানেক পর চুল ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার পর মেথি ভিজিয়ে রাখা পানি দিয়ে চুল আবার ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দু-তিন বার মেথি ব্যবহার করলে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যাবে। তাই আপনার মাথার খুশকি থাকলে মেথি ব্যবহার করতে পারেন।

৩। চুলে তেল দিন

হালকা গরম তেল দিয়ে চুল ও মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন। এটি খুশকি প্রতিরোধ করতে কাজ করবে। এটি শুষ্ক এবং তৈলাক্ত দুই ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী। সামান্য পরিমাণ নারকেল তেল গরম করুন। এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা টি-ট্রি ওয়েল যোগ করতে পারেন। পাঁচ থেকে সাত মিনিট এই তেল দিয়ে মাথা ম্যাসাজ করুন। তারপর এক ঘন্টা চুলে রেখে দিন। এরপর ভালো করে একটি শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই-তিন দিন এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।

৪। লেবুর খোসার ব্যবহার

খুশকি দূর করতে লেবুর খোসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। লেবুর খোসা দিয়ে খুব সহজে দূর করতে পারেন খুশকির সমস্যা। ৪-৫ কাপ পানিতে ৪-৫ টি লেবুর খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ২০ মিনিট ধরে ফোটান। ঠান্ডা হলে মাথার ত্বকে এই মিশ্রণটি খুব ভালো করে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে। তাই আপনি খুশকি দূর করতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

৫। পেঁয়াজের রসের ব্যবহার

খুশকি দূর করার অন্যতম উপাদান হচ্ছে পেঁয়াজের রস। পেঁয়াজের রস খুব দ্রুত খুশকি দূর করতে পারে। পেঁয়াজ মিহি করে বেটে নিয়ে রস ছেঁকে নিন। পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ভালো করে ঘষে লাগান। ২৫-৩০ মিনিট রেখে চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন। পেঁয়াজের রস মাথায় মাখলে খুশকি সমস্যা দ্রুত উপকার পাওয়া যায় এবং এতে মাথা চুলকানোও কমে যাবে।

খুশকি প্রতিরোধে করণীয়

গ্রীষ্মের ঋতুতে সরাসরি সূর্যের রশ্মি থেকে আপনার চুলকে রক্ষা করার চেষ্টা করুন। কারণ সূর্যের তাপের কারণে ঘাম হয় এবং ঘাম থেকে চুলকে আঠালো করে তোলে। তাই ভালো হয় যখনই আপনি রোদে যাবেন বা বাইরে যাবেন তখনই স্কার্ফ দিয়ে চুলকে ঢেকে রাখুন। আবার খুশকি প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার খাদ্য তালিকা সঠিক রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে মানসিকভাবে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, আপনার জীবন-যাপন প্রণালির মধ্যেই লুকিয়ে আছে সুস্থ থাকার সব উপাদান। আর সুস্থ জীবন-যাপনই আপনাকে খুশকি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

FAQS- 

# খুশকি কি সংক্রামক?

=> খুশকি মোটেও সংক্রামক নয়! খুশকি মহামারীর মতো একটি সমস্যা নয়। আপনি কাউকে খুশকি দিতে পারেন না। আবার আপনার কোনো বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে আপনি খুশকি পেতে পারেন না।

# শীত কি সত্যিই প্রধান খুশকির ঋতু?

=> সারা বছর খুশকির সমস্যা থাকলেও কিছু অজানা কারণে শীতকালে তা অনেক বেড়ে যায়। আসলে ঠান্ডা আবহাওয়া আপনার মাথার ত্বকের আর্দ্রতা সরিয়ে দেয়। ফলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং ডাস্ট এটিতে বসতে শুরু করে।

# খুশকি কি শুধু প্রাপ্ত-বয়স্কদেরই হয়?

> খুশকি শুধু প্রাপ্ত-বয়স্কদের ক্ষেত্রেই নয়। নবজাতকের পাশাপাশি বড় শিশুদেরও হতে পারে। সাধারণত নবজাতক শিশুদের মাথায় খুশকি থাকে।

শেষকথা

খুশকি একটা বিরাট সমস্যা। তাই খুশকি প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত চুলের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের চুল এবং মাথার ত্বককে খুশকি থেকে রক্ষা করতে সঠিকভাবে চিকিৎসা এবং নিয়মিত চিরুনি ও শ্যাম্পু করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঘরে বসে আমরা চুলের যত্ন নিতে পারি এবং চুলকে ও মাথার ত্বককে খুশকি থেকে মুক্ত করতে পারি।

# অ্যালার্জি  কি? অ্যালার্জি  থেকে মুক্তির উপায় # ব্রণ কেনো হয়? দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায় সমূহ

Related posts

Leave a Comment