লেবুর উপকারিতা কি? লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
লেবু আমাদের দেশে পরিচিত একটি ফল। ভিটামিন-সি এর ভালো একটি উৎস হচ্ছে লেবু। লেবু পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কম আছে। লেবু দিয়ে ভাত খাওয়া সহ আরও বিভিন্ন কাছে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লেবুর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে অনেক। লেবু যেমন সহজলভ্য তেমনি এর গুণের শেষ নেই। লেবুর সুগন্ধ যেমন মন ভালো করে দেয় তেমনি এর পুষ্টি গুণ দেহকে সজীব করে তোলে। তাই আসুন জেনে নেই লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
লেবুর উপকারিতা
ভিটামিন-সি, ফাইবার এবং তার সাথে সাথে আরও অনেক ভিটামিন, মিনারেলে সমৃদ্ধ এই ফলটি হলো লেবু। যা আমরা রোজ ডায়িটে আমরা যদি জায়গা করে দেই তাহলে আমাদের হার্ট ও স্বাস্থ্যের যেমন উপকার করে ঠিক তেমনি ওয়েটলসও খুব ভালো করে হয়। এর সাথে সাথে হজমের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ওজন কমানোর জন্য লেবু খুবই উপকারী। লেবুর পুষ্টিগুণ রোগ প্রতিরোধে এবং সুস্থতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড দাবদাহে এক গ্লাস লেবুর শরবত পান করলে তৃষ্ণা মেটার সাথে সাথে যেন মনটাও জুড়িয়ে যায়। এছাড়াও লেবুর আরও বিশেষ কিছু উপকারী গুণ রয়েছে যেগুলো আপনি হয়তো জানেন না। তাই যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজ সেই সব উপকারী গুণগুলো সম্পর্কে জেনে নেই-
চুলের জন্য উপকারী
চুলের মান বাড়াতে লেবুর ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। এই ছোট ফলের জাদুতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। লেবু মাথার ত্বক পরিষ্কার করে। মাথার ত্বকে ধুলো ময়লা আটকে থাকে তখন লেবুর জল মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে যা কোলাজেন উৎপাদন সাহায্য করে এবং চুলের বৃদ্ধি করে। আবার লেবুতে প্রাকৃতিক ছত্রাক বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকিকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।
ত্বক ভালো রাখে
ত্বক ভালো রাখতে প্রসাধনীর পেছনে টাকা খরচ না করে বরং নিয়মিত লেবুর পানি পান করলে পাওয়া যাবে সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা রক্তকে পরিষ্কার রাখে অর্থাৎ রক্ত থেকে খারাপ ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলোকে বাইরে বের করে দেয়। যার ফলে ত্বক হয় সুন্দর ও উজ্জ্বল। ত্বক যদি আর্দ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয় তাহলে বলিরেখার প্রবণতা দেখা দেয়। সকালে এক গ্লাস লেবু পানি পান করলে বলিরেখার এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত লেবু পানি পান করলে লক্ষ্য করবেন আপনার ত্বক থেকে কালো বলিরেখা গুলো ধীরে ধরে দূর হয়ে যাচ্ছে ও তার পাশাপাশি ত্বকের শুষ্কতা কমে গিয়ে ত্বক হয়েছে কোমল ও মসৃন।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
লেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। লেবুর মধ্যে থাকা এই ফাইবার হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লেবুতে বিদ্যমান সা্ইট্রিক অ্যাসিড পিত্তথলি ও লিভার থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করে থাকে। এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে। এছাড়াও কোলেস্টেরলের সমস্যা থেকে ও মুক্তি দেয়।
মুখের গন্ধ হ্রাস
আপনি কি কখনো রসুনের গন্ধ বা অন্য কোনো তীব্র গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে হাতে লেবু ঘষেছেন? পেঁয়াজ বা রসুন জাতীয় কোনো তীব্র গন্ধের খাবার বা অন্য কোনো তীব্র গন্ধের খাবার খেলে মুখ দিয়ে ওই খাবার খেলে মুখ দিয়ে খুবই অস্বস্তিকর গন্ধই বের হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতিতে যদি এক টুকরা লেবু বা লেবু জল পান করা যায় তাহলে ওই খাবার খাওয়ার গন্ধটা আর থাকবে না। তাছাড়া লেবু লালাগ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে থাকে। ফলে মুখগহ্বর শুষ্ক হয় না এবং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। লেবু খাওয়ার ফলে মুখ দিয়ে একটা সুন্দর গন্ধ বের হবে যা আপনাকে খুব সতেজ অনুভব করাতে সাহায্য করবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
উচ্চ রক্তচাপ শব্দটার সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। এই উচ্চ রক্তচাপের কারণে আমাদের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এটাকে কোনো ভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। এই রক্তচাপ বেশিরভাগ তাদেরই দেখা যায় যারা খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম গ্রহণ করে না। লেবুতে উপস্থিত রয়েছে পরিমাণে ভিটাসিন-সি যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। লেবুতে উপস্থিত এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় লেবু রাখা প্রয়োজন।
ওজন কমাতে লেবু
শরীরের ওজন কমাতে লেবু খুবই উপকারী একটি ফল। লেবুতে উপস্থিত রয়েছে পেলিফেনল উপাদান যা ওবিসিটি নামক রোগ থেকে নিরাময় দিতে সক্ষম। লেবুতে উপস্থিত পেলিফেনল শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং ফ্যাট বৃদ্ধির হাত থেকে নিরাময় করতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে লেবু জল ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। লেবু জল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে যা ওজন কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন মধু ও লেবু মেশানো পানি খালি পেটে সকাল বেলা পান করলে ওজন তাড়াতাড়ি কমে যায়।
লেবুর অপকারিতা
এই গরমে শরীরকে একটু আরাম দিতে আমরা অনেকেই লেবু পানি পান করি। আবার আমরা অনেকেই সকালে খালি পেটে গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেয়ে থাকি। লেবু পানির উপকারিতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এছাড়া শরীরকে অত্যাধিক গরম হয়ে গেলে ঠান্ডা লেবুর শরবত শরীরকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে আসতে সাহায্য করে। লেবুর অনেক উপকারিতার পাশাপাশি পার্শ্বপ্রক্রিয়াও রয়েছে। অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেই-
দাঁতের ক্ষতি
গরম পানিতে লেবুর রস যোগ করে ব্যবহার করা খানিকটা ক্ষতিকর। এর কারণ হল লেবু অত্যন্ত অম্লীয় হয়ে থাকে। প্রতিদিন লেবুর জল পান করলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে দাঁতের ক্ষয়ও হতে পারে। লেবুর রসে উপস্থিত অ্যাসিডের কারণে এই সমস্যা ভুগতে হতে হয়। তাই দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিদিন লেবুর পানি পান করা খুব একটা ভালো নয়।
ত্বকে ক্ষতি করে
লেবুতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অম্লীয় উপাদান যা ত্বকের জন্য উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারের ফলে অপকারও দেখা দিতে পারে। লেবুতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রাস্ট উপাদান। যে সকল মানুষ সাইট্রাস্ট ত্বকে ব্যবহার করে রোদে যান তাদের ত্বক রোদে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই রোদে বের হলে কেউ লেবু স্কিনে ব্যবহার করবেন না।
রক্তে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায়
আমরা জানি লেবুতে ভিটামিন-সি থাকে। ভিটামিন-সি রক্তে আয়রনকে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। লেবু পানি অতিরিক্ত পান করলে শরীরে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ বেড়ে যায়। যা রক্তে অধিক পরিমাণ আয়রন সংরক্ষণ করে থাকে। যা আমাদের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
পেট খারাপ
খাবার হজম করতে অনেকেই লেবুর রস পান করে থাকেন। কারণ লেবুতে থাকা অ্যাসিড হজমে সহায়তা করে। কিন্তু আপনি জানেন, অতিরিক্ত অ্যাসিডের কারণেও পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খালি পেটে লেবু খেলে ক্ষতিকর অ্যানজাইম তৈরি করে। তাই সব সময় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে লেবু খাওয়া উচিত।
চুলে লেবুর অপকারিতা
তাজা লেবুর রস আপনার চুলে শুকিয়ে যাবে না বা ক্ষতি করবে না। তবে সূর্যের দীর্ঘক্ষণ এক্সপোজার আপনার চুলের বাইরের আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যাকে কিউটিকল বলা হয়। এই কারণে আপনি আপনার চুলে লেবুর রস লাগানোর পরে রোদে চুল শুকানোর সময় সীমিত করতে হবে। লেবুর রস শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রোদে বসার চেষ্টা করুন তবে এক ঘন্টার বেশি নয়।
FAQS-
# খালি পেটে লেবু খেলে কি হয়?
=>সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু খেলে অ্যাসিড হতে পারে। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড পেপসিনকে ভেঙে ক্ষতিকর এনজাইম তৈরি করে। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না।
# চুলে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা কি?
=>লেবুর সাইট্রিক এসিড ও শক্তিশালী ভিটামিন-সি চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য খুবই উপকারী। তবে চুলের একেকটি সমস্যার সমাধানে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে লেবুর রস ব্যবহার করতে হবে।
# লেবুর উপকারিতা কি কি?
=>লেবুর উপকারিতা অপরিসীম। লেবুর উপকারিতা তো আমরা সবাই জানি। লেবু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক উপকারিতা করে থাকে। লেবুতে রয়েছে ফলিক এসিড। যা আমাদের স্ট্রোকের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লেবুর উপকারিতা এবং অপকারিতা অনেক। লেবুর পানিতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রেট রয়েছে। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে এটি সফলভাবে কিডনিতে পাথরের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। শীতকালে আমাদের শরীরকে ঠান্ডা জনিত রোগ থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন ভিটামিন-সি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যা আমরা খুব সহজেই লেবুতে থেকে পেতে পারি। তাছাড়াও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আমরা এই লেবু থেকে পেয়ে থাকি যা আপনারা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন। আশা করি আমাদের এই লেবুর উপকারিতা এবং অপকারিতা পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন।
# স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার উপায় # কিভাবে এবং কেন খাবেন থানকুনি পাতা? থানকুনি পাতার উপকারিতা!
[…] লেবুর উপকারিতা কি? লেবুর উপকারিতা ও অপ… # অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়? দুধের […]
[…] লেবুর উপকারিতা কি? লেবুর উপকারিতা ও অপ… # স্বাস্থ্যকর খাবার কি? স্বাস্থ্যকর […]