সখি ভালোবাসা কারে কয়? Bengali Romance Love Story

সখি ভালোবাসা কারে কয়? Bengali Romance Love Story

 

মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব কিন্তু তার আবেগের জন্যেই। আর আবেগের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিষয়টিই হচ্ছে “ভালোবাসা”। এই ভালোবাসার ব্যাপারটাও বড্ড অদ্ভুত। এর নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা হয় না, আবার না আছে কোনো সীমা। প্রত্যেকটা মানুষের ভালোবাসার ধরন ভিন্ন। বহিঃপ্রকাশের ধরনটাও আলাদা। কেউ কেউ ভালোবাসায় উন্মাতাল হয়ে ওঠে। কেউবা নিজের আলাদা সত্তাকে অনুভব করে। আর যে কাউকেই ভালোবাসা যায়। সে হতে পারে মা কিংবা বাবা, ভাই কিংবা বোন, বন্ধু, স্বজন অথবা বিশেষ কেউ। তবে একেকজনের জন্যে ভালোবাসাটাও একেকরকমই হয়। চাইলেই কেউ অন্যের স্হান নিতে পারে না।

ভালোবাসার যারে বলে

এটা এক উত্তরহীন প্রশ্ন। এক পরিচিত প্রেমিকের মুখে সেদিন শুনলাম তার আক্ষেপ ভালোবাসার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো। সে গত তিন বছর ধরে ভালোবাসার আবেগে আবদ্ধ হয়ে আছে। এক প্রেমিকের সাথে দিন নেই রাত নেই তাকে নিয়েই তার ভাবনা। তার প্রশ্ন, কেন যে এ সম্পর্কে জড়াতে গেলাম? নাহ! এই জীবনটা একেবারেই উলট-পালট হয়ে গেল। তাকে জবাব দিলাম, পৃথিবীর সব প্রেমিকই এ উপলব্ধির জন্যই ভালোবাসে।

আর যখন সে ভালোবাসায় জড়িয়ে যায়, তখন সে আর ওখান থেকে বের হতে পারে না, হারিয়ে যায় সে অন্য কোনো জগতে। আসলে পৃথিবীর সব প্রেমিকই অন্যকে উপদেশ দেয়, কখনো কাউকে ভালোবাসতে যেওনা, আমি যে কি ভুল করেছি!সে ভুল যেনো আর কেউ না করে। জবাবে উপদেশ প্রাপ্ত বন্ধু বলে, আমিও আমার প্রেমিকের এক বন্ধুকে এ উপদেশ দিয়েছি। ব্যাপারটা অনেকটাই সেই বিখ্যাত কৌতুকের মতো। মৃত্যুপথযাত্রী পিতা মৃত্যুশয্যায় ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছেন, বাবা কোনদিন বিয়ে করবি না। জবাবে ছেলে বলছে, জ্বি বাবা, আমিও আমার ছেলেকে এ উপদেশ দিয়ে যাব।

আবার কেউ কেউ বলে থাকেন বিয়ে হচ্ছে পাবলিক টয়লেটের মতো, যে ভেতরে আছে সে বের হবার জন্য ছটফট করে। আর যে বাইরে আছে সে ভেতরে যাওয়ার জন্য ছটফট করে এই হচ্ছে ভালোবাসা বা বিয়ে। ভালোবাসা এক চিরকালীন আক্ষেপের নাম। যে পেয়েছে সে ভাবে এটা না পেলেও কি যায় আসে। আার যে পায়নি সে ভাবে আহা! কি হল এ জীবনে? বিবর্ণ মরুভুমি, ভালোবাসাহীন মৃত বালুচর। তারপরও এ কুহেলিকার পেছনে মানুষের কি অন্তহীন যাত্রা।

রাজপ্রাসাদের বাসিন্দা থেকে শুরু করে রাস্তার মানুষেরও এক অমোঘ আকর্ষণ। একই অনুভূতি। তোমার জন্য জীবন দিতে পারি। হতে পারি সর্বস্বত্যাগী। কিছুই চাইনা, শুধু তোমাকে চাই। সারা পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও তোমাকে চাই। এই এক অনুভবের কাছে পৃথিবীর বাকি সব অনুভূতি তুচ্ছ। এই তো সেদিনও জাপানের রাজকুমারী তার ভবিষ্যত রাজপদ ত্যাগ করলেন এক সাধারণ যুবকের টানে। এখন তো রাজ-পরিবার নামমাত্র। কিন্তু যখন রাজাই ছিলেন একটি দেশের ভাগ্যবিধাতা, সর্বেসর্বা তখনকার ইতিহাসও তো এই ভালোবাসারই জয়গানে ভরা।

