স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায়

স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায়

 

খাবার থেকে আমরা পুষ্টি পাই। বিভিন্ন খাবারের পুষ্টি আমাদের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য উপকারী। ক্ষুধা পেলে মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে। খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেহের পুষ্টি সাধিত হয় এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তাই সুস্থ্য জীবনের জন্য মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে মানুষের বিশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাসের কারণে অচিরেই ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যকর খাবার

সুস্থ্, সুখী ও সরল জীবনের জন্য প্রয়োজন শারীরিক সুস্থ্তা। শারীরিক সুস্থতা অর্জনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলে প্রতিটি মানুষই সফল ও সুখী হতে পারে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাত্যহিক জীবনে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে জীবন সহজ, সুন্দর, গতিশীল, সফল ও আকর্ষণীয় হয়। যারা নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করেন না তারা বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাই নিয়মতান্ত্রিক জীবন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ের জন্য অনেকাংশে সহায়তা করে থাকে। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার আপনাকে মানসিক উন্নতির পাশাপাশি বিষন্নতাকে দূরে রেখে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে পারে। আপনি যদি সারাদিনই ব্যস্ত থাকেন তাহলে প্রতিদিন কী কী খাবার খাওয়া উচিত জেনে নিন।

শস্যদানাযুক্ত খাবার

কিছু শস্যদানাযুক্ত খাবার রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবেই উপকারী। শস্যদানাযুক্ত খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি এবং আঁশ। এ ধরনের খাবার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। শস্যদানাযুক্ত খাবারে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস রয়েছে যা হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার এবং স্থুলতার জন্য বেশ উপকারী।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

সারাদিন হাইড্রেটেড থাকলে শক্তির মাত্রা বজায় থাকে। বেশি পানি খেলে আপনার শরীরকে টক্সিন মুক্ত করে এবং আপনার জয়েন্টগুলোকে লুব্রিকেট করতে সাহায্য করবে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদিন প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। কর্মব্যস্ত মানুষ শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে পুষ্টি পেতে পারে না। মানবদেহের ৬০-৭০ শতাংশ হলো পানি। যার ফলে শরীরের অভ্যন্তরের প্রতিটি ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা আবশ্যক। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির ঘাটতি দেখা দিলে কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরানো, ক্লান্তিভাব সহ নানান উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। তাই পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার বিকল্প নেই।

মিষ্টি আলু

দেশি খাবার মিষ্টি আলুর গুণাগুণ অনেকেই হয়তো জানেন না। মিষ্টি আলুতে থাকে নির্দিষ্ট মাত্রার ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি-৬। এটা বিটা ক্যারটিনের ভালো উৎস যা মূলত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন-এ পরিপূর্ণ। বয়স বাড়তে থাকলে চোখ ও ত্বকের অনেক সমস্যা বাড়ে যা কমাতে সাহায্য করে। একটি মিষ্টি আলু থেকে ব্রকলির সমান ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। আবার এটি পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস হওয়ায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রেখে হার্টের কাজ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমায়।

বাদাম

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বাদাম খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ই, ফাইবার, ভিটামিন-সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডসহ আরও অনেক কিছু রয়েছে যা নানাভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। পেস্তা, কাঠ, কাজু, চিনা যেকোনো ধরনের বাদামেই অ্যান্টি-এজিং ক্ষমতা থাকে। বয়স বাড়াজনিত অসুখ যেমন হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, মস্তিষ্কের সমস্যা এবং কিছু কিছু ক্যানসারের সম্ভাবনাও কমায় বাদাম।

মাছ

প্রত্যেক বয়সের জন্যই মাছ একটি আদর্শ খাবার। মাছ শরীরের প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অন্য মাছের সঙ্গে রাখতে হবে সামুদ্রিক মাছ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সপ্তাহে দুই দিন অবশ্যই এ ধরনের মাছ খাওয়া উচিত। সামুদ্রিক মাছে থাকে ওমেগা-থ্রি যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাছাড়া মাছে ভিটামিন-এ এবং ডি পাওয়া যায়। নিয়মিত মাছ খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, চোখের অসুখ, হাত-পা ব্যথা, শরীরের দুর্বলতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

শরীরের কোন অঙ্গের জন্য কোন খাবার

শরীরের কোন অঙ্গের জন্য কোন খাবার জরুরি? এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য বিভিন্ন খাবার রয়েছে। এসব খাবার আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের বিভিন্ন কাজ করে থাকে।

১। গাজর

গাজর অত্যন্ত পরিচিত একটি সবজি। এই গাজর আমাদের চোখের জন্য ভালো। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বেটা কেরোটিন। সূর্য থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং আপনার ছানি এবং চোখের অন্যান্য সমস্যার সম্ভাবনা কমায়।

২। আদা

আদা একটি দারুণ উপকারী মসলা। এটি কাঁচাও খাওয়া হয় এবং শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আদার মধ্যে রয়েছে প্রদাহরোধী উপাদান। গ্যাস, অম্বল, পেট ফাঁপার মতো সমস্যা প্রতিরোধ করতে দারুণ উপকারী আদা। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে আদা খেলে উপকার পাবেন।

৩। আঙ্গুর

ভিটামিন-সিতে ভরপুর আঙ্গুরের রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। আঙুর ফুসফুস থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। পাঁচ থেকে সাত দিন আঙ্গুরের জুস খেলে ফুসফুস পরিষ্কার হয়। এছাড়াও আঙ্গুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আঙ্গুরের বীজ ও খোসায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা বার্ধক্য রোধে কাজ করে।

FAQS-

# স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কি?

=>আমাদের শরীরের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধিতে প্রোটিন এবং মেরামত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। যারা সারাদিন ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন কুমড়ো, সূর্যমুখী বীজ, বাদাম, ফল, কম চিনি, ভাজা ছোলা খাওয়া উচিত। এগুলো প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।

# স্বাস্থ্যকর খাবার কাকে বলে?

=>স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বলতে সেই ধরনের খাদ্যাভ্যাসকে বোঝায় যা সামগ্রিকভাবে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বা স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যকর খাবারে দেহে অত্যাবশ্যক পুষ্টি যেমন সামদ্রিক খাবার, চর্বিহীন মাংশ, হাঁস-মুরগি, ডিম, শিম, বাদাম এবং বীজের মতো বিভিন্ন ধরণের প্রোটিন খাবার অন্তর্ভুক্ত করে।

# সবচেয়ে সুস্থ্য মানুষ কি খায়?

=>বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর লোকেরা প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খায় তবে প্রক্রিয়াজাত খাবার হিসাবে নয়। যদিও আমরা সাদা রুটি, বিস্কুট এবং চিনিযুক্ত সিরিয়াল খাওয়ার দিকে ঝুঁকছি। তারা প্রচুর ফাইবার,  প্রোটিন সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট, শিম, এবং মসুর ডালের মতো লেবু খায়।

# কোন কোন খাবার প্রতিদিন খাওয়া উচিত?

=>প্রতিদিন প্রচুর ফল ও সবজি খান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের খাবারের ৫ ভাগ খাবার খেতে হবে ফল ও সবজি। সকালের নাস্তায় খেতে পারেন কলা বা মিড মর্নিংয়ে তাজা ফল।

শেষ কথা

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি করার শক্তি আপনার রয়েছে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং সক্রিয় জীবন যাপন আপনাকে ওজন কমাতে, চাপমুক্ত রাখতে, এনার্জি দিতে এবং আপনার সন্তানদের জন্য একটি ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সাহায্য করতে পারে। স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি হিসেবে খাবার সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। ভ্রান্ত ধারণা বাদ দিয়ে চলা জরুরি। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

# অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়? দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা # লেবুর উপকারিতা কি? লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

Related posts

One Thought to “স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায়”

Leave a Comment