কলা খেলে কি হয়? কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা যেমন পুষ্টিকর তেমনই সুস্বাদু। কাঁচাকলা আর পাকাকলা এই দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অনেকে মনে করেন কলাতে ক্যালোরি বেশি হওয়ায় তা ডায়েটের জন্য ভালো না। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তবে কলার রকম ভেদে কাঁচা থেকে পাকার মধ্যে বদলে যায় তার গুণাগুণ। শুনতে কিছুটা অদ্ভুদ হলেও দেহের এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যা রোধে ঔষুধের থেকেও কলা অনেক কার্যকরী। সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ফল নারীর ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধান করে এবং দেহে শক্তি জোগায়। কলায় থাকা প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিভিন্ন রোগে থেকে দেহকে রক্ষা করে থাকে।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কলা হলো মিনারেল, ভিটামিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ। এছাড়াও কলায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। কলা পটাশিয়ামের ভালো উৎস যা সোডিয়ামের নেতিবাচক প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হিসেবে কাজ করে। একটি মাঝারি সাইজের কলায় প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। আর পটাশিয়াম হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত কলা খাওয়া জরুরি। নিচে কলার কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
কলা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
ওজন নিয়ন্ত্রণে কলা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কলা শুধুমাত্র ক্যালোরি কম বা ফ্যাট-ফ্রি তাই নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যার ফলে পরিপাকতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যকর বিপাক ও নিয়ন্ত্রিত কলা খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ম্যারি রিটজের মতে, ”অন্যান্য ফলের তুলনায় কলাতে চিনি ও ক্যালরির পরিমাণ বেশি বলে খ্যাতি রয়েছে। তবে এতে পর্যাপ্ত আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা ওজন কমাতে সহায়ক।”
কলা হজমে সহায়ক
কলা উচ্চ কার্বোহাইড্রেইট সম্পন্ন যা হজম করা সহজ। পরিপাকতন্ত্রে গোলোযোগ দেখা দিলে কাঁচকলা খেলে উপকার পাওয়া যায়। কাঁচকলার উপাদানসমূহ হজমে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে পাকা কলা হজমে সহায়তা করে। কারণে এতে কাঁচা কলার তুলনায় কম পরিমাণে শ্বেতসার থাকে। তাই কলার রং যত বাদামি হবে হজমে তত বেশি সহায়তা করবে।
কলা ত্বকের উন্নতিতে কাজ করে
কলায় উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বককে আর্দ্র ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। কলা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের একটি ভাল উৎস যা ফ্রি র্যাডিকেলসগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে ত্বকের বয়স হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং ত্বকের রং হাল্কা করতে সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ এবং দ্যা ক্যান্ডিডা বইয়ের লেখক লিসা রিচার্ড ইটদিস ডটকম য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “একটি মাঝারি আকারের কলাতে দৈনিক চাহিদার ১৩ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা খাবারের আকারের তুলনায় যথেষ্ট।” তার মতে, ম্যাঙ্গানিজ গ্রহণ করা ত্বক উন্নত করতে সাহায্য করে। ম্যাঙ্গানিজ কোলাজেন তৈরির গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা তারুণ্য ধরে রাখে এবং উন্মুক্ত রেডিক্যাল থেকে হওয়া ত্বকের ক্ষতি ও বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। পুষ্টিবিদদের মতে, কলা খেলে হজমশক্তি ভাল হয়। তখন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও কমে। আর কলাতে ফাইবার থাকে বলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
কলা রক্তস্বল্পতা দূর করে
প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এবং যেসব রোগীর রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগ রয়েছে তাদের জন্য এটি বেশ উপাদেয়।
