হাশরের ময়দান কোথায় হবে? হাশরের ময়দান

হাশরের ময়দান কোথায় হবে? হাশরের ময়দান

 

“হাশরের ময়দান” ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার ঘটনা, যা কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে। হাশরের ময়দান বা মহাতল ইসলামের আখেরুজ দিনের ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হতে উদয়। এই ঘটনার সাথে জড়িত বিভিন্ন ইসলামী আখ্যান ও তাত্ত্বিক মূলকে বোঝার জন্য কিছু মৌলিক বিষয়গুলি একত্রে নেওয়া হয়েছে-

মৃত্যু ও পুনরুত্থান

হাশরের ময়দানে সকল মানুষের মৃত্যু হবে এবং পুনরুত্থান হবে। এই ঘটনায় মানুষগুলি আল্লাহর সামনে দায়িত্ব নেবে। “মৃত্যু ও পুনরুত্থান” ইসলামে মৌলিক ধারার একটি অংশ। ইসলাম ধর্মে মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরস্কৃত হয়েছে।

মৃত্যু: ইসলামে বিশ্বাস করা হয়েছে যে, মৃত্যু হলো একটি অবস্থা যা কোন মৃত্যুবাদী জীবনী অবস্থানে প্রবর্তিত হয়। আখেরাতে পৌঁছার পর সমাপ্ত হয়ে যাবে মৃত্যু। এই সময়ে মৃত্যু আল্লাহর কাছে ফেরার সময়।

পুনরুত্থান: ইসলামে বিশ্বাস করা হয়েছে যে, মৃত্যুর পর সকল মানুষ পুনরুত্থান হবে। এই পুনরুত্থানে আকার পাবে পূর্বের জীবনে করা কর্মফলের মধ্যে। পুনরুত্থানে সকল মানুষ নিজের কাজ ও কর্মের জন্য দায়িত্ব নেবে। কর্মফল অনুযায়ী জানানো হবে কোন কাজ ভাল, কোন কাজ খারাপ।

এই ধারাগুলি ইসলামের মৌলিক তত্ত্ব এবং আখেরাতের ভবিষ্যদ্বাণি সম্পর্কে বলে। ইসলাম ধর্মে মানবজীবনের উদ্দেশ্য এবং মৃত্যুর পর আখেরাতে জীবনের জন্য সঠিক পথ চেনার মধ্যে বুঝানো হয়েছে।

হাসাব ও বাজহ হিসাব

সবাই নিজের কাজ ও কর্মের জন্য অদ্যতিতে হিসাব-নিকাশ দিতে হবে। সকল কাজের জন্য সঠিক অথবা ভুল, পোষ্টিটিভ অথবা নেগেটিভ ফলাফল দেওয়া হবে। “হাসাব ও বাজহ হিসাব” ইসলামের একটি মৌলিক ধারা, যা আখেরাতে মৃত্যুর পর সকল মুসলিমদের জন্য হিসাব-নিকাশের প্রক্রিয়া বোঝায়। এটি হাদিস ও কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে।

হাসাব (হিসাবাবলন): ইসলামে বিশ্বাস করা হয়েছে যে, আখেরাতে মুসলিমদের আপনি তাদের পূর্ববর্তী জীবনে করা কাজগুলির হিসাব-নিকাশের জন্য প্রস্তুত থাকবেন। মুসলিমদের হাসাবে তাদের সকল কাজ ও কর্মফল দেখানো হবে এবং তাদের কাজের মান ও মূল্য নির্ধারণ হবে। হাসাবের মাধ্যমে মুসলিমদের সকল কাজ ভাল অথবা খারাপ হিসেবে জানা হবে এবং তাদের পূর্ববর্তী কর্মফলের উপরে ভিত্তি করে পূর্বাপেক্ষা শাস্তি বা পুরস্কৃত হবে।

বাজহ (বাজহ হিসাব): ইসলামে বিশ্বাস করা হয়েছে যে, হাসাবের পর মুসলিমদের বাজহ হিসাব দেওয়া হবে। বাজহে মুসলিমদের জীবনের সব প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত থাকতে হবে। মুসলিমদের তাদের হাসাবে দেখা হবে যে, কোন সত্কার্য বা অসত্কার্য তাদের জীবনে কি প্রভাব ফেলেছে। বাজহ হিসাবে মুসলিমদের সামাজিক, আদালতি এবং আল্লাহর সামনে তাদের প্রতি দায়িত্ব প্রস্তুত থাকতে হবে।

হাসাব ও বাজহ হিসাব ইসলামের আখেরাতের দিনে মুসলিমদের জীবনের প্রতি প্রশ্নের জন্য তাদের প্রস্তুতি দেখায়। এই ধারাগুলি মুসলিমদের ধর্মীয় দায়িত্বে উত্তরদাতা হিসেবে বোঝানো হয়েছে।

আমলের ওজন

ইসলামে বিশ্বাস করা হয়েছে যে, হাশরের দিনে মানুষগুলির কাজের মান দেখা হবে এবং সেই কাজের ওজন দেখানো হবে। আমলের মূল্য নির্ধারণ হবে এবং অনুযায়ী সাজানো হবে। “আমলের ওজন” ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যা অনুসারে মুসলিমদের জীবনের সকল কার্যকলাপের মান ও মূল্যায়ন হবে। এই ধারাটি কোরআন এবং হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।

কুরআনের মূল্যায়ন: কোরআনে মুসলিমদের কর্মফলের মান ও মূল্যায়ন করা হবে এবং কর্মফলের ওজন প্রদান করা হবে। ইসলামে বলা হয়েছে যে, একটি ভাল কাজের মান সাতটি গুণ হলে, একটি খারাপ কাজের মান একটি গুণ হবে।

নিজের কর্মের মানান: ইসলামে কোরআন এবং হাদিসে আমলের মূল্য ও মান মানানোর প্রেক্ষিতে প্রধান উদ্দীপন দেওয়া হয়েছে। একজন মুসলিমকে নিজের কাজের মান বা মূল্য অবলম্বন করতে হবে।

ঈমানদার কাজ: ইসলামে কাজের মান এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঈমানদারি একটি গুরুত্বপূর্ণ পারম্য হয়ে থাকে। একজন মুসলিমের কাজ অথবা কর্মফল একে অপরের সাথে মিল খাচ্ছে কিনা, তা তার ঈমানের অস্তিত্ব দেখায়।

ইসলামে আমলের মাধ্যমে ধর্মীয় দায়িত্ব পূর্ণ করার মাধ্যমে মুসলিমদের জীবনের সকল দিকে প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে এবং এটি একটি ইসলামিক সমাজের গুণগত ও নৈতিক বিকাশে ভূমিকা পালন করে।

দান-ছাড়া হিসাব

মানুষগুলির কাজের মান দেখার পর এবং কোন মূল্য বা বাজহ দেওয়ার পর তাদের পুরস্কৃত বা শাস্তি দেওয়া হবে। “দান-ছাড়া হিসাব” ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার অংশ, যা অনুসারে মুসলিমদের পূর্ববর্তী জীবনে করা দান এবং ছাড়ার মূল্য ও মান নির্ধারণ হয়। এই ধারাটি কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।

দান (চারিত্রিক এবং মানবিক দান): ইসলামে দান একটি মূল্যবান কাজ হিসেবে প্রশংসা পায়। মুসলিমদের কর্মফল বা সম্পদ থেকে অংশ নিয়ে অপরের কঠোর পরিস্থিতির মাধ্যমে অন্যদের সাহায্য করা হয়। ইসলামে দানের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে সকালের অদান-প্রদান এবং সান্ত্বনা বাড়াতে সাহায্য করা হয়। কোরআন এবং হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে যে, দানের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার কর্মফল কিভাবে বা তার ধনের একটি অংশ কিভাবে অন্যদের জীবন উন্নত করতে পারে তা বোঝানো হয়।

ছাড়া (করুণা ও সহানুভূতির প্রতি প্রতিবাদ): ইসলামে ছাড়া হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারাও উল্লেখিত হয়েছে। মুসলিমদের প্রতি করুণা এবং সহানুভূতি অনুভব করা হয়। ইসলামে ছাড়া হিসেবে অন্যের কষ্ট ও দুঃখ দূর করার চেষ্টা করা হয় এবং এটি একজন মুসলিমের মধ্যে করুণা এবং সহানুভূতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ছাড়া হিসাবে ইসলামে দুর্বল, দারিদ্র্যবিমুক্ত, অস্বাস্থ্যবিমুক্ত, অসহায় ও জরুরী ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দান-ছাড়া হিসাব ইসলামে নৈতিক ও মানবিক উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এটি ইসলামিক সমাজে সহিত সৎ ও মহান বৈদেশিক প্রথা হিসেবে প্রচলিত আছে।

মানবজাতির বিভাগ

হাশরের দিনে মানবজাতি বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হবে যেমন সৎকর্মীগণ, অপকর্মীগণ, মুমিনগণ, কাফিরগণ, ইত্যাদি। ইসলামে “মানবজাতির বিভাগ” একটি প্রধান ধারা, যা হাশরের দিনে বিশ্বের মানবসমূহকে আল্লাহর সামনে তাদের কর্মফলের মূল্যায়ন এবং তাদের প্রতি শাস্তি অথবা পুরস্কৃতির ভিত্তিতে বিভাগ করতে সাহায্য করতে হয়।

এই বিভাগ কেউই নয় একই মানুষের সকল কাজ এবং কর্মফলের জন্য একে অপরকে বাজহ হিসাব দিতে হবে। ইসলামে বিশ্বজুড়ে মানুষকে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত করা হয়েছে, এবং এটি তাদের কর্মফল এবং আমলের উপরে নির্ভর করে। ইসলামে মানবজাতির বিভাগের প্রধান দিকগুলি হলো-

সৎকর্মীগণ (সত্যবাদী এবং ধর্মবিশেষ): ইসলামে সৎকর্মীগণ হলো তারা যারা আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক ভাল কাজ করে এবং তাদের জীবনে তাদের আমলের উপরে ভরসা করে। এদের কাজের মূল্য ও মূল্যায়ন পজিটিভ হবে এবং এদের জন্য আখেরাতে বেশি শান্তি ও সুখী জীবনের সৃষ্টি হবে।

অপকর্মীগণ (অধর্মবিশেষ এবং মিথ্যা বলক): অপকর্মীগণ হলো তারা যারা অধর্মবিশেষ এবং মিথ্যা বলে। এদের কাজের মূল্য ও মূল্যায়ন নেতিবাচক হবে এবং এদের জন্য আখেরাতে শাস্তি হবে।

মুমিনগণ (ঈমানদার এবং আল্লাহবাদী): মুমিনগণ হলো তারা যারা ঈমানদার এবং আল্লাহবাদী। এদের কাজের মূল্য ও মূল্যায়ন বেশি শ্রেষ্ঠ হবে এবং আখেরাতে জীবন উন্নত করতে সাহায্য করতে হবে।

কাফিরগণ (ঈমানহীন এবং আল্লাহবাদী নয়): কাফিরগণ হলো তারা যারা ঈমানহীন এবং আল্লাহবাদী নয়। এদের কাজের মূল্য ও মূল্যায়ন একটি নেতিবাচক দিকে হবে এবং এদের জন্য আখেরাতে শাস্তি হবে।

এই বিভাগগুলি ইসলামে অনুষ্ঠান ও দিকে ভিত্তি করে, আল্লাহর সামনে হাশরের দিনে প্রতিটি মানুষকে তার কর্মফলের বিশেষ মূল্যায়ন ও সজ্জানো হবে।

হাশর কি?

হাশর আরবি শব্দ, অর্থ সমাবেশ, ভিড়, একত্র হওয়া, জড়ো হওয়া ইত্যাদি। সমাবেশ বা একত্র হওয়ার দিবসের বিভিন্ন নাম আছে। যেমন, ইয়াউমুল হিসাব—হিসাবের দিবস, ইয়াউমুল জাযা—প্রতিদান দিবস, ইয়াওমুল মিয়াদ—প্রতিশ্রুত দিবস, ইয়াওমুল জাময়ে—একত্র হওয়ার দিবস, ইয়াওমুল মাহশার-সমাবেশ দিবস ইত্যাদি। যে মাঠে সমাবেশ ঘটবে, তাকে বলা হয় ময়দানে মাহশার বা সমাবেশের স্থল

হাশরের ময়দান কোথায় হবে?

আখেরী যামানায় ইয়ামানের আদনের গর্ত থেকে আগুনটি বের হয়ে সকল মানুষকে হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নিবে। হাশরের স্থান হবে শাম দেশ। তৎকালে সিরিয়া, ফিলিস্তীন, লেবানন এবং জর্ডান অঞ্চল শাম দেশ হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। এমর্মে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

শেষ কথা

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে হাশরের ময়দানে তাঁর পবিত্রতা ও গুণগান করার মাধ্যমে নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পেতে কুরআন বিধি-বিধান পালন এবং বিশ্ব-নবীর পরিপূর্ণ সুন্নাহর তথা আনুগত্য, অনুসরণ ও তাঁর সুমহান আদর্শের অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন।

# জাহান্নামের শাস্তি কেমন হবে? জাহান্নামের কাহিনী # নারীর পর্দা। পর্দা নারীর অহংকার। কিভাবে পর্দা করতে হয়?

Related posts

Leave a Comment