কোরবানি কি? কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

কোরবানি কি? কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

 

কোরবানি শব্দটি ‘কুরবুন’ মূল ধাতু থেকে নির্গত। অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। শরিয়তের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি পাওয়ার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহ পাকের নামে জবাই করাই হলো কোরবানি। কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান নর-নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব। এটি মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আদম আ. থেকে সকল যুগে কুরবানী ছিল। তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না। শরীআতে মুহাম্মাদীর কুরবানী মিল্লাতে ইবরাহীমীর সুন্নত। সেখান থেকেই এসেছে এই কুরবানী। এটি শাআইরে ইসলাম তথা ইসলামের প্রতীকি বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এর মাধ্যমে শাআইরে ইসলামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এছাড়া গরীব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়।

কোরবানির গুরুত্ব

কোরবানি বা উদ্‌হিয়া মুসলমানদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার, যা আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য ও ভক্তির নিদর্শন। এটি ঈদুল আযহা উপলক্ষে পালন করা হয় এবং নবী ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) এর কাহিনীকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

কোরবানির গুরুত্বের প্রধান দিকগুলো:

  1. আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ: কোরবানি করার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি তাঁদের পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে। এটি আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
  2. তাওহীদের প্রতিফলন: কোরবানি করার মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের বিশ্বাসের মৌলিক স্তম্ভ, অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করে। এটি আল্লাহর প্রতি তাঁদের একনিষ্ঠতা ও নির্ভরশীলতার প্রতীক।
  3. সুন্নাহ পালন: কোরবানি করা নবী ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নাহ পালন করা হয়, যিনি আল্লাহর নির্দেশে তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করতে চেয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁর আনুগত্যের পরীক্ষা গ্রহণ করে একটি পশু কোরবানি করতে নির্দেশ দেন। এই ঘটনা মুসলমানদের আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি ও আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।
  4. সমাজে সহমর্মিতা বৃদ্ধি: কোরবানির মাংস তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়—একটি ভাগ নিজের পরিবারের জন্য, একটি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য, এবং একটি দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য। এটি সমাজে সমবেদনা ও সহমর্মিতার বোধ বৃদ্ধি করে এবং দরিদ্রদের সহযোগিতা করার একটি উপায়।
  5. আত্মশুদ্ধি তাকওয়া বৃদ্ধি: কোরবানি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় যার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের আত্মশুদ্ধি করতে পারে। এটি তাদের মধ্যে তাকওয়া (খোদাভীতি) বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর প্রতি আরও নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
  6. ঐক্য সাম্য: কোরবানি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য ও সাম্যের বোধ জাগ্রত করে। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই কোরবানির মাধ্যমে একই ধর্মীয় আচার পালন করে, যা তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য সৃষ্টিতে সহায়ক।

হাদিস থেকে উল্লেখযোগ্য বাণী:

  • নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “কুরবানির দিন মানবসন্তান আল্লাহর নিকট কোন কাজই কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় নয়। এবং কুরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম এবং খুর সহকারে আসবে। কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা আনন্দের সাথে কুরবানি কর।” (তিরমিজি)
  • হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, “মানুষের সন্তান কুরবানির দিন আল্লাহর নিকট কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন আমল করতে পারে না। কুরবানির পশু কিয়ামতের দিন নিজ শিং, পশম এবং খুরসহ হাজির হবে এবং কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অতএব, কুরবানির মাধ্যমে নিজেদের আত্মাকে পবিত্র কর।” (ইবনে মাজাহ)

এই কারণে কোরবানি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মুসলমানদের জীবনে এর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

কোরবানির ফজিলত

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি ও আনুগত্যের প্রতীক। কোরবানির ফজিলত অনেক এবং এটি মুসলমানদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে বিশেষ পুরস্কার ও মর্যাদা এনে দেয়।

কোরবানির ফজিলতের প্রধান দিকগুলো:

  1. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: কোরবানি করার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। এটি একটি বিশেষ ইবাদত যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
  2. গুনাহ মাফ: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কোরবানির পশুর প্রথম রক্তবিন্দু জমিনে পড়ার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা কোরবানি দাতার গুনাহ মাফ করেন। এটি মুসলমানদের পাপ মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
  3. সওয়াবের প্রতিফল: কোরবানির পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে কোরবানি দাতার জন্য সওয়াব লেখা হয়। এটি কিয়ামতের দিন তাঁর আমলনামা ভারী করবে। প্রতিটি পশুর রক্তবিন্দুর বিনিময়ে আল্লাহ বিশেষ পুরস্কার দেন।
  4. তাকওয়া আত্মশুদ্ধি: কোরবানি আল্লাহর ভয় (তাকওয়া) এবং আত্মশুদ্ধির প্রতিফলন। এটি মুসলিমদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাসকে দৃঢ় করে এবং তাঁদের আত্মাকে পবিত্র করে।
  5. দরিদ্রদের সাহায্য: কোরবানির মাংসের একটি অংশ দরিদ্র ও অভাবীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এটি সমাজে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার বোধ সৃষ্টি করে এবং দরিদ্রদের সাহায্য করে।
  6. ঐতিহাসিক ধর্মীয় মহিমা: কোরবানি মুসলিমদের নবী ইব্রাহিম (আ.) এবং তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) এর কাহিনী স্মরণ করিয়ে দেয়, যা আল্লাহর প্রতি আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের একটি মহৎ উদাহরণ। এটি মুসলমানদের বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতাকে সমৃদ্ধ করে।

হাদিস থেকে উল্লেখযোগ্য বাণী:

  • আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মানুষের সন্তান কুরবানির দিন আল্লাহর নিকট কোন কাজই কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় নয়। এবং কুরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম এবং খুর সহকারে আসবে। কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা আনন্দের সাথে কুরবানি কর।” (তিরমিজি)
  • হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী করিম (সা.) বলেন, “মানুষের সন্তান কুরবানির দিন আল্লাহর নিকট কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন আমল করতে পারে না। কুরবানির পশু কিয়ামতের দিন নিজ শিং, পশম এবং খুরসহ হাজির হবে এবং কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অতএব, কুরবানির মাধ্যমে নিজেদের আত্মাকে পবিত্র কর।” (ইবনে মাজাহ)

কোরবানির ফজিলত মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত মহত্বপূর্ণ। এটি তাঁদের আধ্যাত্মিক উন্নতি, সামাজিক সহমর্মিতা, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

কোরবানি সম্পর্কে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উল্লেখযোগ্য কিছু বাণী

কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর কিছু উল্লেখযোগ্য বাণী নিম্নরূপ:

  1. আল্লাহর নিকট প্রিয়তম আমল:
    • আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “মানুষের সন্তান কুরবানির দিন আল্লাহর নিকট কোন কাজই কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় নয়। এবং কুরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম এবং খুর সহকারে আসবে। কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা আনন্দের সাথে কুরবানি কর।” (তিরমিজি)
  1. কোরবানির পুরস্কার মর্যাদা:
    • হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন: “মানুষের সন্তান কুরবানির দিন আল্লাহর নিকট কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন আমল করতে পারে না। কুরবানির পশু কিয়ামতের দিন নিজ শিং, পশম এবং খুরসহ হাজির হবে এবং কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অতএব, কুরবানির মাধ্যমে নিজেদের আত্মাকে পবিত্র কর।” (ইবনে মাজাহ)
  1. গুনাহ মাফের সুযোগ:
    • নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “কোরবানির পশুর প্রথম রক্তবিন্দু জমিনে পড়ার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা কোরবানি দাতার গুনাহ মাফ করেন।” (তিরমিজি)
  1. কোরবানির পশুর প্রতিদান:
    • জায়দ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন: “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), এই কোরবানি কী?” তিনি বললেন: “তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নাহ।” তারা বললেন: “তাহলে আমাদের জন্য এর মধ্যে কী আছে?” তিনি বললেন: “প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি।” (ইবনে মাজাহ)
  1. ঈদুল আযহার দিনের ফজিলত:
    • নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “কোরবানির দিনকে আল্লাহ খুবই পছন্দ করেন এবং এই দিনে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ হল কোরবানির পশু জবাই করা। কোরবানির রক্তের বিনিময়ে অনেক সওয়াব অর্জিত হয়।” (আবু দাউদ)
  1. কোরবানির মাধ্যমে তাকওয়ার প্রকাশ:
    • নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না কোরবানির মাংস, না রক্ত; বরং তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ: ৩৭)

এই বাণীগুলো কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। মুসলিমরা এই বাণীগুলো অনুসরণ করে কোরবানি করে থাকেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই ইবাদত পালন করেন।

কোরবানির মূল লক্ষ্য ও তাৎপর্য

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলিমদের আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশ করে। কোরবানির মূল লক্ষ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ভক্তি প্রদর্শন

কোরবানির মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য ও ভক্তি প্রদর্শন করা। নবী ইব্রাহিম (আ.) এর কাহিনী আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকা উচিত। এটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্যের এক মহান উদাহরণ।

২. তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি

কোরবানি আল্লাহর ভয় (তাকওয়া) এবং আত্মশুদ্ধির প্রতিফলন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, “তাদের মাংস আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, এবং তাদের রক্তও না; কিন্তু তোমাদের তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছায়।” (সূরা হজ্ব: ৩৭)। এটি মুসলিমদের মধ্যে খোদাভীতি ও আত্মশুদ্ধির বোধ জাগ্রত করে।

৩. সমাজে সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ

কোরবানি সামাজিক সমবেদনা ও দায়িত্ববোধের এক মহান উদাহরণ। কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়—একটি ভাগ নিজের পরিবারের জন্য, একটি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য, এবং একটি ভাগ দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য। এটি সমাজে সমবেদনা ও সহমর্মিতার বোধ জাগ্রত করে এবং দরিদ্রদের সহযোগিতা করে।

৪. ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্মরণিকা

কোরবানি মুসলিমদের নবী ইব্রাহিম (আ.) এবং তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) এর কাহিনী স্মরণ করিয়ে দেয়, যা আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস ও আনুগত্যের এক মহান উদাহরণ। এটি আমাদেরকে শেখায় যে, সত্যিকারের মুমিন হতে হলে আল্লাহর পথে সবকিছু ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

৫. ব্যক্তিগত আত্মত্যাগ ও পরীক্ষা

কোরবানি আমাদেরকে ব্যক্তিগত আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। এটি আমাদের জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষায় আল্লাহর উপর ভরসা ও বিশ্বাস স্থাপন করার এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। কোরবানি আমাদেরকে শেখায় যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

৬. ঈমানের দৃঢ়তা ও সহিষ্ণুতা

কোরবানি আমাদের ঈমানের দৃঢ়তা ও সহিষ্ণুতার প্রতীক। এটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় হতে হবে এবং আমরা যেন তাঁর আদেশ পালন করতে কখনো পিছপা না হই।

FAQs-

প্রশ্ন ১: কোরবানি কী?

উত্তর: কোরবানি হল ঈদুল আযহার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু জবাই করার একটি ধর্মীয় আচার, যা নবী ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) এর কাহিনী স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্রশ্ন ২: কোরবানি কখন করা হয়?

উত্তর: কোরবানি ঈদুল আযহার প্রথম দিন এবং পরবর্তী দুই দিনে করা হয়, যা জিলহজ মাসের ১০, ১১, এবং ১২ তারিখে পড়ে।

প্রশ্ন ৩: কোরবানির জন্য কোন পশু নির্বাচন করা যায়?

উত্তর: কোরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, এবং উট নির্বাচন করা যায়। পশু হতে হবে সুস্থ, পূর্ণবয়স্ক এবং নির্দিষ্ট বয়সের (ছাগল ও ভেড়া এক বছর, গরু দুই বছর, উট পাঁচ বছর)।

প্রশ্ন ৪: কোরবানির মাংস কীভাবে বণ্টন করা উচিত?

উত্তর: কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা উচিত: একটি ভাগ নিজের পরিবারের জন্য, একটি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য, এবং একটি দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য।

প্রশ্ন ৫: কোরবানির মাংস কীভাবে বণ্টন করা উচিত?

উত্তর: যেসব মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক, বুদ্ধিমান, স্বাধীন, এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব।

প্রশ্ন ৬: কোরবানির সময় কী দোয়া পড়তে হয়?

উত্তর: কোরবানি করার সময় বলতে হয়: “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার”। কোরবানির আগে এই দোয়া পড়া যায়: “ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফান মুসলিমান ওয়া মা আন মিনাল মুশরিকীন। ইনَّা সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মুহইয়া ওয়া মমাতি লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন। লা শারীকালাহু, ওয়া বিখযা আমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।”

প্রশ্ন ৭: কোরবানি না করার কোনো শাস্তি আছে কি?

উত্তর: কোরবানি করা ওয়াজিব, অর্থাৎ এটি করা অত্যাবশ্যক। যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব, তারা যদি এটি না করেন, তবে এটি একটি গুরুতর পাপ।

প্রশ্ন ৮: কোরবানির পশুর বয়স কত হতে হবে?

উত্তর: ছাগল ও ভেড়া এক বছর, গরু দুই বছর, এবং উট পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে।

প্রশ্ন ৯: কোরবানির পশু অসুস্থ হলে কি করা যাবে?

উত্তর: না, কোরবানির পশু হতে হবে সুস্থ এবং ত্রুটিমুক্ত। চোখে অন্ধ, পা ভাঙ্গা, খুবই রোগা বা ত্রুটিপূর্ণ পশু কোরবানি করা যাবে না।

প্রশ্ন ১০: কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা কি আবশ্যক?

উত্তর: না, এটি আবশ্যক নয়। তবে কোরবানি দাতা যদি পারেন এবং শারীরিকভাবে সক্ষম হন, তবে নিজ হাতে জবাই করা উত্তম। অন্যথায় একজন দক্ষ ব্যক্তি দিয়ে জবাই করানো যেতে পারে।

প্রশ্ন ১১: মহিলা কি কোরবানি দিতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, যদি মহিলার নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব এবং তিনি কোরবানি দিতে পারেন।

প্রশ্ন ১২: কোরবানির পশুর চামড়া কী করা উচিত?

উত্তর: কোরবানির পশুর চামড়া দান করা উত্তম। নিজে ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু বিক্রি করা যাবে না। চামড়ার অর্থও দান করা উচিত।

শেষ কথা

কোরবানি মুসলিমদের জীবনে একটি বিশেষ ইবাদত, যা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, তাকওয়া, সামাজিক দায়িত্ববোধ, এবং আত্মশুদ্ধির প্রতীক। এটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের মুসলিম হতে হলে আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কোরবানির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে নৈকট্য অর্জন করতে পারি এবং সমাজের দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারি।

# স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা। স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত? # পবিত্র মাহে রমজান। মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

Related posts

Leave a Comment