অ্যালার্জি কি? অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায়
আমরা অ্যালার্জির কারণে ভুগে থাকি অনেকেই। অ্যালার্জির যন্ত্রণা যে কতোটুকু তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। আমরা অ্যালার্জি দূর করতে নানারকম প্রচেষ্টা করে থাকি অনেকেই। সুস্বাদু সব খাবার সামনে রেখেও আমরা খেতে পারি না শুধু অ্যালার্জির ভয়ে। যার কারণে ভুগতে হয় পুষ্টিহীনতায়। এটি দূর করা তবুও যেন সম্ভব হয় না। অ্যালার্জি থেকে চিরতবে মুক্তির পথ আমরা সবাই খুঁজে থাকি। কিন্তু এটি থেকে নিরাপদে থাকার উপায় আমরা ক’জনেই বা জানি।
অ্যালার্জি জনিত কারণে শরীরে চুলকানি এবং একটা পর্যায়ে গিয়ে ফোস্কা পর্যন্ত হতে পারে। চিকিৎসকরা এই রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ক্রিম, লোশন বা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ঠান্ডা কম লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকে। আপনারা যারা অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায় জানতে চান তাদের জন্যই আজকের এই পোষ্টটি। অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে সকল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে । তাই আজকের এই পোষ্টটি থেকে দেখে নিন অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে।
অ্যালার্জি কি?
আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ত্রুটি হল অ্যালার্জি। বহিরাগত কোন বস্তুর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার একটি প্রতিক্রিয়া হল অ্যালার্জি। অন্যান্য মানুষের পক্ষে সেই বহিরাগত বস্তুটি কিন্তু ক্ষতিকর নয়। স্বাস্থ্যবান মানুষের পক্ষে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জীবাণুর আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কোন কারণে এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ব্যাঘাত ঘটলে অ্যালার্জি দেখা দেয়। শরীরে অ্যালার্জির উপস্থিতি ঘটলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন:
১। চুলকানি হওয়া।
২। লালভাব দৃশ্যমান হওয়া।
৩। শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফোলা।
৪। হাঁচি হওয়া।
৫। নাক, চোখ বা মুখে চুলকানি।
৬। সর্দি বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৭। ত্বকে র্যাশ হওয়া।
৮। ত্বকে শুষ্কতা দেখা দেওয়া।
উপরের লক্ষণগুলো ছাড়াও অ্যালার্জি হাঁচি থেকে শুরু করে খাদ্য বা ঔষুধের উপর ভীষণ প্রতিক্রিয়া এমনকি শ্বাসকষ্ট ও হতে পারে। শরীরের অ্যালার্জি খুবই সামান্য অসুবিধা সৃষ্টি করে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।
অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায়
অ্যালার্জি থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যে বস্তুতে অ্যালার্জি রয়েছে তার সংস্বর্শ এড়িয়ে চলা। যেমন: যার ডিটারজেন্ট বা সাবানে অ্যালার্জি তিনি বাসনকোসন, কাপড়চোপড় ধোয়ার সময় বা পরিষ্কার করার সময় হাতে গ্লাভস পড়বেন। যার অলংকারে অ্যালার্জি তিনি তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। রোগীর যেসব বস্তুতে অ্যালার্জি সেগুলোর একটি তালিকা করতে পারেন। এছাড়াও স্কিন টেস্ট করে এটা বোঝা যায়। কোনো ঔষুধে আপনার অ্যালার্জি থাকলে তার নাম লিখে রাখবেন এবং চিকিৎসককে অবহিত করবেন।
ত্বকে প্রদাহ বা অ্যালার্জি হয়ে গেলে তা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন, স্টেরয়েড মলম, ক্যালামিন লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। হঠাৎ লাল হয়ে চুলকানির ক্ষেত্রে ঠান্ডা সেঁক বা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে আরাম পাওয়া যায়। এই সময়ে বাতাস চলাচল করে এমন পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করুন। প্রসাধনসামগ্রীতে অ্যালার্জি থাকলে রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনসামগ্রীর ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে।
এলার্জি থেকে চিরতরে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
