লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত

লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত

 

শবে কদর (ফার্সি) বা লাইলাতুল কদর (আরবি) এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। ফারসি ভাষায় শাব ও আরবি ভাষায় লাইলাতুল অর্থ হলো রাত্রি বা রজন। আর কদর শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এছাড়া এর অন্য অর্থ হলো ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এই রাতে ইসলাম ধর্মের ধর্মপ্রচারক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুননির্ধারণ করা হয়।

তাই মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত করা হয়। কোরআনের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ তায়ালা এই রাত্রিকে অনন্য এক মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

লাইলাতুল কদর

লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। পবিত্র কুরআনুল কারিম নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই রাতকে হাজারের মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উত্তম ও মহাসম্মানিত রাত হিসেবে আমাদের জন্য দান করেছেন। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক বিজোড় রাত হলো ভাগ্য নির্ধারণ বা লাইলাতুল কদরের রাত। মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও মর্যাদা ঘোষণা করে বলেন-

”নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ রাতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদরের রাত কি? মহিমান্বিত কদরের রাত হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম) তাদের প্রভুর অনুমতি ও নির্দেশ সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন। সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ফজর পর্যন্ত।” (সূরা-কদর)

লাইলাতুল কদরের ফজিলত

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালা এই রাতকে সকল রাতের শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। বরকতময় রজনী হলো লাইলাতুল কদর। মুসলমানদের কাছে শবে কদর এমন মহিমান্বিত বরকতময় এবং বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই জন্য যে এই রজনীতে মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিল হওয়ার কারণে অন্যসব মাসের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলত ও বরকতময় হয়েছে।

আল্লাহ কোরআনে ঘোষণা করেছেন,” নিশ্চয়ই আমি তা অর্থাৎ, কোরআনকে অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে।” আল্লাহ তায়ালা এ রাতের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ রাতে মহান আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মাদিগণকে হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগি ও আমলের সমান সওয়াব দান করে। কোরআনুল কারিমের অন্য স্থানে এই রাতটিকে রবকতময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে এক বরকতময় রাতে নাযিল করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন-

”এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম”।

সুতরাং বিভিন্ন মর্যাদা, ফজিলত ও বরকতের কারণে লাইলাতুল কদর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত্রি। তাই প্রত্যেকের উচিত এই রাতে সামর্থ্য অনুযায়ী ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

লাইলাতুল কদরের মর্যাদা

লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। পবিত্র কোরআনুল কারিম নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উত্তম ও মহা সম্মানিত রাত হিসেবে আমাদের জন্য দান করেছেন। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক বিজোড় রাত হলো ভাগ্য নির্ধারণ রাত। লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ (সা:) এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশ দিন ইতেকাফ করেছেন। রাসুল বলেন-

আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে রমজানের প্রথম দশ দিন ইতেকাফ করলাম। এরপর ইতেকাফ করলাম রমজানের মধ্যবর্তী দশদিনে। অত:পর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ দশ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতেকাফ পছন্দ করবে সে যেনো ইতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তার সাথে ইতেকাফ যাপন করলো। (মুসলিম: ১১৬৭)

শবে কদরের আমল

কিছু আমল ও দোয়ার মাধ্যমে এই রাত অতিবাহিত করা জরুরি। লাইলাতুল কদরে যে আমলগুলো পালন করতে হয় তা হলো-

নফল নামাজ পড়া, মসজিদে ঢুকেই ২ রাকাআত (দুখুলিল মসজিদ) নামাজ পড়া, দুই দুই রাকাআত করে (মাগরিবের পর ৬ রাকাআত) আউওয়াবিনের নামাজ পড়া, রাতে তারাবিহ নামাজ পড়া, শেষ রাতে সাহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, সালাতুত তাসবিহ পড়া।

এছাড়াও কদরের রাতে বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করা, সুরা কদর, সুরা ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রাহমান, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা কুরাইশ পড়া। এই রাতে বেশি বেশি দরূদ শরিফ পড়া, বেশি বেশি ইসতেগফার পাঠ করা, বেশি বেশি জিকির করা। সর্বশেষ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও মৃতদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা এবং কবর জেয়ারত করা।

শবে কদরের দোয়া

হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমি যদি জানতে পারি যে কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে আমি তখন কোন দোয়াটি পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফুওয়া ফাফু আন্নি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

FAQS-

# লাইলাতুল কদর কি?

=>লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক বিজোড় রাত হলো ভাগ্য নির্ধারণ রাত বা লাইলাতুল কদরের রাত।

# কিভাবে লাইলাতুল কদর লাভ করবো?

=>লাইলাতুল কদর লাভ করার সর্বোত্তম উপায় হলো রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করা। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত-

তিনি বলেন, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করবে সে দুটি ওমরা ও দুটি কবুল হজ আদায় করার সাওয়াব পাবে।

# লাইলাতুল কদর রাত কখন?

=>প্রতি বছর পবিত্র রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে শবে কদর পালন করা হয়। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাত্রি কাটায়।

শেষ কথা

লাইলাতুল কদরের রাত প্রতিটি মুসলিমের জন্য খুবই মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত এই রাতে যথাসাধ্য ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার কাছ থেকে অতীতের সকল গুনাহর ক্ষমা চেয়ে পরিপূর্ণ তওবা করা। আমাদের উচিত ২৭ শে রমজানকে কদর মনে না করে রাসুল (সা:) এর সুন্নাহ অনুযায়ী রমজানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতে কদর তালাশ করা। সেই সাথে এই রাত উপলক্ষে সকল প্রকার বিদআতী আমল পরিহার করা।

শুধু এই রাত বা রমজান মাস নয় আমাদের উচিত হবে জীবনের বাকি জিন্দেগী ঈমান আমল পালন করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারি সেই ওয়াদা করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তার দেওয়া জীবন-বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুক। (আমিন)

# জাহান্নামের শাস্তি কেমন হবে? জাহান্নামের কাহিনী # নামাজ না পড়ার শাস্তি। নামাজের গুরুত্ব এবং ফযীলত

Related posts

Leave a Comment