কথা কম বলার উপায়! কেনো কথা কম বলবেন? কথা কম বলার উপকারিতা!
বাকশক্তি আল্লাহর দেওয়া অন্যতম বড় একটি নেয়ামত। এই নেয়ামতরে কদর করে কথা বলতে হবে জেনে বুঝে হিসাব। আপনার মুখ আছে বলেই সব সময় সব কথা বলা যাবে না। কারণ প্রতিটি মানুষের কথা-বার্তা এবং কাজ-কর্ম দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা দ্বারা লিপিবদ্ধ করা হয়। হোক সেটা ভালো কিংবা খারাপ। তাতে কোনো গুনাহ থাকুন বা না থাকুক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
’মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার সঙ্গেই রয়েছে।’ (সূরা কাফ, আয়াত:১৮)
তাই কথা বললে সবসময় উত্তম ও কল্যাণকর কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। যদি উত্তম ও কল্যাণকর কথা বলতে না পারেন তাহলে চুপ থাকাটাই ভালো। এটা একটি ইবাদত ও উত্তম কাজ।
কথা কম বলার উপকারিতা
বাকশক্তি মহান আল্লাহর অনন্য একটি নিয়ামত। এটি আল্লাহ প্রদত্ত একটি আমানতও বটে। তাই তার যেনো অপব্যবহার কখনো হয় সে ব্যাপারে আমাদের সকলের সতর্ক থাকা আবশ্যক। স্বল্পভাষী বা কথা কম বলা মানুষের উত্তম গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম। কথা বললে অনেক রকম বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। পক্ষান্তরে যারা বেশি কথা বলে তারা বিভিন্ন বিপদে পড়ে। চুপ থাকার মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ এবং পরকালীন মুক্তি পাওয়া যায়। চুপ থাকাটা হলো পরিশ্রমহীন এক উত্তম ইবাদত। কথা কম বলার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ
চুপ থাকাটা একটি নফল ইবাদত। দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের কথা ভেবে ইসলামে মানুষকে চুপ থাকার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। তাছাড়া অনেক মানুষ আছেন যারা সব সময় অহেতুক ও অনর্থক কথাবার্তা শুনতে পছন্দ করে না। এতে করে তাদের কষ্ট হয়। বেশি কথা ও অনর্থক কথাবার্তা বলার মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেদেরই ক্ষতিসাধন করি না বরং অন্যকেও কষ্ট দেই। এ ব্যাপারেও আমাদের সচেতন থাকা উচিত। তাই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কথা ভেবে চুপ থাকা উচিত।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
কিছুটা সময় চুপ করে থাকলে মানসিক স্থিরতা ফিরে আসে এবং স্ট্রেস কমতে শুরু করে। ফলে সাধারণভাবেই রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। আর রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় হয়ে গেলে হার্টের ক্ষতিসাধন হওয়ার আশঙ্কা খুবই কমে যায়। সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বাঁচতে চাইলে কমপক্ষে ২/৩ মিনিট একেবারে চুপ থাকার চেষ্টা করুন। তাই হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চুপ থাকার গুরুত্ব অপরিসীম।
মানসিক চাপ কমায়
যখন দেখবেন আপনার মানসিক চাপ বাড়ছে ঠিক তখনই একটা নি:শব্দ জায়গায় চলে যান। সেখানে কিছুক্ষণ বসে বড় বড় শ্বাস নিন। এটা করলে অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার মানসিক চাপ দূর হবে। অতিরিক্ত শব্দ মস্তিষ্ককে বিচলিত করে যার প্রভাব পুরো শরীরের উপর পড়ে। অপরদিকে নি:শব্দ মস্তিষ্ককে শান্তি দেয়, যা আমাদের টেনশন দূর করার ক্ষেত্রে ভালো উপায়।
সম্পর্কে উন্নতি করতে
ভালোবাসার মানুষ তার প্রিয়জনকে কিছু বলতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে এক সঙ্গে কথা না বলে চুপ করে শুনলে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। আগে আপনি তার কথাগুলো পুরোটা মন দিয়ে শোনা প্রয়োজন এবং পরে কথা বলার প্রয়োজন হলে সেটা তাকে বুঝিয়ে বলা উচিত। বর্তমানে খোলাখুলি আলোচনা করতে গিয়ে ব্যবহৃত কোনো কোনো কথাকে ধরেই নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তাই সম্পর্কের মধ্যে আলোচনা চলাকালীন বিতর্কের সম্ভাবনা ঘটলে তর্ক করার চেয়ে চুপ থাকা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে একজন চুপ থাকলে সম্পর্ক গাঢ় হয়। এতে করে সম্পর্কে উন্নতি ঘটবে।
ঘুমের সমস্যা দূর করে
নীরবতা ঘুমের সাইকেল স্বাভাবিক করে। ফলে অনিদ্রা দূর হয়। মানুষের অনিদ্রার কারণ অতিরিক্ত চাপ। শরীর ও মনের উপর যে চাপ জমতে থাকে তাতে মানুষের ব্রেইন উদ্দীপ্ত ও উদগ্রীব হয়ে পড়ে। আর এতেই অনেকের অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। তাই যদি দিনে কয়েক মিনিট মনস্তাত্ত্বিক ব্যায়াম করা যায় তাহলে অনিদ্রা, অবসাদ এবং ক্লান্তি দূর হবে। এর ফলে শরীর ও মন দুই তরতাজা এবং ফ্রেশ হয়ে উঠবে।
মনোসংযোগ বাড়ায়
যেকোনো কাজে মনোসংযোগ বাড়াতে কয়েক মিনিট চুপ থাকাকে বা নি:শব্দতাকে সঙ্গী করুন। যোগব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি কয়েক মিনিট চুপ থাকার অনুশীলন করতে পারেন এতে করে যেমন আপনার মনোসংযোগ বাড়বে ঠিক তেমনি বাড়বে আপনার কর্মক্ষমতা। যত চুপ থাকবেন আপনি ততই নি:শব্দে থাকবেন আর তত মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়বে। আর এমনটা হলে বাড়বে মনোসংযোগ।
শেষ কথা
মন্দ কথা কিংবা অনর্থক কথা বলার চেয়ে চুপ থাকাই বেশি নিরাপদ। সালাহ ইবনে সাদ (রা:) বর্ণিত একটি হাদিস এসেছে, ‘আল্লাহ রাসূল (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু অর্থাৎ জিহব্বা এবং দুই রানের মাঝের বস্তু অর্থাৎ লজ্জাস্থান এর জামানত আমাকে দেবে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার।
আমাদের সামাজিক জীবন বিশ্লেষণ করলেও প্রতীয়মান হয় যে, কম কথা বলা বা অনর্থক কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকাটা আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ সাধনে সহায়ক হবে। তাই আমাদের উচিত অনর্থক কথা বলার স্থলে চুপ করে থাকার নীতি অবলম্বন করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কম কথা বলার ও অহেতুক কাজকর্ম পরিত্যাগ করার মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
# কান্না করা কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকার না ক্ষতিকর? কান্নারও রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা! # কীভাবে সুন্দর করে কথা বলব? সুন্দর করে কথা বলার উপায়
[…] কথা কম বলার উপায়! কেনো কথা কম বলবেন? কথা… # কান্না করা কি স্বাস্থ্যের জন্য […]