এক কেজি নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকনো নিম পাতা পাটায় পিষে গুঁড়ো করুন এবং তা ভালো করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি কৌটায় ভরে রাখুন। এক চা চামচের তিন ভাগের এক ভাগ নিমপাতার গুঁড়া এবং এক চা চামচ ইসবগুলের ভুষি এক গ্লাস পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। আঘা ঘন্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে খেয়ে ফেলুন। এর কার্যকারিতা শুরু হতে প্রায় এক মাস সময় লেগে যেতে পারে। তবে নিয়মিত খেলে অবশ্যই এর ফলাফল পাবেন। এরপর থেকে এই অ্যালার্জির জন্য যা যা খেতে পারতেন না। যেমন: হাঁসের ডিম, বেগুন, গরুর গোশত, চিংড়ি মাছ, কচু শাক, গরুর দুধ, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য অ্যালার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন তা সবই খান আর সমস্যা হবে না। (ইনশাআল্লাহ্)
অ্যালার্জি প্রতিরোধে প্রাকৃতিক উপায়
১। লেবু: লেবু ভিটামিন-সি তে ভরপুর। তাই যেকোনো চুলকানি খুব সহজেই দূর করে দেয়। লেবুর ভোলাটাইল তেল শরীরের যেকোনো রকমের চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। লেবু ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিয়ে চুলকানির স্থানে কিছুক্ষণ ঘষুন দেখবেন চুলকানি কমে যাবে।
২। তুলসী পাতা: কর্পূর সমৃদ্ধ তুলসী পাতা যেকোনো ধরণের জ্বালা পোড়া ও চুলকানি কমাতে সহায়তা করে থাকে। কয়েকটি তুলসী পাতা নিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর যেখানে চুলকানি হয়ে সেখানে পাতাগুলো কিছুক্ষণ ঘষুন। অথবা কিছু তুলসী পাতা পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানি বরফ করুন এবং চুলকানি স্থানে ঘষুন।
৩। অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতা এবং এটি আমাদের ত্বকের জন্য খুব ভালো। শরীরের যেকোনো জায়গায় চুলকানি হলে অ্যালোভেরা কেটে এক টুকরা সেখানে ঘষুন চুলকানি কমে যাবে।
FAQS-
অ্যালার্জি কি?
# অতিপ্রতিক্রিয়া বা ইংরেজি পরিভাষায় অ্যালার্জি বলতে পরিবেশে অবস্থিত কতগুলি বস্তুর উপস্থিতিতে কিছু কিছু ব্যক্তির দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতার কারণে সৃষ্ট কতগুলি তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বুঝায়। এই বস্তুগুলি অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
অ্যালার্জি কেনো হয়?
# প্রত্যেক মানুষের শরীরে একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম থাকে। কোনো কারণে এই ইমিউন সিস্টেমে গোলযোগ দেখা দিলে তখনই অ্যালার্জির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আমাদের শরীর সবসময়ই ক্ষতিকর বস্তুকে প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে।
কিভাবে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
# ত্বকে প্রদাহ বা অ্যালার্জি হয়ে গেলে তা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন, স্টেরয়েড মলম, ক্যালামিন লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। হঠাৎ লাল হয়ে চুলকানির ক্ষেত্রে ঠান্ডা সেঁক বা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে খানিকটা আরাম পাওয়া যায়। এই সময় বাতাস চলাচল করে এমন পাতলা সুতি কাপড় পরুন।
শেষ কথা
আশা করি আজকের এই পোষ্ট এর মাধ্যমে অ্যালার্জি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদিও আমরা এখানে অ্যালার্জির ঘরোয়া প্রতিকার কার্যকর হতে পারে এমন কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আপনার যদি অ্যালার্জির মাত্রা অনেক বেশি বা দীর্ঘদিন হয়ে থাকলে আপনি খুব শিঘ্রই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সহায়তা নিন। আপনার এবং আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে ভাল কি তা নিয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করুন।
# স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায় # অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়? দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা