কিভাবে এবং কেন খাবেন থানকুনি পাতা? থানকুনি পাতার উপকারিতা!
থানকুনি পাতা অতি পরিচিত একটি নাম। সাধারণত এটি পুকুর পাড়ে বা জলাশয়ে এটি দেখা যায়। থানকুনি পাতা আমাদের দেশে থুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পূর্ণ একটি উদ্ভিদ। এর ল্যাটিন নাম centella asiatica. গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে।
মহামারির এই সময়ে আমাদের প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশি নজরদারি করা উচিত। সুস্থ্য থাকার জন্য আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসার উপর পুরোপুরি নির্ভর না হয়ে চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক উপায় বেছে নিতে। যত্ন নিয়ে চাষ করতে হয় না। অনেকটা অনাদরেই বেড়ে উঠে এই থানকুনি পাতা। কিন্তু এর উপকারিতা বেশ দামী। এখন অবশ্য চাষও হচ্ছে অনেক জায়গায়। তেতো স্বাদের এই পাতা আমাদের শরীরে অসখ্য উপকার বয়ে আনে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
শুধু রান্না করে খাওয়ার জন্য নয় থানকুনি পাতা আরও অনেক ভূমিকা আছে। বিশেষ করে এই পাতার বহু ধরনের ভেষজ গুণ রয়েছে।থানকুনি পাতা চাষে খুব যত্নের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু থানকুনি পাতা থেকে প্রাপ্ত উপকারিতা অনেক। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করে তাহলে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। তেতো স্বাদের এই পাতা আমাদের শরীরের জন্য অসংখ্য উপকার বয়ে আনে।মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এই পাতা বাটা খুবই উপকারী। অনেক উপকারি এই থানকুনি পাতার উপকারিতাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়
থানকুনি পাতা মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে উপকারী। থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। থানকুনি পাতা নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পেনটাসাইক্লিক টিটারপেন্স নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এতে মস্তিষ্কের সেলের ক্ষমতা বেড়ে স্মৃতিশক্তি উন্নতি ঘটে। এছাড়া এতে প্রচুর ফলিক অ্যাসিড বিদ্যমান। এতে অ্যালজাইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
থানকুনি পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে থাকে। আপনাদের যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি যদি খাবারের তালিকায় থানকুনি পাতা রাখেন তরে আর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে আর হবে না।
হজমের সমস্যা
থানকুনি পাতা হজমের সমস্যা দূর করে। আপনার কি হজমে সমস্যা হচ্ছে? তাজা থানকুনি পাতা এক চিমটি লবণ দিয়ে সেদ্ধ করুন। এটি নিয়মিত পান করুন। কারণ হজমশক্তি ভালো করার জন্য এবং সুস্থ থাকার জন্য থানকুনি পাতার এই পানীয় ভীষণ উপকারী।
ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি পায়
শুধু পেটই নয় আলসার, অ্যাজমাসহ নানা ধরণের চর্মরোগ সারাতে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী। এতে ত্বকের সজীবতা বাড়ে। প্রতিদিন থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে বড় বড় রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমায় থানকুনি পাতা। কারণ এতে এমন কিছু উপাদান আছে যা সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমতে শুরু করে এবং ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি পায়।
গ্যাসট্রিকের সমস্যা কমে
গ্যাসের সমস্যায় থানকুনি পাতার ঘরোয়া চিকৎসা ভীষণ কাজের। আধ লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিছরি এবং অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তা রোজ সকালে অল্প করে খেলে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যাবে।
অনিদ্রা দূরীকরণে
রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে থানকুনি পাতা খেতে পারেন। থানকুনি পাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় এটি মানসিক চাপ কমায়। সেই সঙ্গে নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখে। ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা কমে যায়। এছাড়া বয়স বাড়লেও ত্বকে তারুণ্যতা ধরে রাখতে সাহায্য করে থানকুনি পাতার রস। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে ৫-৬ চা-চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে চেহারায় লাবণ্য চলে আসে।
থানকুনি ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি পাতার মধ্যে রয়েছে ঔষুধি সব গুণ। থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয়। খাদ্য উপায়ে এর সরাসরি গ্রহণ রোগ নিরাময়ে থানকুনি যথার্থ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি নিয়মিত থা]নকুনি পাতা খাওয়া শুরু করে তাহলে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে।
থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম
থানকুনি পাতা শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য খুবই উপকারী। থানকুনি পাতা জ্বর থেকে শুরু করে পেট ব্যথা, চুল পড়াসহ বিভিন্ন রোগের সমাধান করে থাকে। থানকুনি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মহা ঔষধিগুণাবলি। পাতা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম জেনে নেই-
# প্রতিদিন একগ্লাস দুধে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য চলে আসে। আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
# সকাল-সকাল খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেলে যেমন উপকার মেলে, তেমনই কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
# থানকুনি পাতা ছোট ছোট করে কেটে পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
# ভর্তা হিসেবে ভাত দিয়ে খাওয়া যায়। গরম ভাতের সাথে থানকুনি পাতার ভর্তা পেট ব্যথার জন্য বেশ উপকারী।
# থানকুনি পাতা ইচ্ছে হলে খেতে পারেন পেস্ট অথবা বড়া বানিয়ে।
FAQS-
# থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম কি?
=>থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Centella Asiatica. থানকুনি পাতা আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ত্বক এবং চুলের যত্নে থানকুনি পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
# থানকুনি পাতা কি হার্টের জন্য উপকারী?
=>থানকুনি পাতা শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে। এছাড়াও অনেকের দেহেই অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত শুদ্ধ থাকে। ফলে শরীরের প্রতি কোষে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। ফলে হার্ট এবং শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো থাকে।
# ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতা কতটা উপকারী?
=>থানকুনি পাতা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ক্ষত দূর করতে অনেক উপকারী। থানকুনির ম্যাডেকাসসাইড ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করে, ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা ও প্রশান্ত করে। এতে ত্বকে সতেজ ভাব ফুটে ওঠে।
শেষ কথা
থানকুনি পাতাকে আমরা যত্ন না করলেও এই পাতার উদ্ভিদ নিজে বেড়ে উঠে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। ভেষজ চিকিৎসায় অনেক আগে থেকেই থানকুনি পাতা ব্যবহার করা হয়। মানুষ এই পাতাকে অবহেলা করলেও কিন্তু মানুষের উপকারই করে চলেছে এই পাতা। সহজে পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন রোগের সহজ সমাধান হতে পারে এই পাতা।
তবে থানকুনি পাতা সেবনে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন: তন্দ্রাভাব, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, ত্বকের সমস্যা প্রভৃতি। যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন অবশ্যই। তাই আসুন থানকুনি পাতা উদ্ভিদের প্রতি যত্নশীল হই এবং নিজেদের পাশাপাশি পরিবেশের উপকার করি।
# স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায় # অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়? দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা