নারীর পর্দা। পর্দা নারীর অহংকার। কিভাবে পর্দা করতে হয়?
পর্দা ইসলামী শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। এর আরবি শব্দ হচ্ছে ‘হিজাব’। আর হিজাব এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে আবরণ,পর্দা,(Covered)। পর্দার বিধান নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে। পর্দানশীন রমণী আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে সমাজের মধ্যে মর্যাদার আসনে অবস্থান করেন। সর্বোপরি বলা যায় যে, পর্দা বিধান পালনের মাধ্যমেই নারী মর্যাদাবান হয়। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিল করে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছেন।
পর্দা হল নারীর অলংকার, অহংকার, নারীর সতীত্বের প্রতীক। পর্দাকে যে যত বেশি আঁকড়ে ধরবে তার তত উচ্চতায় স্থান হবে। পর্দানশীল মহিলাকে সকলেই ভালোবাসেন। কেননা পর্দা নারীকে মানুষের কাছে প্রিয় করে তোলে। প্রিয় করে আল্লাহ ও তার রাসূল সা. এর কাছে। হিজাব হল নারীর সম্মানের প্রতীক। পর্দা তথা হিজাব পড়লে নারী থাকে চির সুরক্ষিত।
পর্দা কি?
পর্দার আরবি শব্দ হচ্ছে ‘হিজাব’। “পর্দা” শব্দটি একটি আরবি শব্দ, যা বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাশ্তো, পার্সি, তুরকি, উইগুর, উইজাব, বসনীয়, সোমালি, মালায়, ইন্ডোনেশিয়ান এবং বিভিন্ন অন্যান্য ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটির অনেকগুলি অর্থ আছে, একটি মূল অর্থ হলো “অবর্তন” বা “পর্দা“। বিশেষভাবে ইসলামিক সম্প্রদায়ে, পর্দা হলো একটি স্ত্রীর মুখ, মুখোমুখি, হাত, এবং পা আদি এলাকাগুলি আচ্ছাদিত করার জন্য ব্যবহৃত একটি পরিধান। এটি ধর্মীয় ভিত্তিতে একটি শ্রৃঙ্গার বা আচরণ রয়েছে এবং স্ত্রীদের মধ্যে আত্ম–ইজ্জত এবং সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখার লক্ষ্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিতে পর্দা
ইসলামে, “পর্দা” বা “হিজাব” হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মুসলিম মহিলাদের পরিহারে করা হয়ে থাকে। এটি ইসলামিক ধর্মে নারীদের একটি আদর্শ আচরণ এবং সমাজের সাথে সম্পর্কের একটি পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পর্দার উদ্দেশ্য হলো মহিলাদের আত্ম-ইজ্জত, সৃষ্টি এবং সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখা।
আল্লাহ বলেন: হে নবী! মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন নিজেদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে এবং তাদের গোপনাঙ্গকে (অশ্লীল কাজ থেকে) হেফাজত করে। আর তারা যেন যা আপনাআপনি প্রকাশ হয়ে যায় তা ব্যতিত নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ঘোমটা বুকের উপর টেনে নেয় এবং নিজেদের সৌন্দর্যকে নিজ স্বামী,পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসী, জৈবিক কামনামুক্ত পুরুষ, মহিলাদের গোপনাংগ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো সামনে প্রকাশ না করে। তারা যেন নিজেদের গোপণ সাজ-সজ্জ্বা প্রকাশের জন্য জোরে পদচারনা না করে। হে মুমিনেরা! তোমরা আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আস যাতে সফলকাম হতে পার।(সুরা নুর:৩১)
ইসলামে পর্দা বা হিজাবের উপাদান হলো–
হিজাব (ওভারহেড কভারিং): ইসলামিক শাস্ত্রে মহিলাদেরকে তাদের মুখ, মুখোমুখি, হাত, এবং পা আদি এলাকাগুলি আচ্ছাদিত করতে হয়, যা হিজাব বা নায়িব বলা হয়। হিজাব একটি শ্রৃঙ্গার হতে পারে এবং সামাজিক ও ধার্মিক মর্যাদার জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।
একাধিকভাবে একটি স্ত্রীর আবাসিক জীবন এবং অধিকার সুরক্ষিত থাকা: ইসলামে, স্ত্রীদেরকে তাদের গৃহস্থানে একটি সুরক্ষিত এবং সুখী জীবন বিচার করা হয়। এটি একটি পরিবারের মাধ্যমে হতে পারে এবং তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা সংরক্ষণ করতে সাহায্য করতে পারে।
একাধিকভাবে আইনী ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক: ইসলামে সম্পর্ক এবং বিবাহের জন্য আইনী সমর্থন দেওয়া হয়, তবে এটি মর্যাদাপূর্ণ এবং আল্লাহর অনুমতির মধ্যে হতে হবে। স্ত্রীদেরকে তাদের অবস্থানে একটি সুস্থ এবং ভাল বাস দেওয়া হবে এবং পরিবার কেন্দ্রিত একটি পদক্ষেপ হতে হবে।
ইসলামে পর্দার প্রতি পুরোপুরি অনুসরণ সমর্থন দেওয়া হয় না, এবং বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং সংস্কৃতির মধ্যে বৈচিত্র্য থাকতে পারে। কিছু সম্প্রদায়ে হিজাব এবং পর্দার আচরণ একটি বৃহত্তর ধর্মীয় ও সমাজিক পর্ণতা বজায় রাখা হয়।
হিজাব কখন ফরজ হয়?
কোন বিষয় কারো উপর হঠাৎ চাপিয়ে দিলে তা পালন করা মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। কিন্তু,পর্যায়ক্রমে চাপিয়ে দিলে আর সেটাকে কষ্টকর মনে হয় না। সেজন্যই ইসলাম বেশ কিছু বিধি বিধানকে পর্যায়ক্রমে ফরজ বা আবশ্যক করে দিয়েছে। মানুষের সমস্যা ও কষ্টের কথা চিন্তা করেই একবারে তা ফরজ করে দেয়নি। তন্মধ্যে হিজাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে হিজাবের প্রথম আয়াত পঞ্চম হিজরীতে খন্দকের যুদ্ধের সময় নাযিল হয়েছে। একবারে হিজাবকে ফরজ করা হয়নি। বরং, ধাপে ধাপে তা ফরজ হয়েছে। প্রথমে মানুষকে হিজাবের অভ্যাস করানোর জন্য সুরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াত নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“হে আমার নবী! আপনার স্ত্রী,কন্যা ও মুসলমান মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন তাদের চাদরের অংশবিশেষ নিজেদের উপর টেনে নেয়।“ (আহযাব: ৫৯)
এর পর ধাপে ধাপে তা ফরজ হয়। চুড়ান্তভাবে সুরা নুরের আয়াত দ্বারাই ফরজ হয়। আল্লাহ বলেন–
“হে নবী! মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন নিজেদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে এবং তাদের গোপনাঙ্গকে (অশ্লীল কাজ থেকে) হেফাজত করে। আর তারা যেন যা আপনাআপনি প্রকাশ হয়ে যায় তা ব্যতিত নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ঘোমটা বুকের উপর টেনে নেয় এবং নিজেদের সৌন্দর্যকে নিজ স্বামী,পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসী, জৈবিক কামনামুক্ত পুরুষ, মহিলাদের গোপনাংগ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো সামনে প্রকাশ না করে। তারা যেন নিজেদের গোপণ সাজ-সজ্জ্বা প্রকাশের জন্য জোরে পদচারনা না করে। হে মুমিনেরা! তোমরা আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আস যাতে সফলকাম হতে পার”।(সুরা নুর:৩১)
পর্দাহীনতার কতিপয় অনিষ্টতা
ফিৎনা ও অনাচারে পতিত হওয়া
নারী মুখমন্ডল খোলা রেখে বেপর্দা হলে আপনা আপনি ফিৎনা ও অনাচারে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়। কারণ, মুখমন্ডল খোলা রেখে চলতে হলে নারীকে তার মুখমন্ডলে এমন কিছু বস্তু ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হয় যাতে মুখমন্ডল লাবণ্যময় সুদৃশ্য ও দৃষ্টি আকর্ষণকারী হয়। আর এটি হচ্ছে অনিষ্ট, অনাচার ও ফাসাদ সৃষ্টি অন্যতম কারণ।
লজ্জাশীলতা বিলীন হয়ে যাওয়া
পর্দাহীনতার ন্যায় অসৎ আচরণের কারণে নারীর অন্তর থেকে ক্রমে ক্রমে লজ্জা–শরম বিলুপ্ত হয়ে যায়, যা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত এবং নারী প্রকৃতির অন্যতম ভূষণ। তাইতো এক সময় নারীকে লজ্জাশীলতার প্রতীক বলা হত। যেমন বলা হত, অমুক তো গৃহকোনে অবস্থানরত কুমারী রমণীর চাইতেও অধিক লাজুক। নারীর জন্য লজ্জাহীনতা কেবলমাত্র দ্বীন ও ঈমান বিধ্বংসীই নয় বরং আল্লাহ তা’আলা যে প্রকৃতির উপর তাকে সৃষ্টি করেছেন সেই প্রকৃতির বিরোধিতা বা স্বভাব দ্রোহীতাও বটে।
পুরুষদের অপ্রীতিকর বিষয়ে জড়িয়ে যাওয়া
বেপর্দা নারীর কারণে পুরুষদের জন্য ফিৎনা ও অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশেষত যদি সেই নারী সুন্দরী ও তাদের সাথে ক্রিড়া কৌতুকে অভ্যস্থ হয়। এরূপ অশোভন আচরণ বেপর্দা নারীর সাথেই বেশি সংঘটিত হয়েছে। যেমন প্রবাদ রয়েছে–
”আঁখি মিলন এরপর সালাম অনন্তর কালাম। অতএব অঙ্গীকার, সাক্ষাৎ, সঙ্গম শেষ পরিণাম।”
বস্তুত, মানুষের চিরশত্রু শয়তান, মানব দেহে রক্তের ন্যায় শিরা–উপশিরায় চলাচল করে। নারী–পুরুষের পারস্পারিক হাসি–ঠাট্টা ও কথা–বার্তার মাধ্যমে পুরুষ নারীর প্রতি কিংবা নারী পুরুষের প্রতি আসক্ত হওয়ার কারণে কতইনা অমঙ্গল সাধিত হয়েছে যা থেকে মুক্ত হওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তা থেকে হেফাজত করুন।
নারী–পুরুষের অবাধ মেলা–মেশা
নারী যখন অনুধাবন করে যে, সেও পুরুষের মত চেহারা খোলা রেখে স্বাধীনভাবে চলতে পারে। তখন সে পুরুষের সাথে ঘেষাঘেষি করে চলাফেরা করতে লজ্জাবোধ করে না। আর এ ধরনের লজ্জাবিহীন ঘেষাঘেষি ও মেলামেশাই হচ্ছে ফিৎনা, ফাসাদ, অনাচার, ব্যাভিচারের সবচেয়ে বড় কারণ।
একদা মানব জাতির অনন্য নৈতিক মুয়াল্লিম রাসূলুল্লাহ (সা🙂 মসজিদ থেকে বের হয়ে রাস্তায় মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথে মিলে মিশে চলতে দেখে মহিলা সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বক্তব্য পেশ করেন–
”তোমরা পেছনে সরে যাও, রাস্তার মধ্যাংশে চলার অধিকার তোমাদের নেই। তোমরা রাস্তার কিনারায় চলাচল করবে।”
রাসূলুল্লাহ (সা🙂 এর এই ঘোষণার পর মহিলাগণ রাস্তার পার্শ্ব দিয়ে এমনভাবে চলাফেরা করতেন অনেক সময় তাদের পরিহিত চাদর পাশ্ববর্তী দেয়ালের সাথে লেগে যেত।
পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তৎকালীন মহিলারা চাদর পরিধান করা ব্যতীত বের হত এবং মহিলাদের হাত ও মুখমন্ডল পুরুষের দৃষ্টিগোচর হত। সে যুগে মহিলাদের জন্যে হাত ও মুখমন্ডল খোলা রাখা জায়েয হওয়ার কারণে পুরুষদের জন্যে মহিলার হাত ও মুখমন্ডলের প্রতি দৃষ্টিপাত করা বৈধ ছিল।
শেষ কথা
নবী করীম (সাঃ) অন্যত্র ইরশাদ করেন,মেয়েরা যখন বালিগা হয়ে যায়,তখন তাদের শরীরের কোন অংশ দেখা বা দেখানো জায়েয নেই। অনেক কাপড় পরিধানকারী (পাতলা কাপড়ের কারণে) কিয়ামতের দিন উলঙ্গ সাব্যস্থ হবে। (মুসলিম)
রাসূলে পাক(সাঃ) ইরশাদ করেন,যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে এবং রমজানের রোযা রাখবে,স্বীয় গুপ্তস্থানকে হেফাজত করবে আর স্বামীর আনুগত্য করবে,এমন নারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে,যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা হয় সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।( তিরমিযী)
উপরোক্ত আয়াতে কারিমা এবং হাদিসে পাকের মাধ্যমে এ কথাই প্রতিয়মান হয় যে,পর্দা একটি ফরজ বিধান,এ বিধান লঙ্ঘন করলে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ আমাদেরকে খাছ পর্দা করার তাওফীক দান করুন। সকলকে সৎ পথে চলার এবং অসৎ পথকে বর্জন করার হিম্মত দিন। (আমিন)
# নামাজ না পড়ার শাস্তি। নামাজের গুরুত্ব এবং ফযীলত # জাহান্নামের শাস্তি কেমন হবে? জাহান্নামের কাহিনী