আমরা কি ব্রিটিশ সম্রাট অস্টম এডওয়ার্ড এর কথা জানি না? ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজা অষ্টম এড্ওয়ার্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাধারণ নারী ওয়ালিস সিম্পসনের অসম প্রেম কাঁপিয়ে দিয়েছিল প্রায় ১২০০ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ রাজপরিবারের ভিত। ৪০ বছর বয়সী অবিবাহিত রাজা এডওয়ার্ড ছিলেন বিশ্বের বহু নারীর কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় পুরুষ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া নারী ওয়ালিস ছিলেন দুই বারের তালাকপ্রাপ্ত। তারপরেও ভালোবাসার জন্য রাজপদ ত্যাগ করে দেশান্তরী হলেন।

এ রকম হাজারো ঘটনা-দুর্ঘটনায় ভরপুর ভালোবাসার ইতিহাস। ভালোবাসার জন্য প্রাণদান তো এক নৈমিত্তিক ঘটনা। তোমাকে পাই নি, কি হবে এ জীবন রেখে। যেন পৃথিবীতে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভালোবাসার অনুসন্ধান। সেটাই যখন পাওয়া গেল না তখন আর এ জীবনের মূল্য কি? ভালোবাসা নিয়ে এই রকম আলোচনা আরো শত পৃষ্ঠা ধরে চলতে পারে। তাতেও ভালোবাসার অমোঘ রহস্যভেদ সম্ভব নয়। আসলেই কি তাই? সত্যিই কি সম্ভব নয় ভালোবাসার রহস্যভেদ?

আমরা কি কখনোই জানতে পারব না কেন আমরা এ রকম? কেন আমাদের মনের মধ্যে আবেগের এ অলঙ্ঘ্য আনাগোনা? তাহলে কি অজানাই থেকে যাবে ভালোবাসার রহস্য? আসলে তা নয়। ভালোবাসা অজানা নয়। অন্তত পুরোপুরি অজানা নয়। এখন ভালোবাসার অনেক কিছুই জানি আমরা। জানি, কেন আমরা হাজারো চেহারার ভিড়ে কেবল একটি চেহারায় নিজের সকল আকাঙ্ক্ষার প্লাবন বইয়ে দেই।

শত শত মানুষের ভিড়ে কেন কেবল একজনকে আমাদের ভালো লাগে, কাছে পেতে ইচ্ছে করে। এক গাদা বন্ধুর মধ্যে একই সাথে কিভাবে কেউ কেউ কেবল ফ্রেন্ড। আর শুধু একজনই হয় মনের মানুষ বা ভালোবাসার মানুষ হয়। অনেকগুলো ভালো-লাগার মানুষের মধ্য থেকে কেন সারা জীবন কেবল একজনকে নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হই। আমরা বিয়ে নামক এক সামাজিক প্রথার মাধ্যমে। এসব কিছুর এখন বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা আমাদের হাতে আছে।

শেষ কথা

সুতরাং পুরোপুরি অজানা নয় ভালোসা। আসলে এটা মহান সৃষ্টিকর্তার এক অশেষ কৃপার ফসল। এখানে রয়েছে এক রহস্যের আঁধার। যার কারণে মানুষ ভালোবাসে সংসার ধর্ম পালন করে জীবন কাটিয়ে পাড়ি জমায় পরপারের অনন্ত যাত্রায়।

ভালোবাসার বাগানে সম্পর্কগুলো হলো এক একটি জীবন্ত গাছ আর সেই বাগানের মালী হিসেবে নিজেকে বসিয়ে দিয়ে গাছগুলোর পরিচর্যা করলেই ভালোবাসা সুগন্ধ ছড়াতে থাকবে আপনার চারপাশে। তাই ভালোবাসার যত্ন নিতে হয়। গাছে পানি না দিলে যেমন গাছটি মরে যায়, ভালোবাসার যত্ন না নিলে ভালোবাসাও মরে যায়!

# আপন মানুষ চেনা বড় দায়! কিভাবে মানুষ চেনা যায়? # প্রিয় মানুষকে না পাওয়ার কিছু কথা। ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার কষ্ট

Related posts

Leave a Comment