কলা লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে
কলা পটাসিয়ামের ভালো উৎস যা সোডিয়ামের নেতিবাচক প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হিসেবে কাজ করে। নিউ ইয়র্কয়ের ইন্সটিটিউট অফ কালিনারি এডুকেশন এর পুষ্টি বিভাগের পরিচালক সেলিন বিচম্যান ব্যাখ্যা করেছেন যে, ”কলার পটাসিয়ামের মাত্রা সামগ্রিক খাদ্যতালিকাগত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি অন্য খাবারের সঙ্গে লবণ বেশি খাওয়া হয়ে থাকে।”
বিভিন্ন রোগে কলা
কলা বিভিন্ন রোগে বেশ উপকারী। যদি কোনো রোগীর ডায়েটে ১০০-১৫০ গ্রাম ফল থাকে তাহলে তার অর্ধেক ৫০-৭৫ গ্রাম কলা খাওয়া যাবে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য পাকা কলা খাওয়া উচিত। প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এবং যেসব রোগীর রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগ রয়েছে তাদের জন্য এটি বেশ উপকারী। সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য কলা খাওয়া খুবই উপকারী।
কেননা এটি সকালবেলার দুর্ববলতা কাটাতে কাজ করে এবং রক্তের শর্করার সামঞ্জস্য বজায় রাখে। যাদের ওজন অতিরিক্ত কম তাদেরও কলা খেতে বলা হয়। কলায় ক্যালরির পরিমাণ অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেকটা বেশি। পেট খারাপ হলে কাঁচকলা খেতে পারেন। ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় কলা খেলে ভালো হজম হয়। কলার উচ্চ পটাশিয়াম মাত্রার কারণে শরীরের পটাশিয়ামের অভাব থাকলে বা হাইপোক্যালেমিয়ায় ভুগলে নিয়মিত কলা খেতে হবে।
FAQS-
# খালি পেটে কলা খেলে কি হয়?
=>কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে খালি পেটে কলা খেতে পারে। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা সুস্থ থাকতে কলার স্মুদি খাওয়ার পরামর্শ দেন। পেট পরিষ্কার না হলে খালি পেটে কলা খেতে পারেন।
# কলা খেলে কি ওজন বাড়ে?
=>কলা শুধুমাত্র ক্যালোরি কম বা ফ্যাট-ফ্রি তাই নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। ফলে পরিপাকতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল হিসেবে বিবেচিত হয়। স্বাস্থ্যকর বিপাক ও নিয়ন্ত্রিত কলা খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
# রাতে কলা খেলে কি হয়?
=>কলায় আছে প্রচুর পটাশিয়াম। কাজেই ক্লান্তিকর দিনের পর গভীর ঘুমের জন্য রাতে কলা খাওয়া উপকারী হতে পারে। আবার পেশিকে আরাম দেয় পটাশিয়াম। এছাড়া বিকেলের দিকে একটি-দুইটি কলা খেলে রাতে ভালো ঘুমের প্রস্তুতি নেয় দেহ।
# কলা কখন খাওয়া উচিত?
=>সকাল বা বিকেলের নাস্তায় কলা খাওয়ার সেরা সময়। আয়ুর্বেদ অনুসারে কলা দুধ বা দুধ ভিত্তিক খাবারের সঙ্গে কলা খাওয়া বিষের মতো। এই দুটো খাবার একসঙ্গে পেটে গেলে পাচনতন্ত্র দুর্বল হয়ে যায়। ফলে বদহজম এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
# কলা খাওয়ার উপকারিতা কি?
=>কলা পটাশিয়ামের ভালো উৎস যা সোডিয়ামের নেতিবাচক প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হিসেবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় যোগ করলে হৃদ রোগ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে থাকে।
শেষ কথা
দেহের শক্তি জোগাতে ও সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে কলা একটি অত্যন্ত উপকারী ফল। দিনের শেষে একটি কলা দূর করে দিতে পারে সারাদিনের ক্লান্তি। অত্যন্ত সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় হাতের কাছে পাওয়া সবচেয়ে সহজ সমাধান হল এই ফল। কলা আমাদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি খিদে মেটাতেও সাহায্য করবে। পাশাপাশি কাঁচা কলাও একটি সহজলভ্য সবজি হিসেবে খাবার তালিকায় উপরের দিকে রাখতে পারেন। এতে সহজেই মিটবে আপনার পুষ্টির চাহিদা।
# লেবুর উপকারিতা কি? লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা # অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়? দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা