কিভাবে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারি? পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়!
পিঠ ও কোমরের ব্যথা এখন খুব বেশি পরিচিত একটি সমস্যা। যেকোনো বয়সের মানুষের এই ধরণের ব্যথা সমস্যা হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় একটানা বসে দীর্ঘ সময় কাজ করেন তাদেরই এই সমস্যা বেশি হয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের সঠিক উপায় জানা না থাকলে ভুগতে হয় দীর্ঘ সময় ধরে। কখনো কখনো ব্যথা পুরোনো হয়ে সহজে ভালো হতে চায় না। এই সকল ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে জীবনযাত্রা এবং হাঁটা-চলা ও বসার অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরী। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক কাজের চাপ সামলে নিয়ে ঘাড়, কোমর এবং পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায়।
পিঠ ও কোমরের ব্যথার কারণ
বিভিন্ন কারণে পিঠ ও কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে একটানা কাজ করার ফলে ব্যথা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ওজনের ফলেও ব্যথা হয়ে থাকে। এজন্য ওজন কমিয়ে ফেলা এবং কিছু হালকা ব্যায়াম করলে উপকার পাবেন। আবার গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ নারীই পিঠ ও কোমরের ব্যথায় ভুগে থাকেন। গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজন বাড়ে এবং ভারী হয়। তাই পেশি ও সন্ধির ওপর চাপ বাড়ে। ফলে পিঠ ও কোমরে ব্যথা হয়।
যেভাবে ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন
ঘাড় ও কোমরের ব্যথার উৎস নানা ধরণের হতে পারে। মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী জীবদের মধ্যে মূল পার্থক্য হল মানুষ দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে এবং চলাফেরা করতে পারে। তাই এর মূল্যও দিতে হয় আমাদের। আমাদের পৃথিবীতে যে কোনো মেশিন বা যন্ত্র চলতে চলতে এক সময় ক্ষয় হওয়া শুরু করে। ঠিক তেমনি মেশিনের মতোই মানুষের দেহ বছরের পর বছর ভার বহন করতে করতে ক্ষয়ীভূত হয়।
এই ধরণের ব্যথায় শরীরচর্চা এবং ব্যায়াম খুব ভালো কাজ করে থাকে। একটানা চেয়ারে বসে থাকার ফলে মেরুদন্ডের হাড়ে ব্যথা হয়। বসে কাজ করার সময় মেরুদন্ডের এবং পেশিগুলোর যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তার অনেকটাই হারিয়ে ফেলি আমরা। পৃথিবীতে ৯০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো না কোনো সময়ে পিঠ ও কোমরের ব্যথায় ভুগে থাকেন। উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হলে ৯০ শতাংশ রোগী দুই মাসে ভালো হয়ে যায়।
খাবারের দিকে খেয়াল রাখুন
বর্তমান সময়ে দেখা যায় অনেকে ওজন কমানোর জন্য খাদ্যতালিকা থেকে ভাত, দুধ, ডিম ইত্যাদি খাবার বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা এটি বেশি করে থাকেন। ভাতের পরিবর্তে তারা ফাস্ট ফুডের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে। পিঠ ও কোমরের ব্যথা দূর করার জন্য খাবার বাছাইয়েও হতে হবে সচেতন। যেসব খাবার আপনার ব্যথা দূরে রাখবে সেসব খাবার পাতে তুলে নিন। সাপ্লিমেন্টের বদলে তাজা খাবার খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। সঠিক খাবার খাওয়ার কারণে আপনার ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে। আর আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা মানে অনেকরকম অসুখ থেকে আপনি অনেকটা দূরে থাকবেন।
সেঁক দিন
ব্যথা হলে সেঁক দিন নিশ্চয়ই? ব্যথার ধরন বুঝে দিতে পারেন ঠান্ডা-গরম সেঁক। আপনার যদি পিঠ ও কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে তবে পেশীকে আরাম দেওয়ার জন্য ঠান্ডা ও গরম সেঁক দিতে পারেন। ঠান্ডা সেঁকের জন্য তোয়ালে বা মোটা গামছা দিয়ে বরফ সুন্দর করে মুড়ে ব্যথার স্থানে লাগাতে পারেন। গরম সেঁকের জন্য একইভাবে হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এতে করে আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। ফলে দূর হবে আপনার পিঠ ও কোমরে ব্যথা।
ধূমপান ত্যাগ করুন
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যিনি ধূমপান করেন তার মেরুদন্ডের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ৪ গুণ বেশি। সিগারেট এবং অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের নিকোটিন মেরুদন্ডের হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে। তাই ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করুন। মনে রাখবেন ধূমপান ও মদ্যপান হাড়ের অনেক বেশি ক্ষয় বৃদ্ধি করে থাকে।
ওজন বজায় রাখুন
যদি কারও ওজন বেশি হয় তাহলে অবশ্যই তার পিঠে ব্যথা হবে। তাই পিঠে ও কোমরে ব্যথা এড়াতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই প্রয়োজন। যাতে নীচের পিঠ থেকে চাপ কমানো যায়। আপনার যদি ওজন বেশি হয়ে থাকে আর তা যদি কমানোর জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে আপনি একজন ভালো ফিটনেস ট্রেইনারের পরামর্শ নিতে পারে। ফলে আপনি তার কাছ থেকে ভালো পরামর্শ পাবেন।
ব্যায়াম করুন
পিঠ ও কোমরের ব্যথা কমানোর অন্যতম কার্যকর প্রতিকার হলো যোগব্যায়াম করা। আসলে যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা শুধু ব্যায়াম নয়, যোগ কথার আসল অর্থ হল চেতনা। ইয়োগা করলে শরীরকে বাঁকাজোকা করে বসে থাকতে হয়। এক্ষেত্রে ক্যাট পেজের মতো যোগা খুবই কার্যকরী। তাছাড়াও বিগ টো পোজ, ডলফিন পোজ, লস্ট এবং ঊর্ধ্বমুখী পিঠ ও কোমরের যন্ত্রণা নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
প্রতিদিন ম্যাসাজ করুন
পিঠ ও কোমরের ব্যাথায় ম্যাসাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন সকালে পিঠ ও কোমরে সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করলে যন্ত্রণা অনেকটাই কমে যাবে। তবে মালিশ করার পর অবশ্যই সামান্য গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। রসুন দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। কিছুটা রসুনের পেস্ট নিয়ে কোমরে মালিশ করতে পারেন। মালিশ করার পর সামান্য গরম জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। এটি নিয়মিত করা হলে আপনার পিঠ ও কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
FAQS-
# কোমরে ও পিঠে ব্যথা হলে কি করবেন?
=>এ ধরনের ব্যথায় শরীরচর্চা ও ব্যায়াম খুব ভালো কাজ করে। এছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ খেতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
# পিঠ ও কোমর ব্যথা প্রতিরোধে করণীয় কি?
=>স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সঠিক দেহভঙ্গি ও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলার মাধ্যমে সহজেই পিঠে ব্যথা প্রতিরোধ করা যায়।
# পিঠ ও কোমর ব্যথা কেন হয়?
=>লিগামেন্ট হলো সুতার মতো টিস্যু যা বিভিন্ন হাড় ও জয়েন্টের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরের পেশি ও লিগামেন্টে হঠাৎ করে টান অথবা চাপ খেলে কোমর ব্যথা হয়। বেশিরভাগ কোমরব্যথা সাধারণত মাংসপেশি, মেরুদন্ডের হাড় এবং সন্ধি ও স্নায়ুসম্পর্কিত একটি নির্দিষ্ট অংশজুড়ে হয়।
শেষ কথা
ব্যথা কোনো রোগ নয়, বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। তাই কোনো ব্যথাকেই অবহেলা করবেন না। ব্যথা হলে কোনো প্রকার ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না। ব্যথার ওষুধ সেবন করে ব্যথা দমিয়ে রাখলে তা পরবর্তীতে তীব্র আকার ধারণ করে আপনাকে বড় বেশি বিপদে ফেলে দিতে পারে। তাই সময় থাকতেই নিয়মিত শারীরচর্চা ও খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হাড় এবং পেশির যত্ন নিন। তাহলে বয়স বয়স বাড়লে ক্ষয় প্রতিরোধ ও ব্যথা রোধ করা সম্ভব হবে অনেকাংশেই।
[ বি:দ্র: চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোনো প্রকার প্রকার ওষুধ সেবন করবেন না। ]